পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1722054970](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশৃংখলা ও বিড়ম্বনার অবসান কবে হবে, কেউ বলতে পারে না। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত এই মহাসড়ককে যানজটমুক্ত ও নির্বিঘ্ন যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য চার লেনে উন্নীত করা হয়। তারপরও যানজটের দুর্ভোগ কমেনি। কখনো কখনো কিলোমিটারের পর কিলোমিটার যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে সম্ভাব্য সময় থেকে অনেক বেশি সময় ব্যয় হয়ে যায়। এজন্য যাত্রীদের অপরিসীম কষ্ট ও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মহাসড়কে রয়েছে বৈধ ইউটার্নের পাশাপাশি বহু অবৈধ ইউটার্ন। এসব অবৈধ ইউটার্ন দিয়ে যখন-তখন গাড়ি ঘোরানোর কারণে যানবাহনের গতি যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থেকে যায়। যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো নিয়মাবিধি উপেক্ষা করে মহাসড়কের নানা জায়গায় স্টপেজ বানিয়েছে, যেখানে যান থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানো-নামানো হয়। শুধু তাই নয়, মহাসড়কের বিভিন্ন ইউটার্ন পয়েন্টে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের পার্কিং প্লেস করা হয়েছে। ফলে পদে পদে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যানের গতি শ্লথ হচ্ছে। মহাসড়কে অবৈধ বাস-ট্রাকের টার্মিনাল গড়ে উঠেছে। সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও হাটবাজার। সবমিলে এই মহাসড়কে এমন এক বিশৃংখলা ও বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার কোনো তুলনা নেই। মহাসড়কের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব যাদের তারা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনে যে ব্যর্থ, তাতে সন্দেহ নেই। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যখন এই অবস্থা তখন অন্যান্য মহাসড়কে কী অবস্থা বিরাজ করছে, সহজেই অনুমেয়।
দেশের কোনো মহাসড়কেই শৃংখলা নেই। ট্রাফিক বিধিনিয়মের যথাযথ অনুসরণ নেই। মহাসড়কে যততত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, যেখানে সেখানে ইউটার্ন, দখল করে বাজার ও দোকানপাট বসানো এবং ধীরগতির ত্রিচক্রযানের অবাধ চলাচল ইত্যাদি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট, লেখালেখি যে কত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। মহাসড়কে কম গতির ত্রিচক্রযান, নসিমন-করিমন ও ভটভটির চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। অথচ, এখনো সব মহাসড়কে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন নির্বাধে চলাচল করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, অবৈধ যানবাহনের অধিকাংশের মালিক ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের এক শ্রেণীর নেতাকর্মী। এছাড়া চাঁদাবাজি সূত্রেও তাদের অনেকে এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রুখতে না পারলে নিষিদ্ধ যান চলাচল বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য বিরাজমান বিশৃংখলা এবং দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল বিশেষভাবে দায়ী। যানজটের কারণে সড়ক-মহাসড়কে কত কর্মঘণ্টা বিনষ্ট হয়। পরিবেশের ও অন্যান্য ক্ষতি যে কত হয়, তার হিসাব নেই। আর দুর্ঘটনা তো প্রতিদিনের সাধারণ ঘটনা। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। হাজার হাজার মানুষ আহত বা পঙ্গু হয়। সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর জন্য চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া যান চালনা যেমন দায়ী, তেমনি ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাও দায়ী। ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের স্বল্পতা ও দায়িত্বহীনতা নিয়ে কথা কম হয়নি। তাতে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি।
দেশের বহির্বাণিজ্যের সিংহভাগ সম্পাদিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। আর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে চট্টগ্রামের যাতায়াতের প্রধান উপায় হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। সঙ্গতকারণে এ মহাসড়কে নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করা জরুরি। অথচ, এ মহাসড়কের অব্যবস্থাপনা, বিশৃংখলা, যানজট ও দুর্ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মহাসড়কে যদি যানবাহন চালকরা কোনো নিয়ম না মানে, ইচ্ছমত যানবাহন নামায়, ইউটার্ন করে কিংবা যানবাহন পার্ক করে, তবে যানজট ও দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া কাহাতক সম্ভব? মহাসড়কে সকল প্রকার বাধা ও বিশৃংখলা দূর করা ছাড়া নিরাপদ ও দ্রুত যাতায়াত নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ট্রাফিক ব্যবহার আধুনিকায়ন, নজরদারি বৃদ্ধি এবং আইন বেতোয়াক্কাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের সকল সড়ক-মহাসড়কে শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।