পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের পুরোটাই বর্ষার টানা বৃষ্টিতে অসংখ্য খানা-খন্দে ভরে গেছে। এ পুরো সড়ক জুড়ে কাপের্টিং উঠে গিয়ে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই সেগুলো ভরে যায়। বেহাল এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন গাড়িচালক ও যাত্রীরা।
রাস্তায় খানা-খন্দ থাকায় তীব্র ঝাঁকুনিতে অনেক সময় গাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র ভেঙে যায়। আবার অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই মহাসড়কে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী নিহত হয়। আহত হয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী বাসচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সড়ক তো মহাসড়ক নয়, যেন মহানরক। এতে যাত্রীবাহী বাসসহ সকল ধরণের যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। প্রতিবছর বৃষ্টিতে মহাসড়কে ছোট-বড় গর্ত হয়। এ অবস্থায় একদিকে যানবাহন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে অন্যদিকে যাত্রীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকার পরও হাজার হাজার যাত্রীকে বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে এই মহাসড়ক দিয়ে। সড়ক বিভাগ বলছে, টানা বৃষ্টির ফলে মহাসড়কের কিছু কিছু অংশে এমন খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে তা সংস্কার করা হবে।
জানা গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এ মহাসড়কে যানবাহনের চাপও অত্যাধিক। কিন্তু সে হিসেবে সড়ক দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের তদারকি, নিয়মিত সংস্কার কিংবা মেরামত তেমন চোখে পড়ে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের সময় ধরে নেয়া হয়েছিল, এতে প্রতি বছর গাড়ি চলাচল বাড়বে ৬ শতাংশ হারে। যদিও সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্দেশিকায় সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে যানবাহন চলাচলে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হারে প্রাক্কলনের নির্দেশনা রয়েছে। বাস্তবে দেখা গেল, চালুর পর চার লেনের মহাসড়কটিতে গাড়ির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। এতে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা দিয়েছে রাটিং। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কের ভিত। এতে করে মহাসড়কটি সংস্কারেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগের এক পর্যবেক্ষণ বলছে, চার লেনের মহাসড়কটিতে প্রকৌশল ও নকশাগত ত্রুটির কারণে শুধু স্থায়িত্ব কমছে না, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। মহাসড়কের যেসব অংশে রাটিংয়ের পরিমাণ বেশি, সেখানে ওয়্যারিং কোর্সের পুরুত্ব ৬০ মিলিমিটারের কম পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিংহ ভাগই ছোট বড় গর্তে একাকার হয়ে গেছে। মীরসরাই উপজেলার প্রায় ৩৫ কিলোমিটারসহ ফেনীর অংশেও একই অবস্থা দেখা গেছে। লাগাতার বর্ষণের প্রভাবে মহাসড়কের সোনাপাড়া এলাকায় কয়েকশ ফুট হাঁটু পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মহাসড়কের ফেনীর ধূমঘাট থেকে সীতাকুন্ডের প্রবেশমুখ বড় দারোগারহাট পর্যন্ত পুরো সড়ক জুড়ে ছোট বড় অনেক গর্ত। এইসব গর্ত কোথাও ছোট আবার কোথাও বড় আকার ধারণ করায় ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানসহ প্রাইভেট গাড়ি বেশ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে। পুরো গতিতে তো কেউ যেতেই পারছে না বরং গর্ত কাটিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে চালকরা। মহাসড়কের মন্তাননগর বিশ্বরোড অংশ, বারইয়ারহাট, চিনকী আস্তানা, বিএসআরম গেইট, মিঠাছরা, বড়তাকিয়া, নয়দুয়ার, নিজামপুর ও বড়দারোগারহাট অংশে নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত দেখা যায়। গর্তের কারণে মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলছে ধীরগতিতে। ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ উঁচু-নীচু হয়ে যায়। এতে পানি জমে যায়। এই জমে থাকা পানি থেকে মূলত খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে।
চালকরা জানায়, কোথাও বা বড় বড় গর্ত কোথাও পিচ উঠে গেছে, আবার কোথাও ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত তৈরী হয়েছে। সড়কটির ভাঙার কারণে প্রায়ই গাড়ি বিকল হয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে। এতে মহাসড়কটিতে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মাইলের পর মাইল সৃষ্ট যানজটের কবলে পড়ে হাজার হাজার যাত্রীদের অবর্ণনীয় কষ্টের মুখে পড়তে হয়।
ট্রাক চালক মোঃ মহাসিন মিয়া বলেন, কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও মহাসড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আমি প্রতিরাতে ফেনীর মুহুরী প্রজেক্ট থেকে মাছ নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন আড়তে নিয়ে যাই। কিন্তু গত কয়েকদিন গর্তের কারণে রাতের বেলায় গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার মধ্যে সামান্য বৃষ্টিতে গর্তগুলো বড় হওয়ায় এবং পিচ ঢালাই উঠে যাওয়ায় পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রায় ভারী যানবাহন দেবে ও বিকল হয়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি করে। এতে করে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে বেশি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী এশিয়ালাইন পরিবহনের চালক মনির হোসেন বলেন, ভাঙা রাস্তার কারণেই এ মহাসড়কে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। বড় বড় গর্তগুলোতে আটকে পড়ার কারণে অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে যায়। একই কারণে গাড়ির গতি অনেক ধীর হওয়ায় সময় অপচয় হয়, তৈরি হয় যানজট।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী কাভার্ডভ্যান চালক মোশাররফ হোসেন কুমিল্লায় বিরতিকালে সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, পুরো পথ পাড়ি দিতে অনেক কষ্ট হবে এটুকু বুঝতে পারছি। তিনি বলেন, দিনের আলোয় তো গর্ত কোথায় দেখতে পাচ্ছি তাই কেটে কুটে চালিয়ে যাচ্ছি, রাতে তো অনেক চালককেই বিপর্যয়ে পড়তে হবে। অনেক চালক এসব গর্তে দুর্ঘটনায়ও পতিত হতে পারে। ভারী যান বিকল হয়ে পড়তে পারে। মীরসরাই উপজেলা অংশের বড়তাকিয়া, মিঠাছরা, সোনাপাহাড় অংশের দশা খুবই ঝুকিপূর্ণ বলে সরেজমিনে দেখা যায়। এসব এলাকায় কোথাও কোথাও ২০ ফুট জায়গাও ভাল নেই। প্রতি কিলোমিটারে রয়েছে শত শত ছোট বড় গর্ত। এদিকে মহাসড়কে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শতশত ভারী ও হালকা যানবাহন। যানবাহন চলাচলের সময় গর্তে জমে থাকা ময়লা পানি পথচারীদের গায়ে ছিটকে পড়ছে। আর প্রতিনিয়ত এসব ময়লা পানিতে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মূল্যবান কাপড়-চোপড়।
কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী এশিয়া লাইনের স্বত্ত্বাধিকারী জলিস আব্দুর রব জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলতে গিয়ে তাদের বাসগুলো খানা-খন্দে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কুমিল্লা উত্তর জেলা কমিটির আহ্বায়ক লিটন সরকার বলেন, এই মহাসড়ক দিয়ে অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। মহাসড়কের খানা-খন্দ মেরামত হয়নি, এতে ফের যানজট সৃষ্টিসহ যাত্রী বিড়ম্বনা বাড়বে।
মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক সালেহ আহম্মদ পাঠান জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মহাসড়কে গাড়ী চলছে ধীরগতিতে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খানাখন্দের বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টির ফলে মহাসড়কের কিছু কিছু অংশে এমন খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম পার্শ্বের ঢাকামুখী অংশ বেশি নষ্ট হয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে তা সংস্কার করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।