Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোটেই হেলাফেলার বিষয় নয়

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৭ পিএম

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দেশের পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বুধবার রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম আয়োজিত ইআরএফ ডায়ালগে অংশ নিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান তার সংগঠনের তরফ থেকে উদ্বেগের কথা জানান। বলা বাহুল্য, তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এখনো তৈরী পোশাক রফতানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এর দৃশ্যমান সমাধান না হলে বা বিষয়টি প্রলম্বিত হলে তৈরী পোশাকের অর্ডার বাতিলসহ এ খাতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তৈরী পোশাক খাতের রফতানিকারকরা তাদের দিক থেকে কাজ করে যাচ্ছেন বলেই মার্কিন ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে তারা দাবি করছেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবসহ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে আবারো লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তের আশঙ্কা সামনে রেখে দেশের তৈরী পোশাক খাতসহ সব খাতের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করারও তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রস্তাব ও উদ্যোগের কথা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পিছনে বাংলাদেশ বিরোধী একটি ‘পিআর’ এজেন্সি কাজ করেছে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যে কারণেই হোক, এর পেছনে যারাই কাজ করুক, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মার্কিন অভিযোগগুলো খুবই গুরুতর। এটি হঠাৎ করেই দেখা দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর তরফ থেকে বাংলাদেশে নানাভাবে মানবাধিকার ও জননিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মার্কিন ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সিনেটর বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তুলেছিলেন। সে সময় থেকে বিষয়টির উপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা দরকার ছিল। এতদিনে হয়তো সরকার বুঝতে পারছেন, বিষয়টি হালকা বা অগ্রাহ্য করার মতো নয়। গার্মেন্ট রফতানির মতো প্রধান রফতানিখাতসহ আমাদের বাণিজ্য, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্বার্থের বিপরীতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বড় ধরনের সংকট হিসেবে দেখা দিতে পারে। অন্য যে সব দেশের সাথে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির বলয়ে থাকা এসব দেশের সাথে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করার ঘটনা এটাই প্রথম। একে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পেছনে কথিত পিআর এজেন্সি বা আন্তদেশীয় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি যেমন উড়িয়ে দেয়া যায় না, একইভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির পেছনে দেশের সামগ্রিক সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার দায়ও অস্বীকার করা যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা সরকারের নির্দেশনার নিরিখে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দেশের মানবাধিকার শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয় নয়। এর সাথে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র, সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক নিরাপত্তাসহ অনেক কিছুই জড়িত রয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ সম্ভাব্য সংকট নিরসনে সেখানে লবিস্ট নিয়োগের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আরো অনেক কিছুই করণীয় রয়েছে। দেশের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। দেশে দক্ষ-অভিজ্ঞ কূটনীতিক আছেন, আছেন প্রথিতযশা আইনজীবী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ও সম্পর্ক আছে, এমন ব্যক্তিও আছেন। তাদের নিয়ে একটি টিম করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠালে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে মার্কিন প্রতিপক্ষের সাথে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে বলেও জানা যায়। এ বিষয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের কথা রয়েছে। আমরা আশা করব, সে সফরের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সমস্যা নিরসনে কার্যকর পন্থা বেরিয়ে আসবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিদেশিরা যাই বলুন না কেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি, নিরাপত্তা ও অধিকার সমুন্নোত করার পাশাপাশি দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ন্যূনতম রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে যে কোনো দেশের ষড়যন্ত্র বা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হবেন।



 

Show all comments
  • Shahid Alam ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৬ এএম says : 0
    কিন্তু মোমেন বাবুর কথার ফুলঝুরিরত শেষ নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Nazera Zahir Chowdhury ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৬ এএম says : 0
    Shame !!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Jan Alam ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    এই নিষেধাজ্ঞা যতটা না মানবাধিকার লঙ্ঘনের তারচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অস্ত্র অতএব সাবধান থাকুন।
    Total Reply(0) Reply
  • ইসমাইল মাহমুদ ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বললো আর না বললো তাতে বাংলাদেশের কিছুই যায় আসেনা। কোনো প্রকার চাপ কিংবা হুমকি ধামকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার টনক নড়াতে পারবেন না। শেখ হাসিনা একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশ এর।
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Al Rashed Badol ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশের রাজনীতির প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ভারত ও মার্কিন বলয় থেকে চীন ও রাশান বলয়ে ঢুকতে যাচ্ছে। আমেরিকার সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mozib ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
    যে কোন গনতন্ত্র রাষ্ট্রের উপরে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পড়া মানেই আমেরিকার গোলামী করা থেকে ওই দেশ সরে দাডাইছে এই বুঝতে হবে। ইজরায়েল একটা সন্ত্রাসী দেশ তাদের সাথে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি রয়েছে সেইটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না। মসলিম ক্ষমতাসীন দল গুলা সাথে জোট করে ফিলিস্তিন, সিরিয়া দখল করার নীল নকশা নিয়ে বসে আছে সেইটা কী মানবাধিকারের লংঘনে পড়ে না
    Total Reply(0) Reply
  • Md Asmaul ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৯ এএম says : 0
    এই ঘটনার পেছনে আমাদের পাশের দেশের হাত থাকলে থাকতেও পারে কিন্তু আমার মতে চীনের ঋণের জালে বাংলাদেশ কে আর জরানো ঠিক হবে না কারণ চীনের ঋণের জালে যে দেশ জরিয়েছে সে দেশকে চীন আজীবন গোলাম করে রেখেছে উদহারণ হিসাবে বলা যায় পাকিস্তান, মায়ারমান, আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশ, সে দিক দিয়ে আমেরিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক ভালো, সে দিক দিয়ে আমেরিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন করে না, তাই এখন বাংলাদেশ কে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সাথে নতুন করে সম্পর্ক ভালো করা উচিৎ আমার মতে , আর না হলে এমন অবরোধ আরো আসতে পারে সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নও দিতে পারে আমেরিকার সাথে তাল মিলিয়ে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন