Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুতায়িত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির বৃত্ত থেকে দেশ বাইরে আসতে পারছে না। প্রতিবছরই বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার প্রতিবেদন মতে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত মোট বরাদ্দের মাত্র ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ বা ৭১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত বছর করোনাকারণে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৮ শতাংশ বা ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। এবার করোনার প্রকোপ কম থাকার পরও বাস্তবায়নে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। অবশ্য করোনাপূর্বকালেও এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি ছিল। আগের কয়েক বছরের বাস্তবায়ন গড় ৩৩ শতাংশের উপরে উঠতে পারেনি। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাস্তবায়ন হার ১ শতাংশও নয়। এবারও দেখা যাচ্ছে, অন্তত ৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এগুলো হলো, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২ দশমিক ৯ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাস্তবায়ন মোটামুটি ভালো। এদের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের হার সবচেয়ে বেশি। বাস্তবায়ন করেছে বরাদ্দের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৩৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ করেছে ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ করেছে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় করেছে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

যথাসময়ে যথাযথভাবে এডিপি বাস্তবায়িত হোক এটাই সঙ্গত প্রত্যাশা। কারণ, তাহলে দেশ যেমন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায় তেমনি জনগণও কাক্সিক্ষত সুবিধা ভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা তিক্ত। কোনো বছরই এডিপি ঠিকমত বাস্তবায়িত হয় না। বছরের শেষ দিকে এসে বাস্তবায়নের ধুম পড়ে যায়। কাজ যাই হোক, খরচ ঠিকই হয়ে যায়। এডিপি বাস্তবায়নের এই ধারা গড়ে উঠেছে একারণে যে, এতে অর্থ লুটপাটের সহজ সুযোগ পায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা ও ঠিকাদাররা। অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের এই সংস্কৃতি চলছে তো চলছেই। উন্নয়ন প্রকল্পে বেশি অর্থ বরাদ্দ, কাজের মান যাচ্ছেতাই, তদারকি ও জবাবদিহির অভাব ইত্যাদি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন, এসব ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তাদের বাস্তবায়ন দক্ষতার অভাব রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে দক্ষ জনবলের। নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়া না হওয়াও এই সঙ্গে যুক্ত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার উন্নয়ন কাজ যথাসময়ে শুরু ও শেষ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সময়মত বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়ের ওপরও তিনি জোর দিয়েছেন। কিন্তু তাতে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার শত শত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পও আছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রায় কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে ও অর্থে শেষ হচ্ছে না। সময় বাড়ানো হচ্ছে, সেই সঙ্গে ব্যয়ও। বৈদেশিক ঋণ ও জনগণের ট্যাক্সের টাকার এই যথেচ্ছ ব্যয় নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন রয়েছে।

এডিপি শতভাগ বাস্তবায়িত হলে সে মোতাবেক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে উন্নয়ন ব্যহত হয় এবং জনগণ তার সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। যেহেতু আমাদের উন্নয়ন আকাক্সক্ষার পরিধি অনেক বড় এবং এক সঙ্গে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সুতরাং প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় আমরা উন্নয়নের একটি ছক অংকন করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। আমরা বিশ্বাস করি, এভাবে ক্রমোন্নতির মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত উন্নয়নলক্ষ্যে উপনীত হতে পারবো। দেশের সমৃদ্ধি ও জনগণের জীবনমানের উন্নতি প্রত্যাশিত স্তরে পৌঁছতে হলে এডিপি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সে বাস্তবায়ন মানসম্পন্ন ও টেকসই হতে হবে। কেন এডিপি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়, অসম্পূর্ণ থাকে কিংবা অনবতমানের হয়, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের যে কোনো সুযোগ রহিত করতে হবে। কর্মকর্তাদের বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়াতে হবে, তাদের সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। চলমান এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুতায়িত করতে হবে। দৈশিক ও বিশ্ব পরিস্থিতির বিবেচনায় বাস্তবায়ন তুলনামূলকভাবে কঠিন হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। করোনা তো আছেই, সেইসঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিসহ আমাদের অর্থনীতিকেও চাপে ফেলবে বলে ইতোমধ্যে আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে। কাজেই, এডিপি বাস্তবায়নে সক্রিয়তা বাড়ানোর সঙ্গে সতর্কতাও বাড়াতে হবে। অপপ্রয়োজনীয় বা অল্প প্রয়োজনীয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্প বাদ দিতে হবে। জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন যথাসময়ে ও নির্ধারিত ব্যয়ে সম্পন্ন করতে হবে। সর্বোতভাবে অপচয় ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে। তত্ত্বাবধান, নজরদারি ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন