পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে। ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রেসিডেন্টের সংলাপ চলছে। সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষণ বা ইতিবাচক মনোভাব এখনো দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধানে আইনগত রূপরেখার কথা বলা হলেও সে আইন এখনো প্রণয়ন করা হয়নি। বিকল্প হিসেবে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসেন এবং তাদের প্রস্তাব অনুসারে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। বিগত দুইটি নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়া গঠিত হয়েছিল। সেই দু’টি নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দু’টি জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলেও তা রাতের আঁধারের নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত হয়। এসব নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।
দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা, মানবাধিকার, আইনের শাসনসহ কাক্সিক্ষত মৌলিক বিষয়গুলো এখন সারাবিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ আন্তজার্তিক সংস্থা ও ফোরামগুলোতে উল্লেখিত বিষয়গুলোর অবনমন নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব বিষয়ের সাথে নির্বাচন ব্যবস্থাও যুক্ত রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো গেলে দেশের সামগ্রিক অবস্থা ও ভাবমর্যাদার উন্নয়ন সম্ভব। বিগত এক দশকে সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকে আশাব্যঞ্জক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার ও সুশাসনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে এগুলোর নিম্নগামিতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রভাবশালী ও উন্নয়নে অংশীদার দেশগুলোও এসব বিষয় এখন আমলে নিচ্ছে। এতে দেশ এক ধরনের চাপে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অগ্রসরমান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পড়া অসম্ভব কিছু নয়। এসব ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মুক্তবাজার অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় কোনো দেশই স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়। রফতানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিশ্বের ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকারের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে, তখন তা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সতর্ক ও সচেতন হওয়া বাঞ্চনীয়। আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায়ভার বহনের সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা, তা এখন গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। এ বিবেচনায়, একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট যে সংলাপ শুরু করেছেন তা যথাযথভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রায় দুই বছর বাকি। এর মধ্যে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সরকার ও বিরোধীদলের ইতিবাচক মনোভাব ও রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আশা করা যায় না। সেক্ষেত্রে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার প্রশ্নে প্রেসিডেন্টের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত হলেও, এ থেকে সরকার ও রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলোর পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা অসম্ভব কিছু নয়। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বৃহত্তম রাজনৈতিক বিরোধীদল ও অন্যান্য দল সংলাপে সাড়া না দিলেও সময় ফুরিয়ে যায়নি। সরকার এবং বিরোধীদলগুলো এই সংলাপকে পারস্পরিক দূরত্ব, অনাস্থা ও বিভেদ কমিয়ে আনার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। দেশের মানুষ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মতো মেরুদন্ডহীন ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন দেখতে চায় না। একাদশ জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনাররা দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেনি। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। চারজন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে মাহবুব তালুকদারকে বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে কথা বলতে দেখা গেলেও, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেননি। তাদের এই ব্যর্থতা অমার্জনীয়। সার্বিকভাবে পুরো নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ অভিজ্ঞতার আলোকে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তার সাংবিধানিক দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্টের সংলাপকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। এটা সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। এ সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।