Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পৃথিবীর সমস্ত মানুষ রাতারাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলে কী হবে?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৪০ এএম

‘পৃথিবীর (Earth) শেষ মানুষটি নিজের ঘরে বসে ছিল। সেই সময় কেউ দরজায় টোকা দিল।’ ফ্রেডরিক ব্রাউনের লেখা এই দুই লাইনের বিশ্ববিখ্যাত গল্প ‘নক’ প্রায় সকলেরই পড়া। কিন্তু এই গল্পের স্মার্ট নির্মাণের পাশাপাশি আরও একটা বিষয় আমাদের নজর এড়ায় না। তা হল, একেবারে জনশূন্য পৃথিবীতেও কোনও মতে বেঁচে যাওয়া একজন মানুষও শেষ পর্যন্ত আরেক জন মানুষের সাহচর্যই চায়। কিন্তু কী হবে, যদি আচমকাই পৃথিবীতে আর একজন মানুষও না থাকে? যদি দুম করে পি সি সরকারের ম্যাজিকের মতো ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যায় সক্কলে? তারপর? কী হবে?

আপাত ভাবে এই কল্পনা আকাশকুসুম মনে হলেও এই গ্রহের মানুষশূন্য হয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে অবাস্তব বলা যায় না মোটেই। সাম্প্রতিক অতিমারীর ছোঁয়া আমাদের মনে সেই আতঙ্কের একটা ছবি কিন্তু এঁকে দিয়েছে। লকডাউনের নিস্তব্ধ পথঘাট রাতারাতি যেন পৃথিবীকে এক ছায়াপৃথিবী বানিয়ে তুলেছিল। তবে এখনই নয়, এই ভাবনা বারবার হানা দিয়েছে চিন্তাবিদদের মনে। ২০০৭ সালে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড উইদাউট আস’। ওয়েজম্যান নামের এক লেখক এই বইটি লিখেছেন। সেই বইয়ের পরতে পরতে ধরা পড়েছে মানুষবিহীন পৃথিবীর হাল হকিকত।

কেন এমন বই লিখলেন ওই ভদ্রলোক? আসলে মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে বেড়াতে গিয়ে ২ হাজার বছর আগের লুপ্ত শহর তাকে চমকে দিয়েছিল। তিনি জানতে পারেন গুয়াতেমালার যে ঘন অরণ্যের মধ্যে তিনি হাঁটছেন তা আজ বৃষ্টিঅরণ্য হলেও একসময় এখানেই ছিল পিরামিড ও শহরাঞ্চল! ওয়েইজম্যানের কথায়, “এটা ভাবলেই রোমাঞ্চ জাগে, কীভাবে প্রকৃতি কত দ্রুত সব দখল করে নেয়।”

কিন্তু কী হবে পৃথিবী মানবশূন্য হয়ে পড়লে? শেষ পর্যন্ত আদিম প্রকৃতি সবকিছুরই দখল নেবে। ঠিকই। কিন্তু একেবারে শুরু থেকে যে আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটতে থাকবে তা ভাবলেই শিহরণ জাগে। হ্যাঁ, আমরা কেউ তা দেখার জন্য থাকব না হয়তো। কিন্তু মানুষ তার কল্পনায় নিজের অস্তিত্বের আগে ও পরের ঘটনাকে দেখতে পায়। এটাই হয়তো তার শ্রেষ্ঠ ক্ষমতা। কল্পনায় সে পেরিয়ে যেতে পারে দেশকালের গণ্ডি।

পৃথিবী থেকে মানুষ বিদায় নিলে খুব দ্রুত নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের মতো সব বড় বড় শহরের সাবওয়েগুলি জলে ভরে যাবে। মোটামুটি ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই সবকিছু জলে থইথই করতে শুরু করবে। এদিকে ক্রমেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হতে থাকবে। আস্তে আস্তে অন্ধকারে ঢেকে যেতে থাকবে পৃথিবী।

সেই বিদ্যুৎহীন অন্ধকার পৃথিবীতে কৃত্রিম আলো অবশ্য থাকবে। সারা পৃথিবীর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তেল শোধনাগারগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে শুরু করবে। তাদের দাউদাউ শিখার উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠবে চারপাশ। এই ভাবে চলবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। এমনকী মাসের পর মাস। দমকল বাহিনী তো নেই। তাই সেই আগুন ছড়াতেই থাকবে। একসময় প্রাকৃতিক ভাবেই লেলিহান আগুনের খিদে মিটবে। আর তখন থেকে অন্ধকার পুরোপুরি দখল নেবে পৃথিবীর। আদিম পৃথিবীর মতোই হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের পৃথিবীও।

আর একটা বিষয় আছে, যা কল্পনারও বাইরে। পৃথিবীর যত পারমাণবিক চুল্লি সেগুলিও অচিরেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে পারমাণবিক বিস্ফোরণও ঘটবে! এরপরও বহু বছর ধরে ওই সব এলাকায় থাকবে তেজস্ক্রিয়তার ভয়ংকর প্রভাব। এপ্রসঙ্গে ওয়েইজম্যান জানিয়েছেন, “এই বিষয়টা সত্যিই একটা ওয়াইল্ড কার্ডের মতো। ঠিক কী যে হবে কল্পনাও করা যাচ্ছে না।”

এদিকে বছর কুড়ির মধ্যে শহর ও গ্রামের সব রাজপথ হয়ে উঠবে জঙ্গল। পাশাপাশি সাবওয়ে ও অন্যান্য ভূগর্ভস্থ প্রণালী উপচে বড় রাস্তাগুলিও জলের তলায় থাকবে। অর্থাৎ, দেখলে মনে হবে দীর্ঘ অনন্ত কোনও নদীর প্রবাহ চলেছে। যার চারপাশ ঘিরে দেখা মিলবে নানা আকার ও প্রজাতির গাছপালার। ততদিনে শীতের কামড় ও গরমের অত্যাচারে পথঘাটের পাশাপাশি ঘরবাড়িও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ক্রমেই তাদের বুনিয়াদ টলে যেতে শুরু করেছে।

এই ভাবে শ দুয়েক বছর চলবে। তার মধ্যেই একে একে ভেঙে পড়বে বাড়িঘর, যত উঁচু উঁচু সব ইমারত! মিশে যাবে চারপাশে বয়ে যেতে থাকা জলপ্রবাহের মধ্যে। তবে গ্রাম বা মফস্বলের বাড়িঘরগুলিতে ক্ষয় একটু দেরিতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত পরবর্তী সত্তর বছরের মধ্যে সেগুলিও ভেঙে পড়তে থাকবে। সর্বত্র গজিয়ে উঠবে নানা বিষাক্ত গাছপালা।

গাছপালার কথা তো হল। এবার পশুপাখিদের কথাতে আসা যাক। মানুষের অবর্তমানে একে একে জঙ্গল থেকে এসে হাজির হবে জন্তুজানোয়াররা। তারাই দখল নেবে গোটা পৃথিবীর। সব মিলিয়ে পৃথিবী ততদিনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করবে। তবে মানুষ যা ক্ষতি করে দিয়েছে পরিবেশের, তাতে সবকিছু শুধরে নেওয়া সহজ নয়। হিসেব বলছে, মোটামুটি ৬৫ হাজার বছর লাগবে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ সেই আদিম পৃথিবীর মতো হতে।

অর্থাৎ মানুষবিহীন পৃথিবীর কল্পনা করতে আমরা যতই আতঙ্কিত হই, আমরা না থাকলে যে সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ- এককথায় গোটা ধরিত্রীই যে খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। তবে সেই খুশির আনন্দেও থেকে যাবে কাঁটা। কেননা কেবল কার্বন-ডাই-অক্সাইডই নয়, মানুষ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পরও পৃথিবীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে থাকবে তাদের রেখে যাওয়া বিষবৃক্ষ। দুনিয়াজুড়ে তখনও থেকে যাবে প্লাস্টিকের পাহাড়। পেট্রোলিয়াম বর্জ্যও থাকবে। তবে সেসব শেষ পর্যন্ত অণুজীব ও উদ্ভিদরা খেয়ে ফেলবে। কিন্তু মানুষ সৃষ্ট রাসায়নিক পিওপি তথা স্থায়ী দূষণকণা থেকে যাবে ততদিন, যতদিন পৃথিবী থাকবে। ফলে মানুষ না থেকেও তার অপকীর্তির ছাপ থেকে যাবে পৃথিবীতে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স।



 

Show all comments
  • shirajumazumder ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৩৬ পিএম says : 0
    That days is not so far. It will be happened Must When man will loss faith ,ON ALLAH(CREATOR)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিলুপ্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ