Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অবিলম্বে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা সাকল্যে চারজন। এর মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ছুটিতে রয়েছেন সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। ফলে কার্যত বিচারপতির সংখ্যা হয়েছে তিন। আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা এত কম, ১৯৭২ সাল ছাড়া আর কখনো হয়নি। ওই বছর প্রধান বিচারপতিসহ তিনজনকে নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো হয়। ২০০৯ সালে এ বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জন। এটাই এযাবৎ সর্বোচ্চসংখ্যক। এরপর থেকে বিচারপতির সংখ্যা কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পাঁচে এসে দাঁড়ায়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গত ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যান, এরপর দ্বিতীয় সিনিয়র বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। বিচারপতির সংখ্যা কমে গিয়ে হয় চার। তাদেরও একজন ছুটিতে। এমতাবস্থায় তিনজন বিচারপতি নিয়ে আপিল বিভাগে বিচারিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনঞ্জিল মোরসেদ ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, তিনজন বিচারপতির মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে বাদ রেখে দুইজনকে দিয়ে বেঞ্চ গঠন করলে হবে না। কারণ, হাইকোর্টের যে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে, আপিল বিভাগের কমপক্ষে তিনজনের বেঞ্চে তার শুনানি হতে হবে। আপিল বিভাগে অবিলম্বে বিচারপতি নিয়োগ না দিলে বহু মামলার শুনানি গ্রহণ সম্ভব হবে না। এক সময় আপিল বিভাগে আপিলের সংখ্যা কম ছিল। বিচারপতি যে কয়জনই ছিলেন, তাদের দিয়েই বিচারিক কার্যক্রম চালানো সম্ভবপর হয়েছে। কালক্রমে আপিলের সংখ্যা বেড়েছে। এ সংখ্যা এখন প্রায় ১৭ হাজার। এত বিপুল সংখ্যক মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি তরান্বিত করতে নিয়মিত দুটি তো বটেই, দরকারে তিনটি বেঞ্চ গঠনের মতো বিচারপতির সংখ্যা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে আইনবেত্তা ও পর্যবেক্ষকগণ।

আমাদের বিচার বিভাগের সর্বশীর্ষে রয়েছে আপিল বিভাগ। বিচারিক আদালত ও উচ্চ আদালত ঘুরে যখন কোনো মামলা আপিল বিভাগে আসে তখন দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এরপরও নানা কারণে আপিল বিভাগে মামলার শুনানি ও নিষ্পতিতে অনেক সময় অতিবাহিত হয়। এটা বিচারপ্রার্থীর জন্য কতটা কষ্টকর, বিড়ম্বনাকর সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য আমাদের বিচারপ্রক্রিয়াটাই দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ। চূড়ান্ত বিচারের জন্য বিচারপ্রার্থীকে বছরের পর পর, যুগের পর যুগ অপেক্ষা করতে হয়। নিম্ন আদালত থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত আদালতসমূহে মামলার অসম্ভব ও অস্বাভাবিক জট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘতা ও বিচারে বিলম্ব। বলা হয়ে থাকে, বিলম্বিত বিচার বিচার না পাওয়ার শামিল। আমাদের দেশেই একথাটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। ন্যূনতম সময়ে বিচারপ্রার্থীর বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে বিচারপ্রক্রিয়ার সময়সীমাকে কমিয়ে আনতে হবে এবং বিলম্বিত বিচার নিরুৎসাহিত করতে হবে। বিচারপক্রিয়াকে আরও সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ করা যায় কিনা, সেটা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর বিচারে বিলম্ব রুখতে বিচারক ও আইনজীবীদের ভূমিকা নিতে হবে। বিচারকালে সময় নেয়া ও দেয়ার বিষয়টি যত কম হয়, বিচার ততই দ্রুতায়িত হতে পারে। বিচারক ও আইনজীবীদের উচ্চ দায়িত্বশীলতাই এটা নিশ্চিত করতে পারে।

নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত কত মামলা জমা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া মুশকিল। বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় যেসব পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যেতে হয়। লাখে লাখে মামলা বিচারের অপেক্ষায় পড়ে আছে। বিচারপ্রার্থীদের অনিশ্চিত অপেক্ষা, হয়রানি-পেরেশানি ও অর্থনাশের বিষয়- এ থেকে সম্যক উপলব্ধি করা যায়। এসব অপেক্ষামান বা বিচারাধীন মামলার বিচার দ্রুত করতে হলে আইন সংস্কার, আদালত অঙ্গনের পরিবেশ উন্নয়ন ও অনিয়ম-দুর্নীতি রোধের পাশাপাশি বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আদালত ও বেঞ্চের সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে হবে। আশার কথা, নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাকে দেয়া সংবর্ধনায় অত্যন্ত ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, সুপ্রিমকোর্টের সব শাখার অনিয়ম-দুর্নীতি তিনি রুখবেন, কোনো কম্প্রোমাইজ করবেন না। অনিয়মকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। মামলাজট নিরসনে তিনি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নিম্ন আদালতে মামলাজটের অবসান এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় সচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার জন্য আট বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের প্রধান করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। তার দুর্নীতিবিরোধী দৃঢ় অবস্থান এবং মামলাজট দূর করার অঙ্গীকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এই সঙ্গে অবশ্যই বিচারপতি-বিচারকদের সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু আপিল বিভাগে নয়, অধঃস্তন বিভিন্ন আদালতে বিচারকের সংখ্যা কম রয়েছে। এ সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার মাধ্যমে মামলাজট কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করবো, সর্বাগ্রে, কালবিলম্ব না করে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আপিল বিভাগ

১০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন