মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
জেনোসাইড ওয়াচ-এর প্রতিষ্ঠাতা, ডক্টর গ্রেগরি স্ট্যান্টন, যিনি ১৯৯৪ সালে সঙ্ঘটিত হওয়ার কয়েক বছর আগে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের অধীনে ভারতের পরিস্থিতিকে মিয়ানমারের ঘটনার সাথে তুলনা করে ভারতে মুসলিমদের আসন্ন গণহত্যার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
১৯৯৯ সালে গঠিত জেনোসাইড ওয়াচ গণহত্যা প্রতিরোধে নিবেদিত একটি বিশ্বব্যাপী সংস্থা। ডক্টর স্ট্যান্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া, ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা অধ্যয়ন এবং প্রতিরোধের একজন প্রাক্তন গবেষণা অধ্যাপক। ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল আয়োজিত ‘কল ফর জেনোসাইড অফ ইন্ডিয়ান মুসলিম’ শীর্ষক কংগ্রেসনাল ব্রিফিংয়ে স্ট্যান্টন এ মন্তব্য করেন। তিনি অধিবেশনে বক্তৃতা করার জন্য আমন্ত্রিত পাঁচ সদস্যের প্যানেলের অংশ ছিলেন।
তার ভিডিও ভাষণে ডক্টর স্ট্যান্টন বক্তব্য শুরু করেছিলেন এই বলে যে, জেনোসাইড ওয়াচ ২০০২ সাল থেকে ভারতে একটি গণহত্যার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল, ‘যখন গুজরাটে দাঙ্গা ও গণহত্যা হয়েছিল যাতে এক হাজারেরও বেশি মুসলমান নিহত হয়’। তিনি বলেন, ‘তখন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি কিছুই করেননি। আসলে অনেক প্রমাণ রয়েছে যে, তিনি আসলে সেই গণহত্যাকে উৎসাহিত করেছিলেন।’ মোদি এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তিনি তার রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে ‘মুসলিম বিরোধী, ইসলামফোবিক অলঙ্কার’ ব্যবহার করেছিলেন।
স্ট্যান্টন বলেন, মোদি যে দুটি উপায় নিয়েছিলেন, তা হল ২০১৯ সালে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা প্রত্যাহার করা এবং একই বছর নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন পাস করা। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করার উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উপত্যকায় ‘হিন্দু আধিপত্য পুনরুদ্ধার করা’। তদুপরি, তিনি যোগ করেছেন, নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন প্রণয়ন বিশেষত ‘মুসলিমরাই লক্ষ্যে’।
‘ভারত আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সুবিধাজনক মর্যাদা দিয়েছে, যারা নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর ছিল। কিন্তু যে একটি দলকে বাদ দেওয়া হয়েছে তারা ছিল মুসলমান,’ তিনি বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘এই আইনটি ছিল বিশেষভাবে... মুসলিমদের লক্ষ্য করে যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা ও গৃহযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে আসামে বসতি স্থাপন করেছিল’।
স্ট্যান্টন বলেন, প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান, যারা ভারতে পালিয়ে এসেছেন এবং ‘ভারতের নিয়মিত নাগরিক’ হিসেবে ‘স্থায়ী’ হয়েছেন। তিনি বলেন, কিন্তু নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে থাকা আদমশুমারির অংশ হিসাবে লোকেদের ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা ১৯৭১ সালের আগে ভারতের নাগরিক ছিলেন। ‘অবশ্যই এখন অনেক লোকের কাছে এ ধরনের ডকুমেন্টেশন নেই,’ তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাথে ঠিক এটিই করেছিল’। মিয়ানমার সরকার প্রথমে একটি আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অ-নাগরিক ঘোষণা করেছে এবং তারপরে সহিংসতা ও গণহত্যার মাধ্যমে তাদের বহিষ্কার করেছে। এ বিষয়ে তিনি আরো হাইলাইট করেছেন যে, জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন - একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা গণহত্যাকে অপরাধী করে - শুধুমাত্র ‘পুরো গণহত্যাকে কভার করে না। এটি আংশিকভাবে গণহত্যাকেও কভার করে’।
‘এটি বিশেষভাবে একটি জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এবং এটিই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে করেছে,’ তিনি বলেন। ভারতের কথা উল্লেখ করে তিনি যোগ করেন, ‘আমরা এখন যেটির মুখোমুখি হচ্ছি এটি অনুরূপ একটি একটি চক্রান্ত।’
স্ট্যান্টন বলেছেন, ভারত সরকারের লক্ষ্য ছিল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের অধীনে আদমশুমারি সারা দেশে প্রসারিত করা যার ‘শিকার হবে ভারতের ২০ কোটি মুসলমান’। তিনি আরো বলেন যে, ‘হিন্দু জাতি হিসাবে ভারতের ধারণা, যা হিন্দুত্ব আন্দোলন, ভারতের ইতিহাস এবং ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী’। ভারতীয় সংবিধান, তিনি বলেন, ‘ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ করার জন্য’ তৈরি করা হয়েছিল এবং যে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল তা কংগ্রেস পার্টির অধীনে ভারতের অস্তিত্বের প্রথম বছরগুলোতে সুরক্ষিত হয়েছিল।
‘যদিও আমাদের কাছে এখন যা আছে, আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর একজন প্রকৃত সদস্য - এই চরমপন্থী, হিন্দুত্ব-ভিত্তিক গোষ্ঠী - মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সুতরাং আমাদের এখানে যা আছে তা হল একজন চরমপন্থী যিনি দায়িত্ব নিয়েছেন।’ স্ট্যান্টন তারপর ব্যাখ্যা করেন যে, গণহত্যা একটি ঘটনা নয় বরং একটি প্রক্রিয়া ছিল এবং ভারতের আসাম রাজ্য এবং অধিকৃত কাশ্মীরে গণহত্যার প্রাথমিক ‘লক্ষণ এবং প্রক্রিয়া’ ছিল।
তিনি উত্তরাখন্ডের তীর্থস্থান শহর হরিদ্বারে ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হিন্দুত্ববাদী নেতা ইয়াতি নরসিংহানন্দ আয়োজিত একটি কনক্লেভের উল্লেখ করেছেন, যেখানে সংখ্যালঘুদের হত্যা এবং তাদের ধর্মীয় স্থানগুলোতে আক্রমণ করার একাধিক আহ্বান জানানো হয়েছিল। বলেছেন যে, অনুষ্ঠানটি গণহত্যাকে উস্কে দেওয়ার লক্ষ্যে ছিল। তিনি বলেন যে, ভারতে এমন কিছু আইন রয়েছে যা এ জাতীয় অনুশীলনের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যেতে পারে, ‘কিন্তু মোদি সে সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেননি’।
স্ট্যান্টন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির এই ধরনের ঘৃণা ও ঘৃণা-বক্তৃতাকে নিন্দা করার নৈতিক দায়িত্ব ছিল, যা বিশেষভাবে মুসলমানদের হত্যার আহ্বান জানায়। তিনি বলেন যে, হরিদ্বার সভায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল, যেটি ভারত সরকারও ব্যবহার করেছিল, তা আসলে ‘মেরুকরণ’ ছিল, যা গণহত্যার দিকে পরিচালিত করেছিল। ‘সুতরাং আমরা সতর্ক করছি যে, ভারতে গণহত্যা খুব দ্রæতই ঘটতে পারে।’
তিনি ভারতের পরিস্থিতিকে রুয়ান্ডার ঘটনার সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে ১৯৯৪ সালে একটি গণহত্যা সঙ্ঘটিত হয়েছিল। ডক্টর স্ট্যান্টন বলেছেন যে, তিনি রুয়ান্ডায় গণহত্যার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সে সময় দেশের পরিস্থিতি মাথায় রেখে। তিনি জানিয়েছেন, তিনি রুয়ান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করেছিলেন যে, ‘আপনি যদি আপনার দেশে গণহত্যা প্রতিরোধে কিছু না করেন তবে পাঁচ বছরের মধ্যে এখানে একটি গণহত্যা হতে চলেছে। সেটা ১৯৮৯ সালে। গণহত্যার বিকাশ ঘটে, ঘৃণা- বক্তৃতা বিকশিত হয়েছে, সমস্ত প্রাথমিক সতর্কতা চিহ্ন বিকশিত হয়েছে। এবং আমরা জানি, ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় ৮০ হাজার তুতসি এবং অন্যান্য নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল’। তিনি উপসংহারে বলেন, ‘আমরা ভারতে এটি হতে দিতে পারি না’। সূত্র : ডন।
ভারত সবচেয়ে খারাপ সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার পথে
এপিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) দ্বারা অনুপ্রাণিত ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা প্রকাশ্যে মুসলিমদের গণহত্যা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের আহ্বান জানানোর পরে ভারত সা¤প্রদায়িক সংঘর্ষের একটি অত্যন্ত জটিল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
ভারতীয় ও বিদেশী মিডিয়ার রিপোর্টে বারবার মুসলিম ও দলিতদের গণপিটুনি, গীর্জা ধ্বংস, পন্ডিতদের ট্রোলিং, অ্যাক্টিভিস্টদের আটক, চলচ্চিত্র তারকাদের হয়রানি, সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন, মৌলিক অধিকারের অবক্ষয়, ইতিহাসের বিকৃতি, ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং জাল খবর এবং প্রচার এবং সতর্কতা উৎসাহিত দ্বারা সামাজিক মিডিয়া পরিপূর্ণ।
একই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি কয়েকদিন আগে জেনোসাইড ওয়াচের সভাপতি ড. গ্রেগ্রোয় স্ট্যান্টনের কংগ্রেসনাল ব্রিফিংয়েও প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যিনি সতর্ক করেছিলেন যে, ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভারতে অমানবিক রুয়ান্ডার গণহত্যার মতো কিছু ঘটতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।