Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাশিয়ার জন্য বন্ধ পশ্চিমের বাজার

এখনই না থামলে আরও নিষেধাজ্ঞা : বাইডেন জরুরি অবস্থা জারি করছে ইউক্রেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মস্কোর উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো শুরু করে দিল আমেরিকা ও তার পশ্চিমের মিত্রদেশগুলো। নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সমস্ত রকম অর্থনৈতিক লেনদেনে আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। মঙ্গলবার নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিকে, ইউক্রেনজুড়ে জারি হচ্ছে জরুরি অবস্থা। তবে দেশটির রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই এলাকা ডোনেস্ক ও লুহানস্ক এর আওতার বাইরে থাকবে।
ইইউ সদস্যরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ নিয়ে সম্মত হয়েছে যার লক্ষ্য ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দেয়ার পরে দেশটির মারাত্মক ক্ষতি করা, ইইউ পররাষ্ট্র নীতি প্রধান বলেছেন। ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ অব্যাহত রাখলে আরও কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। বাইডেন জানিয়েছেন, দেশ হিসেবে শুধু রাশিয়া নয়, সে দেশের বৃহৎ উদ্যোগপতিদের জন্যও বন্ধ পশ্চিমের বাজার। পাশাপাশি রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক ভিইবি এবং মিলিটারি ব্যাঙ্কের উপরও জারি হবে এই নিষেধাজ্ঞা। দেশের বাইরে সেনা শক্তির ব্যবহারে রাশিয়ার পার্লামেন্ট সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরই হোয়াইট হাইসের তরফে এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। আগেই ইউরোপের বাজার রাশিয়ার জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ বার আমেরিকাও একই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করল।
তবে শুধু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাই নয়, ইউক্রেন সঙ্কট সামাল দিতে কিয়েভকে যুদ্ধাস্ত্র দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘নেটোর এলাকা রক্ষায় আমেরিকা দায়বদ্ধ। যে কোনও মূল্যে তা রক্ষা করা হবে। এই কারণেই ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ তবে এই মুহূর্তে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর কোনও সম্ভাবনা যে আমেরিকার নেই, তা-ও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
এদিকে, মঙ্গলবার ইইউ পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, একটি আন্তর্জাতিক ফোরামের সাইডলাইনে প্যারিসে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য সর্বসম্মতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে একমত হয়েছেন। নিষেধাজ্ঞাগুলি রাশিয়ার সংসদ সদস্যদেরও লক্ষ্যবস্তু করবে যারা বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সমর্থন করেছিল, সোমবার পুতিন ঘোষিত একটি সিদ্ধান্ত। ‘নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে আঘাত করবে এবং অনেক ক্ষতি করবে,’ বোরেল ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-ইভেস লে ড্রিয়ানের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন।
সম্পদ জব্দ এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যে রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষ ডুমার ৩৫১ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত, যারা পুতিনের কাছে দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার আবেদন করেছিলেন, তিনি যোগ করেছেন। লে ড্রিয়ান, যার দেশ ঘূর্ণায়মান ইইউ প্রেসিডেন্সি ধরে রেখেছে, বলেছেন সদস্য দেশগুলি ‘প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে সর্বসম্মতভাবে সম্মত হয়েছে’। তিনি রাশিয়াকে ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ এবং ‘তার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
বোরেল বলেন, ইইউ ২৭ জন ব্যক্তি ও সত্ত্বাকে টার্গেট করতে সম্মত হয়েছে যারা ‘ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতাকেক্ষুণ্ন বা হুমকিতে ভূমিকা রাখছে’। রাশিয়ান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলি এবং সেই অঞ্চলগুলিতে অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, তিনি বলেছিলেন। এর পরে ব্রাসেলসে ইইউ রাষ্ট্রদূতদের আরেকটি বৈঠক হবে, যখন নিষেধাজ্ঞাগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
লে ড্রিয়ান বলেছেন যে, তিনি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলির স্বীকৃতির বিষয়ে পুতিনের ঘোষণার প্রেক্ষিতে আলোচনার জন্য তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষ সের্গেই ল্যাভরভকে প্যারিসের আমন্ত্রণও বাতিল করবেন। তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, লে ড্রিয়ান বলেছেন যে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি দেখিয়েছে যে পুতিন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ‘আর রাশিয়ার স্বাক্ষরকে সম্মান করেন না’। বোরেল অবশ্য যোগ করেছেন যে, ‘ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে একটি যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে’।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার উপর এক তরফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপান হলেও, মূলত গ্যাস ও তেলের জন্য গোটা ইউরোপ নির্ভর করে পুতিনের দেশের উপর। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে চাপানো নিষেধাজ্ঞার ফলে ইউরোপে তেলের দাম আকাশ ছোওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে তেলের দামের মাত্রাছাড়া বৃদ্ধি হলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয় উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, ইউক্রেনজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে বলে গতকাল জানিয়েছেন ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেক্সি দানিলভ। তবে দেশটির রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই এলাকা ডোনেস্ক ও লুহানস্ক এর আওতার বাইরে থাকবে। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ৩০ দিন স্থায়ী হবে। প্রয়োজনে এটি আরও ৩০ দিন বাড়ানো যেতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডোনেস্ক ও লুহানস্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেখানে স্বতন্ত্র শাসন ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে সেখানে রুশ বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ পুতিন তার দেশের জন্য যে কৌশলগত হুমকির কথা বলেছেন, সেদিকে ইঙ্গিত করে ওলেক্সি দানিলভ জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেননি। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • গোলাম কাদের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:১৩ এএম says : 0
    আমিরিকার আধিপত্যের দিন শেষ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ