পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আধাঘন্টারও কম সময়ে ঢাকা থেকে গাজীপুর যাওয়ার প্রকল্প হিসেবে নাগরিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল বিআরটি বা বাস র্যাপিড ট্রানজিট। বিমান বন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০.৫ কিলোমিটার প্রথম বিআরটি প্রকল্পের কাজে প্রায় ৫ কিলোমিটার ফ্লাইওভারের কাজ ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকল্প শিডিউল অনুসারে ৪ বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছরেও শেষ করতে পারেনি সড়ক ও সেতু বিভাগ। নিত্য যানজটের বিড়ম্বনা থেকে নাগরিকদের মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে স্বল্প সময়ে গাজীপুরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মহাসড়কে যাতায়াতের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও এত দিনেও শেষ না হওয়ায় যানজট ও জনদুর্ভোগ সীমা অতিক্রম করেছে। বিদেশি কারিগরি সহায়তায় দেশের প্রথম বিআরটি প্রকল্পের এমন লেজেগোবরে অবস্থায় মানুষের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার কোম্পানির দীর্ঘসুত্রিতা, প্রকল্প পরিচালকদের নিস্ক্রিয়তা এবং শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাশর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে প্রকল্প এলাকায় যানজট-জনদুর্ভোগের পাশাপাশি প্রায়শ প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। আগস্টের মাঝামাঝি বিমান বন্দর সড়কে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে একটি প্রাইভেট কারের ৫জন যাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়।
অবশেষে ১০ বছর পর বিআরটি ফ্লাইওভার প্রকল্পের আংশিক শীঘ্রই উদ্বোধনের চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বিআরটি প্রকল্পে ফ্লাইওভারের আংশিক(২.২ কিলোমিটার) খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করার পর একদশক ধরে জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলা উন্নয়ন প্রকল্পটির অংশবিশেষ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নি:সন্দেহে ইতিবাচক। তবে সময়মত ও যথাযথ শৃঙ্খলা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে, ঠিক একইভাবে যেনতেন প্রকারে ফ্লাইওভার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যানবাহনের জন্য খুলে দেয়ার পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার কথাও আগেই মাথায় রাখতে হবে। বিশেষত ফ্লাইওভারের দুইপাশের নিচের রাস্তার অবস্থার বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনায় রাখতে হবে। ঢাকার প্রায় সবগুলো ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে অগোছালো, যানজট ও ময়লার ভাগাড় এসব ফ্লাইওভার সম্পর্কে নগরবাসিকে শঙ্কিত করে তুলেছে। তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এর পূর্বাংশের প্রবেশ পথের দুই পাশ এখনো প্রয়োজনীয় মেরামত হয়নি। খানাখন্দের কারণে কুতুবখালি, কাজলারপাড় এলাকায় ফ্লাইওভারের দুইপাশে নিচ দিয়ে যানচলাচল করতে মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক গেটওয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর এবং উত্তর-পশ্চিমের ২৩ টি জেলার সাথে সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত বিমান বন্দরের বিআরটি ফøাইওভার উদ্বোধনের আগে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে। উদ্বোধনের আগে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে সরেজমিন সবকিছু দেখতে হবে।এ ব্যাপারে উপযুক্ত তদারকি ও মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘নাগরিক যন্ত্রণার নগরী’। মানুষের জীবনমানের পরিমাপক হিসেবে ভারসাম্যপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাতাস ও পানির মান এবং নাগরিক নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধাগুলোকে বিবেচনায় রাখা হয়। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা বিশ্বের মেগাসিটিগুলোর বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রতিবছর একাধিকবার তাদের জরিপ ফলাফল প্রকাশ করছে। সে সব রিপোর্টে বিশ্বের ১৪০ শহরের মধ্যে বসবাসের জন্য নিকৃষ্ট১০ শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নগরীর নাম থাকছে। বায়ু দূষণে প্রায়শ ঢাকা শীর্ষ কিংবা দ্বিতীয় অবস্থান দখল করছে। পানি দূষণ, পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকার অবস্থান বিশ্বের তলানিতে রয়েছে। এহেন ভারনারেবল একটি শহরের পরিবেশ, শৃঙ্খলা ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বছরের পর বছর অতিরিক্ত সময় এবং বাড়তি খরচ লাগা দুর্ভাগ্যজনক। বিআরটি প্রকল্প উদ্বোধনের পর যানজট ও জনদুর্ভোগ আরো বেড়ে যাওয়া, ফ্লাইওভারের দুইপাশে খানাখন্দ, ময়লার ভাগাড়ের বাস্তবতা নগরবাসি আর দেখতে চায়না। বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একটি অংশ যানবাহনের জন্য খুলে দিলে যদি কিছু মানুষের সুবিধা হয় এবং নিচ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারিদের আগের মতই অনিরাপদ ও বিপদশঙ্কুল থাকতে হয়, তবে সেটা কোনোভাবেই কাঙ্খিত হবে না। ফ্লাইওভারসহ বিআরটি প্রকল্প এবং প্রকল্প এলাকার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা যানজট ও জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রত্যাশিত ভ’মিকা পালন করবে বলে আমরা খুবই আশাবাদী। এ ক্ষেত্রে তড়িগড়ি করে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত না নিয়ে সবদিক বিবেচনা করেই উদ্বোধন করা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।