পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
থামছেই না রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে ৯টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসেই ৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। গত এক বছরে রেলক্রসিংয়ে ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হয়েছে। অরক্ষিত রেলক্রসিং আর অসচেতনতায় ঢাকাসহ সারাদেশে রেলে কাটা পড়ে বাড়ছে মৃত্যু। গত ৭ বছরে রেলক্রসিংয়ে ২১৩ জন নিহত হয়েছে বলে বেসরকারি একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালে ৯, ২০১৯ সালে ২০, ২০১৮ সালে ২৩, ২০১৭ সালে ১৭, ২০১৬ সালে ২২, ২০১৫ সালে ১৭ ও ২০১৪ সালে ৩১ জন রেলক্রসিংয়ে নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর রেলক্রসিংয়ে ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের মোট অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও এলজিইডির রাস্তা রয়েছে ৪২৭টি করে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৪, পৌরসভার ১১০, সিটি করপোরেশনের ৩২, একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ২৭, জেলা পরিষদের ১৩ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি। এ ছাড়া ১২৭টি ক্রসিং কার আওতায় আছে তা জানা যায়নি।
রেলওয়ের তথ্য মতে, সারা দেশে তিন হাজার ৩৯৮টি ক্রসিংয়ের মধ্যে এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। আর অরক্ষিত দুই হাজার ৫৪টি। গেটম্যান নেই ৬৩২টি ক্রসিংয়ে। রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৮৯ শতাংশই অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে। এছাড়া এক হাজার ৪৬৪টি বৈধ লেভের ক্রসিংয়ের মধ্যে ৯০৪টিতেই কোন নিরাপত্তারক্ষী নেই। রেলপথের ওপর দিয়ে কোথাও কোথাও সড়ক চলে গেছে। লেভেলক্রসিং এগুলোকে বৈধ, অবৈধ, পাহারাদার আছে (ম্যানড), পাহারাদার নেই (আনম্যানড) এভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কখনো বাসের সঙ্গে, কখনো মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ছোট একটি সতর্কীকরণ নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ দায় সারে।
গত ২৬ জানুয়ারি নীলফামারীর সদর উপজেলার দারোয়ানী রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ইজিবাইকের তিন যাত্রী নিহত হয়েছে। পাঁচজন যাত্রী আহত হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও ভটভটির (ছোট ট্রাক) সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের বিরামপুরে রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের ৩ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে বিভিন্ন সংস্থা সড়ক নির্মাণকে দায়ী করছে রেলওয়ে। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের শহরের ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় বাস-ট্রেন দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়। এই রেলগেট রেলওয়ের গেটম্যান ও ব্যারিয়ার থাকার পরও দুর্ঘটনা ঘটে। গত সাত বছরে ২১৩ জন নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, রেলওয়ে ব্রিটিশ আমলের আইনের কারণে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও কোন মামলা করা যায় না। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী রেললাইনের ওপর দিয়ে কেউ চলাফেরা করতে পারবে না। ২০২১ সালে ১২৩টি রেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রেলক্রসিংয়ে ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৭৪ নিহত হয়েছে। কারণ ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত। এসব রেলক্রসিং কোন গেটম্যান ও ব্যারিয়ার না থাকার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। কিন্তু কোন জবাবদিহিতা না থাকার কারণে একে অন্যের ওপর দায় চাপায়।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, রেললাইনের ওপর দিয়ে বিভিন্ন সংস্থা সড়ক তৈরি করে। রেলওয়ের কোন অনুমোদন নেয়া হয় না। অননুমোদিত রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বেশি হয়। স্থানীয় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে ব্যারিয়ারের ফাঁক দিয়ে পাড় হয়। রেললাইনে দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্য রেলওয়ে দায় এড়াতে পারে না। ঘনবসতির দেশ হওয়ায় এই আইন পুরোপুরি পালন করতে পারি না।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। রেলপথ মানুষের চলাচলের জন্য নয়। রেলের সব গেটে সাবধানতা চিহ্ন দেয়া থাকে। রেলপথ এলাকায় বেড়া দেয়া থাকে। এসব বেড়া ভেঙেও লোকজন প্রবেশ করে। নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ থেকে বিরত থাকতে হবে। রেল লাইন আছে এমন এলাকাতে সতর্ক হয়ে চলাচল করার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বলেন, রেলওয়ে অধ্যাদেশ-১৮৯০ অনুসারে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা অনুমতি ছাড়া রাস্তা তৈরি করতে পারবে না। রেলপথের ওপর দিয়ে অনুমতি না নিয়ে কোন ব্যক্তি হাঁটতেও পারবে না। যদি হাঁটে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারসহ দুই বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। যানবাহন চালককে রেলপথ পার হওয়ার সময় দেখে-শুনে পার হতে হবে। কিন্তু এই বিধান কেউ মানে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শাসসুল হক বলেন, দিন দিন বাড়ছে বসতি। নগরায়নের জন্য রেল লাইনের প্রতি কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে রেলক্রসিং তৈরি হয়ে গেছে। সব স্থানে বৈধ ক্রসিং থাকলে এত মানুষের মৃত্যু হতো না। সড়কের সঙ্গে রেলের কোনো সমন্বয় নেই। মানুষ বাঁচানোর উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৌশলী পরিকল্পনা হাতে নেয়া প্রয়োজন। শুধু যে ক্রসিং ঝুঁকিপূর্ণ তা নয়। রেল লাইনের আশেপাশের এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবন্ধক বা পাহারাদার ছাড়া কোনো লেভেল ক্রসিং রাখার কোন অর্থ নেই। রেল লাইনের পাশে ৩ ফুট করে খুঁটির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।