পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হওয়ার একটি বড় কারণ যানজট। দিনে তো বটেই, মধ্যরাতের পর পর্যন্তও রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। ১০ বছর আগে ঢাকার যে গন্তব্যে পৌঁছাতে আধাঘণ্টা লাগতো, এখন সেখানে পৌঁছাতে দু’ তিন ঘণ্টাও পার হয়ে যায়। যানজটের কারণে মানুষ যেমন নির্ধারিত সময়ে কোনো জায়গায় উপস্থিত হতে পারে না, তেমনি ফিরতেও পারে না। যানবাহনগুলো অলস দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মানুষের ধৈর্য নষ্ট হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের হানি ঘটে। সময়ের কাজ সময়ে করা সম্ভব হয় না। যান্ত্রিক যানবাহনগুলো অনবরত কালো ধোয়া ছাড়ে, পরিবেশ নাশ করে। যানজটে আর্থিক ক্ষতিও বিপুল। বিনিয়োগ বোর্ডের গবেষণা মতে, যানজটে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কর্মঘণ্টার ক্ষতি প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার। জ্বালানি ও মেরামত বাবদ ক্ষতি ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা এবং দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি ১৫০ কোটি টাকা। ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যানজটে জিডিপির ক্ষতি হয় ২.৫ শতাংশ। বিশ্বের কোনো রাজধানী শহরে যানজটে এমন অচলাবস্থা ও আর্থিক ক্ষতি দেখা যায় না। অপরিকল্পিত শহর সম্প্রসারণ, বিপুল জনচাপ, রাস্তাঘাটের অপ্রতুলতা, রাস্তার তুলনায় যানবাহনের আধিক্য, ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নাগরিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদি যানজটের জন্য দায়ী। যানজট নিরসন ও মসৃণ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্নমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ও করছে। রাজধানীর বিভিন্ন অংশে নির্মিত কয়েকটি ফ্লাইওভারের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। এসব ফ্লাইওভার নির্মাণে বহু কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নির্মাণকালে নগরবাসীর অপরিসীম দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। অথচ, দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, এসব ফ্লাইওভার যানজট কমাতে খুব একটা সহায়ক হচ্ছে না। কোনো কোনো ফ্লাইওভার, বিশেষত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার উল্টো যানজটের কারণে পরিণত হয়েছে। এই ফ্লাইওভারের দুই প্রান্তে, এমনকি ফ্লাইওভারেও সব সময় যানজট লেগে থাকে।
কী কারণে এই যানজট? ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর মতে, টোল দেয়া-নেয়াতে বেশি সময় লাগে, যাতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় যানজট। টোল পরিশোধের পর গুলিস্তানে নেমেই পড়তে হয় মহা সমস্যায়। শ্রমিক, মালিক, স্থানীয় নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চাঁদা শিকারের কবলে পড়তে হয় প্রতিটি যানবাহনকে। ফলে ফ্লাইওভারের মুখে দেখা দেয় অস্বাভাবিক যানজট। এটা প্রতিদিনের ঘটনা। ওদিকে ফ্লাইওভারের দু’প্রান্তকে যানবাহন চালকরা তাদের স্ট্যান্ড বা টার্মিনাল বানিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অগুছালোভাবে ইচ্ছামত যানবাহন রেখে যাত্রীদের ওঠানো-নামানোর কারণে যানবাহন ও মানুষের ব্যাপক সমাবেশ লক্ষ করা যায়। এতে যাত্রীদের বিপাক ও দুর্গতির সীমা থাকে না। বলা বাহুল্য, যানজট শুধু ফ্লাইওভারের দু’ প্রান্তেই দেখা যায় না, সেটা দুই প্রান্তেই বহু দূর পর্যন্ত আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যায়। গুলিস্তানে দেখা দেয়া যানজট কখনো শাহবাগ, কখনো কাকরাইল ছাড়িয়ে যেতে দেখা যায়। অনুরূপভাবে ওপ্রান্তেও যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার শুরু থেকেই খবরের শিরোনাম হয়ে আসছে। এই ফ্লাইওভারে নিয়ম না মানার একটা প্রতিযোগিতা বরাবরই প্রত্যক্ষ করা যায়। যানবাহনগুলো ওঠা-নামায় কোনো বিধি মানে না। ফ্লাইওভারে স্টপেজ বানিয়ে তারা যাত্রী ওঠায়-নামায়। চলাচলের ব্যাপারে গতিসীমা মান্য করে না। বাইকার ও অন্যান্য যানবাহনও ট্রাফিক শৃঙ্খলার কোনো ধার ধরে না। পথচারী এবং যাত্রীরাও কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না। এ কারণে প্রায়ই এই ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে দেখা যায়। ফ্লাইওভারটির নিচের রাস্তা ভাঙাচোরা, কোনো সংস্কার নেই। এ ছাড়া অধিকাংশ সময় তা যানবাহন, দোকানদার ও হকারদের দখলে থাকতে দেখা যায়। কখনো কখনো উচ্ছেদ অভিযান চলে। সেটা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এ ফ্লাইওভার নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট, মতামত ও নিবন্ধ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু তাতে যানজট, অনিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলার কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি। বরং, অবনতিই হয়েছে। এটা আসলে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। ফ্লইওভারের দুই প্রান্ত দখল, টার্মিনাল বানানো, চাঁদাবাজি ও ট্রাফিকবিধি লংঘন ইত্যাদি সহজেই দূর করা সম্ভব যদি সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হয়।
সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি রাজধানীর একটি প্রবেশদ্বার। অনুরূপ দুটি বড় প্রবেশদ্বার হলো মহাখালী ও গাবতলী। সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলীতে রয়েছে যানবাহন টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালেই শৃঙ্খলার অভাব। অথচ, এই তিনটি টার্মিনালের শৃঙ্খলার ওপর দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানীর নির্বাধ যোগাযোগ ও যাতায়াত নির্ভর করে। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি দিয়ে শুধু নারায়ণগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর যানবাহন ও মানুষ ঢাকায় আসে না, বরং বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা প্রভৃতি জেলার যানবাহন এবং মানুষও আসে। আবার ফিরেও যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী পণ্যবাহী যান এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বা অন্য জেলামুখী পণ্যবাহী যান এই প্রবেশ ও নির্গমন পথই ব্যবহার করে। যোগাযোগ, যাতায়াত ও আমদানি-রফতানির স্বার্থেই সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি সড়ক ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সর্বক্ষণ উন্মুক্ত, বাধাহীন ও যানজটরহিত অবস্থায় থাকা প্রয়োজন। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফ্লাইওভারের দু’প্রান্তে অঘোষিত টার্মিনাল উচ্ছেদ, সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ, দ্রুত টোল আদায় এবং যানবাহন চালকদের বিধি মেনে যান চালনা নিশ্চিত করা গেলে চলমান অবস্থার শুভ ও ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, যেহেতু বিষয়টি দীর্ঘদিনের, সুতরাং এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য ও জরুরি। আমরা আশা করবো, সরকার এদিকে দৃষ্টি দেবে এবং যথাপ্রয়োজন পদক্ষেপ নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।