Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে মুসলিম গণহত্যার ডাক!

ভারতীয় সন্ন্যাসীদের ভাইরাল ভিডিও ঘিরে নিন্দার ঝড়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ভারতের বেশ কয়েকটি উগ্র-ডানপন্থী গোষ্ঠীর নেতারা দেশের সংখ্যালঘুদের জাতিগত নির্মূলের আহ্বান জানিয়েছেন, বিশেষ করে সাম্প্রতিক তিন দিনের সমাবেশে দেশটির ২০ কোটি শক্তিশালী মুসলিম জনসংখ্যাকে লক্ষ্য করে। বেশ কয়েকটি ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
দ্য কুইন্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, উত্তরাখণ্ডের তীর্থস্থান শহর হরিদ্বারে ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হিন্দুত্ব নেতা ইয়াতি নরসিংহানন্দ ‘ঘৃণাত্মক বক্তৃতা কনক্লেভ’-এর আয়োজন করেছিল, যেখানে সংখ্যালঘুদের হত্যা এবং তাদের ধর্মীয় স্থানগুলোতে আক্রমণ করার একাধিক আহ্বান করা হয়।

প্রতিবেদনে নরসিংহানন্দকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘অর্থনৈতিক বয়কট কাজ করবে না। হিন্দু গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের আপডেট করতে হবে। শুধু মঞ্চেই তলোয়ার ভালো দেখায়। এ যুদ্ধে যারা ভালো অস্ত্র নিয়ে জয়ী হবে’।
দ্য প্রিন্টের অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরসিংহানন্দের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

‘মিয়ানমারের মতো, আমাদের পুলিশ, আমাদের রাজনীতিবিদ, আমাদের সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি হিন্দুকে অবশ্যই অস্ত্র তুলে নিতে হবে এবং একটি নিরাপদ অভিযান (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) পরিচালনা করতে হবে। অন্য কোন বিকল্প নেই’, বলেন হিন্দু রক্ষা সেনার সভাপতি স্বামী প্রবোধানন্দ গিরি। এনডিটিভির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দল হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক সাধ্বী অন্নপূর্ণাও অস্ত্র ও গণহত্যার উসকানিমূলক আহ্বান জানিয়েছেন।

তাকে উদ্ধৃত করে দ্য ওয়্যারে বলা হয়েছে, ‘অস্ত্র ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আপনি যদি তাদের জনসংখ্যা দূর করতে চান তবে তাদের হত্যা করুন। হত্যার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং জেলে যেতে প্রস্তুত থাকুন। এমনকি যদি আমাদের মধ্যে ১০০ জন তাদের (মুসলিম) ২০ লাখকে হত্যা করতে প্রস্তুত হয়, তবে আমরা বিজয়ী হব এবং জেলে যাব’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় নেতা স্বামী আনন্দস্বরূপ মুসলিম রাস্তার বিক্রেতাদের সাথে কীভাবে আচরণ করা উচিত তার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। ‘আমি যে রাস্তায় থাকি, প্রতিদিন সকালে আমি একজন বড় দাড়িওয়ালা মোল্লাকে দেখতে পেতাম এবং আজকাল তারা জাফরান দাড়ি রাখে। এই হরিদ্বার, মহারাজ। এখানে কোন মুসলিম ক্রেতা নেই, তাই তাকে বের করে দাও’ তিনি বলেন।

দ্য ওয়্যার জানিয়েছে যে, বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় এবং বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রী উদিতা ত্যাগীও তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে রাজনৈতিক মদত পেয়েছিল।
তবে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, উপাধ্যায় বলেন: ‘এটি একটি তিন দিনের অনুষ্ঠান ছিল এবং আমি সেখানে একদিনের জন্য ছিলাম, সেই সময় আমি প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য মঞ্চে ছিলাম এবং সংবিধান সম্পর্কে কথা বলেছিলাম। অন্যরা আগে এবং পরে যা বলেছিল আমি, আমি এর জন্য দায়ী নই’।
ঘটনার ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলে বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, তিনি এই ঘটনার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আয়োজক এবং বক্তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে ব্যর্থ হলে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি অভিযোগ করা হবে।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি শাখা অল ইন্ডিয়া প্রফেশনালস কংগ্রেস ‘শহর হরিদ্বারে আয়োজিত তিনদিনের ঘৃণাত্মক বক্তৃতা সম্মেলনে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের গণহত্যামূলক বিবৃতিগুলোকে সম্ভাব্য সবচেয়ে জোরালো ভাষায় নিন্দা করেছে’। তাদের জিজ্ঞাসা, ‘ভারতীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কি নীরব দর্শক হয়ে থাকবে’?
এফআইআরে বলা হয়েছে, ‘ওয়াসিম রিজভি ওরফে জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী এবং অন্যান্যরা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননাকর এবং উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন’। ওয়াসিম রিজভি আগে উত্তরপ্রদেশ শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।

এদিকে হরিদ্বারের ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠায় অবশেষে চারদিন পরে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। হরিদ্বারে আয়োজিত একটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে মুসলিম গণহত্যার ডাক দিয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী নেতৃত্ব। গত চারদিন ধরে এই সমাবেশের বক্তাদের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে এফআইআর দায়ের করে হরিদ্বার পুলিশ। তবে এফআইআরে মাত্র একজনের নাম রয়েছে, যিনি সম্প্রতি মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন।

সমাবেশ থেকে সমস্ত হিন্দু জাতিকে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘সাফাই অভিযান’ শুরুর আহ্বান জানানো হয় হিন্দু নেতৃত্বের পক্ষে। ধর্ম সংসদে হিন্দু রক্ষা সেনা সংগঠনের সভাপতি স্বামী প্রবোধানন্দ গিরি বলেন, এখানকার প্রত্যেক হিন্দু, রাজনীতিবিদ, পুলিশকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাফাই অভিযান শুরু করতে হবে। প্রবোধানন্দ এর আগেও একাধিকবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক মন্তব্য করেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামীর ঘনিষ্ঠ প্রবোধানন্দ। ধর্ম সংসদের অপর এক আয়োজক যতি নরসিংহনন্দ বিশ্বজুড়ে সমস্ত জিহাদিদের হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন। হিন্দু জাতিকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বলেছেন তিনি।

এসব ঘৃণাত্মক বক্তব্য দেশের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। আন্তর্জাতিক টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাসহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন।
হরিদ্বারের ঘটনায় সুর চড়িয়েছেন উত্তপ্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ‘একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে’ অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুললেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘যারা এ ধরনের ঘৃণা ও হিংসা উস্কে দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রকাশ্যে শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার আহ্বান নিন্দনীয়। এ ধরনের কাজ আমাদের দেশের সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে’।

এ অনুষ্ঠানে একাধিক বিজেপি নেতাও উপস্থিত ছিলেন, যেমন অশ্বিনী উপাধ্যায়, বিজেপির মহিলা মোর্চা প্রধান উদিতা ত্যাগী। সূত্র : ডন অনলাইন, বাংলাহান্ট।



 

Show all comments
  • Mulla Tashfin ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
    India will be divided in several parts very soon
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    Why world are silent about this hennies calling ??
    Total Reply(0) Reply
  • Ujjal Hasan ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    India is a biggest terrorist country
    Total Reply(0) Reply
  • Nayeemul ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
    মুসলমানদের বড় ভুল ছিল উপমহাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদেরকে থাকার অনুমতি দেওয়া। হিন্দুরা তাদের অতীত ভুলে গেছে। যখন মোগলরা ভারতে শাসন করেছিল তখন হিন্দুরা ভারতে  বেশি শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করেছিল। মুসলিম শাসকরা সে সময় কোন হিন্দুকে হত্যা বা নির্যাতন করেনি। নিরীহ মুসলমানদের সাথে চরম হিন্দুরা যা করছে তার তুলনায় এখন মনে হচ্ছে এটা তখনকার মুসলমানদের একটি সত্যিকারের ভুল ছিল .......
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafa kamal ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৪৫ এএম says : 0
    ya Allah punish them break their country in pieces.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Azad hossain ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:০৫ এএম says : 0
    India is .... country
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Abdur Raquib ১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:০৫ পিএম says : 0
    ভারতে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ মদদে মুসলিম সহ খ্রিস্টান ধর্মের লোকজনদের হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অনেক যায়গায় হত্যা ও করা হচ্ছে। বিশ্ব মুসলিম নেতাদের উচিৎ জাতিসংঘ বিষয়টি উপস্থাপন করা। তার পাশাপাশি নিজ নিজ দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং হিন্দু মৌলবাদী মোদি ও তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা। মোদি তার দল স্বীকৃত মৌলবাদী এবং খুনি। ভারতের মুসলমানদের একতাবদ্ধ ও সতর্ক থাকা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Rahul Barman ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১৪ পিএম says : 0
    যেখানে যেখানে মুসলিমরা 90℅ উপর সেখানেহিন্দুদের অবস্থা কি হচ্ছে আর হিন্দুরা আগে কখনো হিংসা করে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ