মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে বৃহত্তম সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর লাগাতার হামলা, খুন, পুড়িয়ে হত্যার ঢেউয়ের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়েরে ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর ক্রিসমাস উদযাপন ব্যাহত করা হয়, যিশুর মূর্তি ভাংচুর করা হয় এবং ভারতের খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের ওপর লাগাতার আক্রমণের মধ্যে সান্তা ক্লজের মূর্তি পোড়ানো হয়।
ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ খ্রিষ্টান সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতার মধ্যে বড়দিনের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানকে বিজেপিসহ হিন্দু ডানপন্থী দলগুলো লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তাদের অভিযোগ যে, খ্রিষ্টানদে উৎসবগুলোকে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। সা¤প্রতিক বছরগুলিতে খ্রিষ্টানরা ক্রিসমাসের চারপাশে নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে, তবে এ বছর আক্রমণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীর সদস্যরা মিশনারি-নেতৃত্বাধীন স্কুলের বাইরে সান্তা ক্লজের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় এবং খ্রিষ্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে বড়দিন উদযাপনের জন্য লোকেদের আকৃষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত করে।
প্রতিবাদের নেতৃত্বদানকারী ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলোর একটি বজরং দলের আঞ্চলিক সাধারণ সম্পাদক অজ্জু চৌহান বলেছেন ‘ডিসেম্বর এলেই খ্রিষ্টান মিশনারিরা বড়দিন, সান্তা ক্লজ এবং নববর্ষের নামে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা সান্তা ক্লজের কাছে উপহার বিতরণ করে এবং তাদের খ্রিষ্টান ধর্মে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে শিশুদের আকৃষ্ট করে’।
আসামে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক গেরুয়া রঙের কাপড় পরিহিত দু’জন প্রতিবাদকারী ক্রিসমাসের রাতে একটি প্রেসবিটারিয়ান গির্জায় প্রবেশ করে এবং সমস্ত হিন্দুদের ভবনটি ছেড়ে যাওয়ার দাবিতে কর্মকান্ডকে ব্যাহত করে।
ব্যাঘাতের সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে একজন পুরুষ বলেছেন, ‘শুধু খ্রিষ্টানরা বড়দিন উদযাপন করুক’। ‘আমরা হিন্দু ছেলে-মেয়েদের ক্রিসমাস উদযাপনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে, এটা আমাদের অনুভ‚তিতে আঘাত করে। তারা গির্জায় পোশাক পরে এবং সবাই মেরি ক্রিসমাস গায়। আমাদের ধর্ম রক্ষা হবে কী করে?’ এরপর পুলিশ এর সঙ্গে জড়িত দুই যুবককে গ্রেফতার করে।
বড়দিনের প্রাক্কালে হরিয়ানা রাজ্যে পতৌদির একটি স্কুলে একটি সন্ধ্যা উদযাপন একটি ডানপন্থী হিন্দু জাগ্রত গোষ্ঠীর সদস্যদের কারণে ব্যাহত হয়েছিল। ‘জয় শ্রী রাম’ এর মতো স্লোগান দিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে তিনি দাবি করেন যে, উৎসব অনুষ্ঠানকে, যাতে ক্রিসমাস গান এবং নাচ এবং বাইবেলের শিক্ষাগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল, ‘একটি ধর্মীয় ধর্মান্তরের অংশ হিসাবে’ ব্যবহার করা হয়েছিল। ক্রিসমাস উদযাপনের ছদ্মবেশে এবং অভিযোগ করে যে, তারা ‘খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার জন্য নাটক ও বক্তৃতার মাধ্যমে শিশুদের মগজ ধোলাই করছে’। একই রাজ্যে, ক্রিসমাসের একদিন পরে যিশুর একটি মূর্তি ভাংচুর করা হয় এবং আম্বালার চার্চ অফ দ্য হলি রিডিমার ভাংচুর করা হয়।
উত্তর প্রদেশের মাতৃধাম আশ্রমে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত একটি ক্রিসমাস ইভেন্টও একটি হিন্দু জাগ্রত দলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল যারা বাইরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়েছিল যেমন ‘ধর্মান্তর বন্ধ কর’ এবং ‘মিশনারী মুর্দাবাদ, যার অর্থ মিশনারীদের মৃত্যু হোক’।
স্থানীয় মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় আশ্রমের একজন পুরোহিত ফাদার আনন্দ বলেছেন যে, বিক্ষোভ সা¤প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে খ্রিষ্টানদের ক্রমবর্ধমান আক্রমণের একটি চিহ্ন, কারণ হিন্দুদের জোর করে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ ব্যাপক হয়ে উঠেছে। সারা ভারতে খ্রিষ্টান হিষ্টিরিয়া বাড়তে শুরু করেছে।
আনন্দ বলেন, ‘যা ঘটছে তার একটি প্রতীক এটি, কারণ এই লোকেদের দায়মুক্তি রয়েছে এবং তারা উত্তেজনা সৃষ্টি করে’। ‘প্রতি রোববার খ্রিষ্টানদের জন্য, বিশেষ করে ছোট চার্চগুলোর জন্য একটি সন্ত্রাস ও মানসিক আঘাতের দিন’।
ক্রিসমাস আক্রমণগুলো হল খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনাগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ যা ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের অধীনে ভারতের অ-হিন্দু সংখ্যালঘুদের, যেমন মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের প্রতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ক্রমবর্ধমান পরিবেশের অংশ।
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে খ্রিষ্টানদের ওপর হামলা বেড়েই চলেছে। পার্সকিউশন রিলিফ সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে অপরাধ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সা¤প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খ্রিষ্টান মিশনারিরা তাদের বাইবেল পুড়িয়ে দিয়েছে এবং খ্রিষ্টান স্কুলগুলো ডানপন্থী দলগুলোর কারণে ব্যাহত হয়েছে। তারা অভিযোগ করে যে খ্রিষ্টানরা হিন্দুদের অর্থ ও উপহার দিয়ে ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করছে। ছত্তিশগড়ে বিজেপি কথিত জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ইস্যু তুলে কয়েক ডজন সমাবেশ করেছে। একই রাজ্যে বেশ কিছু যাজককে সহিংসভাবে আক্রমণ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য এখন অনেক গির্জার পরিষেবা গোপনে পরিচালনা করতে হচ্ছে।
চলতি মাসে কর্ণাটক রাজ্য সরকার একটি বিতর্কিত ‘ধর্মান্তর বিরোধী’ আইন পাস করা সর্বশেষ সরকার হয়েছে। যদিও এটি স্পষ্টভাবে খ্রিষ্টানদের উল্লেখ করে না, তবে ‘অবৈধ ধর্মান্তর’-এর বিরুদ্ধে এর বিধান অন্যান্য রাজ্যে খ্রিষ্টান পাদ্রীদের লক্ষ্য করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এবং রাজ্যটিতে ইতোমধ্যে এ বছর ৩৯ জন হেট ক্রাইমের শিকার হয়েছে। অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে ভারত জুড়ে খ্রিষ্টানদের ওপর ৩শ’রও বেশি হামলা নথিভুক্ত হয়েছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, ইয়াহু নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।