Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে দিনে ৬১ গৃহবধূ কেন আত্মহত্যা করছে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভারতে বিয়ের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীর দৈনন্দিন জীবন সংসারে প্রাত্যহিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সরকারের জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান ব্যুরো- ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ভারতে গত বছর ২২ হাজার ৩৭২ জন গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন।
অর্থাৎ ভারতীয় গৃহবধূদের মধ্যে আত্মহত্যার হার প্রতিদিন গড়ে ৬১ আর মিনিটের হিসাবে প্রতি ২৫ মিনিটে একজন। ভারতে ২০২০ সালে যে মোট এক লাখ ৫৩ হাজার ৫২টি আত্মহত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে - তার মধ্যে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই আত্মহত্যা করেছেন গৃহবধূরা। আর মোট আত্মহত্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি ঘটনায় গৃহবধূরাই আত্মহননের পথে গেছেন। গত বছরের চিত্র কিন্তু কোন ব্যতিক্রম নয়। এনসিআরবি ১৯৯৭ সালে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান সংকলন করতে শুরু করে এবং সেটা তারা করে পেশার ভিত্তিতে। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে ভারতে প্রতিবছর বিশ হাজারের বেশি গৃহবধূ আত্মহত্যা করছেন। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ২৫ হাজার ৯২। রিপোর্টে এধরনের আত্মহত্যার জন্য সবসময়ই দায়ী করা হয়েছে ্রপারিবারিক সমস্যাগ্ধ অথবা ্রবিবাহ সংক্রান্ত সমস্যাকেগ্ধ। কিন্তু আসলেই ঠিক কি কারণে হাজার হাজার গৃহবধূ এভাবে নিজেদের জীবন শেষ করে দিচ্ছেন?

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ ব্যাপক মাত্রার পারিবারিক সহিংসতা। সরকার পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে অংশ নেয়া নারীদের ৩০ শতাংশ বলেছেন, তারা স্বামীদের হাতে নিগ্রহ ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেইসাথে প্রতিদিন জীবনের ঘানি টানা আর সংসারের প্রাত্যহিক শ্রম তাদের দাম্পত্য জীবনকে কঠিন করে তুলছে, সংসারে তাদের জন্য দমবন্ধ করা অবস্থা তৈরি হচ্ছে। ‘নারীরা আসলে অনেক সহনশীল, কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা রয়েছে,’ বলছেন বেনারস শহরের একজন চিকিৎসা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর উষা ভার্মা শ্রীবাস্তব। ‘বেশিরভাগ মেয়েরই ১৮ বছর হবার সাথে সাথেই বিয়ে হয়ে যায়, যেটা বিয়ের আইনগত বয়স। সে স্ত্রী এবং পুত্রবধূ হয়ে শ্বশুর ঘরে যায় আর তার গোটা সময়টা কাটায় ঘরের চার দেয়ালের মাঝে - রান্না, ধোয়ামোছা আর ঘর গৃহস্থালির নানা কাজে।’

‘তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় নানা ধরনের বিধিনিষেধ। ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে তার কিছুই প্রায় থাকে না। থাকে না আর্থিক স্বাধীনতাও - নিজস্ব অর্থ বলতে তার হাত থাকে প্রায় শূন্য। ‘তার শিক্ষা বা ভবিষ্যতের স্বপ্ন সব কিছু তাকে বিসর্জন দিতে হয়। তার আশা আকাক্সক্ষার ধীরে ধীরে অপমৃত্যু শুরু হয়। ফলে হতাশা আর ব্যর্থতার গ্লানি তাকে গ্রাস করতে শুরু করে। তখন তার কাছে শুধু জীবনধারণ একটা যন্ত্রণার মত মনে হয়।’ ডক্টর ভার্মা শ্রীবাস্তব বলছেন, বয়স্ক নারীদের জন্য আত্মহত্যার কারণ কিছুটা ভিন্ন। এদের অনেকেই ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলে একটা শূন্যতায় ভোগেন - যাকে বলা হয় ‘এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম’। অনেকে আবার এই বয়সে এসে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির উপসর্গে ভোগেন, যা নারীর মধ্যে বিষন্নতা তৈরি করে, তার থেকে থেকে কান্না পায়।

কিন্তু আত্মহত্যা ঠেকানো সহজ - বলছেন ডক্টর ভার্মা। ‘আপনি যদি ওই মুহূর্তে কাউকে এক সেকেন্ডের জন্যও বাধা দেন, সে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে আসবে।’ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর সৌমিত্র পাথারে বলছে, এর কারণ হল ভারতীয়দের অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে আত্মহত্যা করে। ‘স্বামী ঘরে ফিরে বউকে মারধর করে আর বউ সে কারণে আত্মঘাতী হয়।’ তিনি বলছেন, বেসরকারি নিরপেক্ষ গবেষণায় দেখা গেছে ভারতে যেসব নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তাদের এক তৃতীয়াংশেরই পারিবারিক জীবনে সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। অথচ, এনসিআরবি সঙ্কলিত তথ্যে আত্মহত্যার কারণ হিসাবে পারিবারিক সহিংসতার কথা উল্লেখই করা হয়নি।
বিশ্বে যত মানুষ আত্মহত্যা করে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত। বিশ্ব ব্যাপী আত্মহত্যার পরিসংখ্যানের এক চতুর্থাংশ হল ভারতীয় পুরুষদের আত্মহত্যার ঘটনা। আর বিশ্বে ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে ভারতীয় নারীদের আত্মহননের হার ৩৬ শতাংশ। ডক্টর সৌমিত্র পাথারে, যিনি মানসিক রোগ ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করেছেন, তিনি বলছেন ভারতে আত্মহত্যার যে সরকারি হিসাব দেয়া হয় তা আসল পরিসংখ্যানের থেকে ব্যাপকভাবে কম এবং এই পরিসংখ্যান সমস্যার ব্যাপকতা বা আসল চিত্র কখনই তুলে ধরে না। ‘মিলিয়ন ডেথ স্টাডি’ নামে জরিপের ফলাফল বা ল্যান্সেট সাময়িকীর জরিপের ফলাফল যদি আপনি দেখেন, দেখবেন বলা হচ্ছে যে ভারতে আত্মহত্যার ঘটনা ৩০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ কম রিপোর্ট করা হয়।

মিলিয়ন ডেথ স্টাডি জরিপটিতে ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২৪ লাখ পরিবারের প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তিনি বলছেন, ‘আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে সমাজে খোলাখুলিভাবে কথা বলা হয় না। বিষয়টি এখনও গোপন রাখার প্রবণতা দেখা যায়, কারণ আত্মহত্যাকে পরিবারের জন্য লজ্জার বিষয় হিসাবে অনেকে দেখেন। গ্রাম এলাকায় ময়না তদন্তের প্রয়োজন থাকে না এবং অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারগুলো পুলিশকে চাপ দেয় আত্মহত্যাকে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হিসাবে নথিভুক্ত করার জন্য। পুলিশের নথিও কখনও যাচাই করা হয় না।’ ভারত যেখানে জাতীয় পর্যায়ে একটা আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশল গড়ে তোলার কাজ করছে, সেখানে তথ্যের সত্যতা ও মানের দিকে নজর দেয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে পাথারে মনে করেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Md Mainul Islam ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    কারণ তাদের স্বামীরা জন্মগতভাবেই মাতাল!! তাদের সামনে মদের বোতল হলে আর কিছু লাগেনা!! পৃথিবীর কম করে হলেও ২০ দেশের মানুষের সাথে উঠাবসার অভিজ্ঞতা হয়েছে, কিন্তু সত্যি বলতে গেলে এদের মত মাতাল পৃথিবীতে আর কোন জাতি আছে বলে আমার মনে হয় না
    Total Reply(0) Reply
  • জাফর আহাম্মেদ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    অথচ সারা বিশ্ব আফগানিস্তানের নারীদের নিয়ে চিন্তিত !!!
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Mehedi ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    যখন বাজারের ব্যাগ খুলে বাজারের জায়গায় মদ দেখে তখন জীবন রেখে আর কি করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Subodh Dey ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব । পূরাতন ভারতীয় সংস্কৃতি ও শিক্ষার পরিবর্তে পশ্চিমি নেগেটিভ ভাবধারা কে গ্রহণ করা অন্যতম কারন ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আসিফ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    এই জন্যই স্টার জলসা আর কালার্স বাংলা চ্যানেল দুইটা বাদ দেয়া দরকার। কয়দিন বাদ আছিলো ভালই ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam Bipu ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    তাহারা আবার আমাদের দেশের গনতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছে !
    Total Reply(0) Reply
  • Rønî Rëzå ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    ভারতীয় সিরিয়াল দেখে আমার কাছে মনে হয় ভারতে পারিবারিক কলহ-বিষয়েই আত্মহত্যা করে বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Rahman ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    মনে হয় যেকোনো ভাবেই নির্জাতিতা হবে অথবা অসহায় এবং বেচে থাকাই কঠিন ছিল বিভিন্ন কারণে
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ariful Islam ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৭ এএম says : 0
    Inspite of being a big country India is one of the religious-blind place in the world. Most of the narrow-minded people live in India. Their culture is reliable for this moral Destruction...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ