Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ছড়াতে পারে বিজেপির উদাসীনতা

ভারতে প্রকাশ্যে মুসলিম নিধনের ডাক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

গত মাসে উত্তর ভারতে তিন দিনের ধর্মীয় সমাবেশে একজন হিন্দু পুরোহিত বলেন, ‘সমস্ত হিন্দুদের অবশ্যই অস্ত্র তুলে নিতে হবে এবং একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে হবে।’ অন্য এক বক্তা বৃহৎ জনসমাগমকে আরও কঠোরভাবে বলেন, ‘যদি আমাদের মধ্যে একশ’ জন সৈন্য হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে দুই মিলিয়নকে হত্যা করে, আমরা বিজয়ী হব।’ ‘তাদের’ বলতে তিনি ভারতের ২শ’ মিলিয়ন মুসলিমকে বুঝিয়েছেন। রক্তপিপাসু এই হিস্দুত্ববাদীরা ভারতের কোনও বিচ্ছিন্ন অংশ নয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্রটি এমন অসহিষ্ণুতার ক্রমবর্ধমান তরঙ্গ দেখেছে।

দিল্লির স্যাটেলাইট শহর গুরগাঁওয়ে মুসলিমদের প্রার্থনা করার জন্য খোলা জায়গা ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে, কারণ এটি হিন্দুদের অনুভ‚তিকে আঘাত করে। সেখানে মসজিদ নির্মাণের অনুমতিও বন্ধ করা হয়েছে। অনেক স্থানে জবাইয়ের জন্য গবাদি পশু পাচার বা গোমাংস রাখার অভিযোগে মুসলিমদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এছাড়া, মুসলিমরে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যও বর্জন করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তরুণ হিন্দু কট্টরপন্থীরা হাই-প্রোফাইল মুসলিম মহিলাদের নিলাম করার জন্য অ্যাপ তৈরি করে নিপীড়ন করছে।

তবে, একমাত্র মুসলিমরাই হিন্দুত্ববাদের টার্গেট নয়। বারাণসীতে একটি হিন্দু মন্দিরের পোস্টারগুলি অ-হিন্দুদের দ‚রে থাকার জন্য সতর্ক করে। ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের উপর আক্রমণও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। গত সপ্তাহে শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাবে একটি ওভারপাসে মোদির সংক্ষিপ্ত বিলম্ব ঘটার কারণে তার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর সাথে যুক্ত লোকেরা ১৯৮৪ সালের পুনরাবৃত্তির সতর্কতা উচ্চারণ করে, যখন ইন্দিরা গান্ধী তার শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হওয়ার পর হাজার হাজার শিখকে হত্যা করা হয়েছিল। ইসরাইলের বার ইলান ইউনিভার্সিটি দ্বারা সংকলিত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সামাজিক বৈষম্যের একটি স‚চকে, ভারত সউদী আরব এবং ইরানের চেয়ে নি¤েœ অবস্থান করছে। ভারতে বর্তমানে ঘৃণামূলক অপরাধের সঠিক সংখ্যা জানা অসম্ভব। ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে দেশটিতে এসংক্রান্ত স্বাধীন কার্যক্রমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সরকার ২০১৭ সালে তথ্য সংগ্রহ করা বন্ধ করে দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কেউ এই ধর্মীয় সহিংসতার নিন্দা করেননি। বিবিসি এ বিষয়ে জানতে চাইলে, এক বিজেপি রাজনীতিবিদ বিবিসি প্রতিনিধির মাইক্রোফোন ছিঁড়ে ফেলেন এবং বন্ধ করে দেন। শিক্ষাবিদ, আমলা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা মোদিকে শান্ত থাকার জন্য উদ্বেগজনক আবেদন পাঠিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।

কিছু বিশেষজ্ঞ শঙ্কিত যে, বিজেপি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাক্তন রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে এর বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া এবং একসময় একটি মসজিদ ছিল এম স্থানে মন্দিরের কাজ শুরু করার মতো বিভাজনম‚লক বক্তব্য ও কার্যক্রমের আশ্রয় নিচ্ছে, কারণ ভোটে জোতার জন্য তাদের নতুন কিছু দরকার। করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি, চীনের সাথে প্রতিক‚ল সীমান্ত এবং প্রতি বছর শ্রমশক্তিতে যোগদানকারী লক্ষাধিক লোকের জন্য ক্ষীণ সম্ভাবনার কারণে বিজেপি তার নিকৃষ্টতম প্রবৃত্তি ফিরে গেছে।

ভারত সরকারের উপলব্ধি করা উচিত যে, ভারতের ৩শ’ মিলিয়ন বা তার বেশি অহিন্দুরা ১.১ বিলিয়ন সংখ্যাগরিষ্ঠের বিরুদ্ধে হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে, এমন হাস্যকর ধারণাকে উস্কে দেয়ার মাধ্যমে বিজেপি এমন শক্তিকে অবমুক্ত করছে, যা ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সাম্প্রদায়িক রক্তপাত তার নিজস্ব গতি তৈরি করতে পারে। রাশিয়া এবং চীন দ্বারা বিভ্রান্ত পশ্চিম এই সম্ভাবনাটিতে খুব কম মনোযোগ দিয়েছে, যেখানে একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ভারত কর্তৃত্ববাদী চীনের প্রতি পাল্টা জবাব হতে পারত। হিন্দুত্ববাদী ভারত কেবল তার অধিবাসীদের জন্যই বিপজ্জনক হবে না, এটি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাও ছড়িয়ে দিতে পারে, যার মুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে আরও খারাপ সম্পর্কের প্রবণতা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ