নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩০৬/৪
আফগানিস্তান : ৪৫.১ ওভারে ২১৮/১০
ফল : বাংলাদেশ ৮৮ রানে জয়ী
সফরকারী আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে রেকর্ড জুটিতে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ৩০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য। বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে এতবড় লক্ষ্য পাড়ি দেয়া অসম্ভব। এমনটা ধারণাই ছিল। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান, শরিফুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজরা সে ধারণাই সত্যি প্রমাণ করলেন।
গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের ৮৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
জিতলেই মিলবে বিশ্বকাপ সুপার লিগে প্রথম দল হিসেবে একশ পয়েন্ট অর্জনের গৌরব- এমন হাতছানি সামনে রেখে খেলতে নেমে কাল দুর্দান্ত খেলেছে টাইগাররা। আফগানিস্তানকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে সুপার লিগে সেঞ্চুরির পাশাপাশি পয়েন্ট টেবিলেও শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরির উপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। জবাবে ৪৫.১ ওভারে ২১৮ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানদের ইনিংস। ম্যাচ জিতে সুপার লিগে ১৪ ম্যাচে ১০ জয়ে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বরে উঠে গেলো তামিম ইকবালের দল। দুই নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের ঝুলিতে রয়েছে ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট। আগামী সোমবার সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের চেয়ে আরও এগিয়ে যাবে লাল-সবুজরা।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশের করা ৩০৬ রানের জবাবে খেলতে নেমে পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারেই ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। হাঁটুর চোটের কারণে দীর্ঘসময় মাঠের বাইরে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ওপেনিংয়ে পায়নি আফগানরা। তার জায়গায় ইনিংস সূচনা করেন রহমত শাহ।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই সরাসরি থ্রো’তে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আফিফ হোসেন ধ্রæব। ইব্রাহিম জাদরানের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া রিয়াজ হাসান করেন ১ রান। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদিকে কট বিহাইন্ড করেন শরিফুল ইসলাম। হাশমতের ব্যাট থেকে আসে ৫ রান। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে সাকিবের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন ৯ রান করা আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন রহমত ও নাজিবউল্লাহ। এ দুজন মিলে গড়েন ৮৯ রানের জুটি। নাজিবের স্ট্রেইট ড্রাইভে ননস্ট্রাইক প্রান্তে স্ট্যাম্প ভাঙলে মাঠে দেখা যায় অনন্য এক ঘটনা। শেষ পর্যন্ত তাসকিন এ জুটি ভাঙেন। ইনিংসের ২৫তম ওভারে তাসকিনের বলে সোজা বোল্ড হন ৫২ রান করা রহমত। পরে ২৯তম ওভারের প্রথম বলে আরেক হাফসেঞ্চুরিয়ান নাজিবকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন তাসকিন। নাজিবের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। নাজিব বিদায় নিলে উইকেটে আসেন গুরবাজ। তবে বেশিক্ষণ থাকা হয়নি তার। সাকিবের বলে প্লেইড অন হওয়ার আগে ৭ রান করেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। সবশেষ ৩৮তম ওভারে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে প্যাভিলিয়নে পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজ। আউট হওয়ার আগে নবী করেন ৩২ রান। তার বিদায়ের পরই মূলত জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। মুস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে পরপর ছয় ও চার মেরে খানিক আশা জাগান রশিদ খান। তবে পরের বলেই তাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। রশিদের সংগ্রহ ২৯ রান। এরপর বাকি ২ উইকেট নিয়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে লেগে যায় আরও ৪.৪ ওভার। শেষ দুই উইকেট নেন দুই খÐকালীন বোলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রæব। প্রথমে মাহমুদুল হাসান জয়ের দারুণ এক ক্যাচে আউট হন মুজিব-উর রহমান। পরে ৪৫তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে প্রথম বলেই ফজলহক ফারুকীকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন আফিফ। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে আফিফই নিয়েছিলেন উইনিং শট। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় নিশ্চিত করা শেষ উইকেটও এলো তার হাত ধরে। বাংলাদেশের তাসকিন ২১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৩৮ রানে দুই উইকেট পান সাকিব। আর একটি করে উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ ছিল। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জেতার পর সাকিব-তামিম প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও আফগানদের সামলাতে লিটন-মুশফিক জুটিই ছিল যথেষ্ট। ব্যাটসম্যানরা যখন রুদ্ররূপী হয়ে উঠেন, তখন বোলাররা যে কতটা অসহায় হয়ে পড়েন, তার স্পষ্ট উদাহরণ ছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে। ইনিংসের মাঝপথে সাত বোলার ব্যবহার করেও লিটন দাস-মুশফিকুর রহিমকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি আফগানিস্তান। বরং সফরকারীদের ওপর আগ্রাসন বাড়িয়ে রানের ফুল ফুটিয়েছেন দুই বাংলাদেশী ব্যাটার। তৃতীয় উইকেটে তাদের ২০২ রানের রেকর্ড জুটিতেই ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। যে জুটি নির্ধারণ গড়ে দেয় তিনশো রানের ভিত।
এক পর্যায়ে লিটন এতই আগ্রাসী হয়েছিলেন যে, আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো স্কোর বোর্ড। কিন্তু ৪৭তম ওভারে ডিপ স্কয়ার লেগে লিটন ক্যাচ তুলে দিলে সেখানেই শেষ হয় বাড়তি রানের সম্ভাবনা। কারণ লিটনের ফেরার পরের বলে ফিরেছেন আরেক সেট ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ৮৬ রানে ক্রিজে থাকা এই ব্যাটার ক্যাচ তুলে ফিরেছেন। ৯৩ বলে ফেরা মুশফিকের ইনিংসে ছিল ৯টি চার। তার আগে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন ১২৬ বলে ফিরেছেন ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে। তাতে ছিল ১৬টি চারের সঙ্গে ২টি চারের মার। এ দুজন ফেরার পর আফিফ-মাহমুদউল্লাহ সেভাবে রান তুলতে পারেননি। আফিফ অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে, মাহমুদউল্লাহ ৬ রানে। ফরিদ আহমেদ ৫৬ রানে নিয়েছেন দুটি উইকেট। একটি করে শিকার ফজল হক ফারুকি ও রশিদ খানের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।