Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লাখ টাকার প্রশ্ন উত্তরপ্রদেশের ভোটে কে জিতবে?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৬ এএম

ভারতের রাজনীতির ময়দানে এখন একটাই প্রশ্ন উত্তরপ্রদেশের ভোটে কি আবারও বিজেপি জিতবে নাকি হারবে। তবে বিরোধীরা বলছে প্রথম দফার ভোটে তো মনে হচ্ছে বিজেপি হারবে।

‘জাঠভূমি’র রাশ কার হাতে? প্রথম দফায় ভারতের উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশের ৫৮ আসনে ভোটের পর এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। ভোটের হার দেখে আঁচ করার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক পণ্ডিতদের চিরাচরিত ফর্মুলায় বিজেপির ঠোঁটে মুচকি হাসি আসারই কথা। কারণ, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া যদি সত্যিই প্রবল হতো, তাহলে ভোটের হার কমত না।

বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৬১.২৪ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০১৭ সালের (৬৪.৫৬ শতাংশ) তুলনায় ৩ শতাংশ কম। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক কী? নয়া ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ অন্য কথা বলছে। তা টের পাওয়া যাচ্ছে মাঠে-ময়দানেও। তা বুঝেই চওড়া হাসি অখিলেশ শিবিরে।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুখপাত্র রাজেন্দ্র চৌধুরীর দাবি, প্রথম দফার ভোটের পরই বিজেপি টের পেয়ে গিয়েছে, পরাজয় নিশ্চিত। আমাদের ভোটাররা ভালো সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টির নেতা কিরণময় নন্দ বলেন, প্রথম পর্বে ৫৮টি আসনের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি আরএলডি জোট ৪২টির বেশি পাবে। যে হারে প্রথম দিন ভোট হয়েছে, সেই হারে ভোট হলে বিজেপি দুই অঙ্ক পেরতে পারবে না। প্রথম পর্বে ভোটের হার গতবারের থেকে সামান্য কম দেখে বিজেপি আহ্লাদিত হলেও, তাদের স্বপ্নভঙ্গ হবে। কারণ বৃহস্পতিবারের ভোটে শহরাঞ্চলের লোক তেমন ভোট দিতে না বেরলেও, গ্রামাঞ্চলে মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছেন। বলাই বাহুল্য, সেই ভোট আমরাই পাব।

২০১৭ সালের ভোটে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই ৫৮টি আসনের মধ্যে ৫৩টিই বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। ‘জাঠভূমি’তে বিজেপির সেই অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণ কী? ফিরে তাকাতে হবে ২০১৩ সালে। মুজফ্ফরনগর দাঙ্গার দিকে। ওই ঘটনার পর মেরুকরণ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। এই অঞ্চলে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ জাঠ ভোট রয়েছে। ২০১৭ সালে দেখা যায়, জাঠ ও বর্ণহিন্দুরা হাত মিলিয়ে ঢেলে ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। সমাজবাদী পার্টির মুসলিম-যাদব সমীকরণ মুখ থুবড়ে পড়ে। ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বাকি বিরোধী দলগুলিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয় বিজেপি।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য। নেপথ্যে মূলত দু’টি ফ্যাক্টর। প্রথমত, মেরুকরণের হাওয়া স্তিমিত। দ্বিতীয়ত, কৃষক অসন্তোষ। তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন বিজেপিকে হেলিয়ে দিয়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠরা মূলত আখ চাষের সাথে যুক্ত। টানা এক বছর ধরে চলা কৃষি আন্দোলন চলার সময় বিজেপির ঔদ্ধত্যে তারা ক্ষুব্ধ। ৭০০ আন্দোলনকারীর মৃত্যু ও লখিমপুর খেরির ঘটনা কৃষকদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। ফসলের দাম না পেয়ে অসহায় দশা আখ চাষিদের। ক্ষোভের এই আবহেই অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করেছেন জাঠ নেতা তথা আরএলডি প্রধান জয়ন্ত চৌধুরী। প্রথম দফায় ভোটের হার কিছুটা কমলেও জাঠ ও মুসলিমদের দলে দলে বুথমুখী হতে দেখা গেছে।

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই ৫৮ আসনে ২১.৪ শতাংশ মুসলিম ভোট। বাস্তবে, বিজেপিকে ‘শিক্ষা’ দেয়ার সংকল্প থেকেই মুসলিম বিরোধিতা ভুলে ভোট দিয়েছেন জাঠরা। এই নয়া ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের হাত ধরে এবার সপা-আরএলডি জোট জাঠ-মুসলিম-যাদব ভোট এক ছাতার তলায় আনতে সক্ষম হয়েছে বলেই খবর। তাহলে ভোটের হার ৩ শতাংশ কমল কেন? আসলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বুঝে বুথমুখো হননি বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাংক বর্ণহিন্দুদের একটা বড় অংশ। ফলে, ভোটের হার কমলেও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া বিন্দুমাত্র কমেনি। এই রসায়নেই অস্বস্তি বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবিরে। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলে ভোট পড়েছিল ৬১.০৩ শতাংশ। জিতেছিল কিন্তু সমাজবাদী পার্টি। সূত্র : বর্তমান



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ