বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হিসাব কিতাব শুরু হবার পূর্বে আকাশ হতে অসংখ্য ফিরিশতা অবতরণ করবে ও সকল মানুষকে চতুর্দিক হতে বেষ্টন করে নিবে। তারপর আল্লাহ পাকের আরশে আজীম নামানো হবে। আরশের ওপর আল্লাহ তায়ালার তাজাল্লী প্রকাশ পাবে। সে তাজাল্লীর প্রভাবে সকল সৃষ্ট জীব বেহুঁশ হয়ে যাবে। সকলের পূর্বে নূর নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) জ্ঞান ফিরে পাবেন। তিনি দেখতে পাবেন যে, হযরত মূসা (আ.) আরশে আজীমের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। হয়তো হযরত মূসা (আ.) তুর পর্বতে বেহুঁশ হওয়ার কারণে অত্র দিনের বেহুঁশী থেকে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। অতঃপর সকল প্রাণী জ্ঞান ফিরে পাবে এবং হিসাব কিতাব শুরু হয়ে যাবে। সে বিভীষিকাময় দিনের কথা আল্ কুরআনে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে : (ক) সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার সহধর্মিণী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকের নিজস্ব এক অবস্থা হবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। অনেক মুখমÐল সেদিন হবে আলোকময় সহাস্য ও আনন্দিত। আর অনেক মুখমÐল হবে সেদিন ধূলি ধূসরিত তাদের কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে। (সূরা আবাসা : আয়াত ৩৪-৪১)।
(খ) সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালাবার স্থান কোথায়? না, কোনো আশ্রয়স্থল নেই। সেদিন ঠাঁই হবে তোমার প্রতিপালকের নিকট। (সূরা কিয়ামাহ : আয়াত-১০১২)। (গ) আর আগমন করবেন আপনার প্রতিপালক এমতাবস্থায় যে ফিরিশতাকুল সারিবদ্ধ থাকবে। (সূরা আল ফাজর : আয়াত-২২)। (ঘ) যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য এক ভূপৃষ্ঠে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশসমূহকে এবং লোক সকল পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সমীপে সমুপস্থিত হবে। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত-৪৮)।
হিসাব কিতাব শুরু হওয়ার পূর্বে প্রত্যেককে তার আমলনামা প্রদান করা হবে। আমলনামা এ পদ্ধতিতে বণ্টন করা হবে যে, সকল আমলনামা শূন্যে উড়িয়ে দেয়া হবে। প্রত্যেকের আমলনামা উড়তে উড়তে আপন হতেই তার হাতে গিয়ে পড়বে। অতঃপর তা পড়তে নির্দেশ দেয়া হবে। ডান হাতে আমলনামা আসা সফলতার ও মুক্তির এবং বাম হাতে আমলনামা আসা ব্যর্থতা ও জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শনরূপে বিবেচিত হবে।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) অতঃপর যাদের আমলনামা ডান হাতে প্রদত্ত হবে, সে আনন্দিত হয়ে বলবে : আস, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ। আমার ঈমান ও বিশ্বাস ছিল যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। অনন্তর সে সুউচ্চ জান্নাতে সন্তুষ্টিপূর্ণ জীবনযাপন করবে। তার ফলসমূহ অবনমিত ও হাতের নাগালে থাকবে। জান্নাতীদের বলা হবে যে, বিগত দিনে তোমরা যা করে এসেছিলে তার বিনিময়ে তৃপ্তি সহকারে আহার করো ও পান করো। আর যাকে তার আমলনামা বাম হাতে প্রদত্ত হবে, সে আফসোস করে বলবে, হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা প্রদান করা না হতো এবং যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! যদি আমার মৃত্যুর ফায়সালা হয়ে যেত। আমার ধন সম্পদ আমার কোনো কাজে আসল না। আমার ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে গেল। (সূরা আল হাক্কাহ : আয়াত-১৯-২৯)।
(খ) যার আমলনামা ডান হাতে প্রদত্ত হবে, তার হিসাব অতি সহজ হবে। সে আনন্দ সহকারে পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাবে। আর যাকে আমলনামা পৃষ্ঠ পশ্চাতের দিক হতে দেয়া হবে সে মরণ কামনা করবে। পরিশেষে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা আল ইনশিকাক: আয়াত-৭-১২)।
(গ) যদি তুমি সে সময়ের অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে যখন তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। অনন্তর পলায়নের কোনো সুযোগ থাকবে না। (সূরা-সাবা : আয়াত-৫১)। (ঘ) সেদিন আসার পূর্বে সতর্ক হওয়া উচিত, যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় (বিনিময়) ও বন্ধুত্বের সুযোগ থাকবে না। (সূরা বাকারাহ: আয়াত-২৫৪)।
(ঙ) হযরত আয়েশা (রা.) বলেন : একদা আমার জাহান্নামের কথা স্মরণ হলো। আমি কাঁদতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কাঁদছ কেন? আমি উত্তর দিলাম, আমার জাহান্নামের আগুনের কথা মনে পড়ল, তাই আমি কাঁদছি। আমি নিবেদন করলাম : আপনি কি কিয়ামতের দিন আপনার পরিবার-পরিজনদের কথা স্মরণ করবেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ করতে পারবে না। একটি সময় হলো আমলনামা প্রদানের কাল। যখন বলা হবে, আস, আমলনামা পাঠ করো। সকলেই ব্যস্ত থাকবে যতক্ষণ না জানবে যে, আমলনামা কোন দিক থেকে কোন খানে এসে পড়বে! ডান হাতে না বাম হাতে, না পৃষ্ঠ পশ্চাত দিক হতে। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩০৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।