Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধোঁয়ায় আকাশ আচ্ছন্ন হওয়া কেয়ামতের লক্ষণ

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

আরবী ‘দোখান’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ ধোঁয়া, বা ধূম্র। এই দোখান শব্দটি আল কোরআনে দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা- (ক) ৪১ নং সূরা ফুসসিলাত বা হা-মীম-আসসাজদাহ-এর ১১ নং আয়াতে একবার এসেছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘তারপর তিনি (আল্লাহ) আসমানের প্রতি মনোনিবেশ করলেন, যা ছিল ধোঁয়া। অতঃপর তিনি ওটাকে ও জমিনকে বললেন, তোমরা উভয়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আস? তারা উভয়ে বলল, আমরা অনুগত হয়েই আসলাম।’

(খ) ৪৪ নং সূরা দোখানের ১০ নং আয়াতে একবার ব্যবহৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘অতএব, আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে।’ আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ধোঁয়া সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেঈগণের তিন প্রকার উক্তি বর্ণিত আছে। আসুন এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক।

১। প্রথম উক্তি এই যে, এটা কেয়ামতের অন্যতম আলামত যা কেয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। এই উক্তি করেছেন হজরত আলী (রা.), হজরত ইবনে আব্বাস (রা.), হজরত ইবনে ওমর (রা.) হজরত আবু হুরায়রা (রা.), হজরত হাসান বসরী (রাহ.)। এই উক্তি অনুসারে অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীতে পারমাণবিক যুদ্ধের দামামা বাজতে বেশি দিন বাকি নেই। পৃথিবীর পারমাণবিক শক্তির অধিকারী মোড়লরা যেভাবে পারমাণবিক অস্ত্র-শান দিয়ে চলেছে, এতে এ আশঙ্কা আরও ভারি হয়ে উঠছে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হলে পৃথিবীর আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়বে ও পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসবে। যার নজির দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে পারমাণবিক বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হিরোশিমা ও নাগাসাকির জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে।

২। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এ ভবিষ্যদ্বাণী অতীতে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং এতে মক্কার সে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়ার ফলে মক্কাবাসীদের ওপর আপতিত হয়েছিল। তাদের অনেকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল এবং মৃত জন্তু পর্যন্ত ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছিল। তখন আকাশে বৃষ্টি ও মেঘের পরিবর্তে ধোঁয়া দৃষ্টি গোচর হত। এ উক্তি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখের।

তিনি বলেন, কাফেররা যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করল এবং কুফরিকেই আঁকড়ে ধরল, তখন তিনি তাদের ওপর এই দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ! এদের ওপর হজরত ইউসুফ (আ.)-এর আমলের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। ফলে, কাফেররা ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষে নিপতিত হল। এমন কি তারা অস্থি ও মৃত জন্তু ও ভক্ষণ করতে লাগল। তারা আকাশের দিকে তাকালে ধোঁয়া ছাড়া কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। অপর এক বর্ণনায় আছে, তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তীব্রতায় সে শুধু ধোঁয়ার মতো দেখত। অতঃপর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ আয়াতখানি তেলাওয়াত করলেন।

হজরত হুযায়ফা ইবনে আসীদ (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। আমরা তখন পরস্পর কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন : যতদিন তোমরা ১০টি আলামত না দেখবে, ততদিন কেয়ামত হবে না। (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (২) দোখান তথা ধূম্র। (৩) দাব্বাতুল আরদ (বা বিচিত্র ধরনের প্রাণী)। (৪) ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব। (৫) ঈসা (আ.) এর অবতরণ। (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব। (৭) পূর্বে ভ‚মি ধস। (৮) পশ্চিমে ভ‚মি ধস।

(৯) আরব উপদ্বীপে ভ‚মি ধস। (১০) আদল (বা এডেন) থেকে এক অগ্নি বের হবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ সেখানে রাত্রিযাপন করতে আসবে, অগ্নিও নেমে যাবে। যেখানে দুপুরে বিশ্রামের জন্য আসবে, সেখানে অগ্নি ও থেমে যাবে। (সহিহ মুসলিম : ২৯০১)। এছাড়া কিছু সহিহ ও হাসান হাদিস ও একথা প্রমাণ করে যে, দোখান বা ধূম্র কেয়ামতের ভবিষ্যৎ আলামতগুলোর অন্যতম। আল কোরআনের সুস্পষ্ট বাহ্যিক ভাষা ও একথার সাক্ষ্য প্রদান করে।

৩। তৃতীয় উক্তি এই যে, এখানে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার আকাশে উত্থিত ধূলিকণাকে ধোঁয়া বা ধূম্র বলা হয়েছে। এ উক্তি আবদুর রহমান আরাজ (রাহ.) প্রমুখের ইমাম ইবনে কাসিরের মতে তৃতীয় উক্তিটি অগ্রাহ্য। এর সমর্থনে সহিহ হাদিস পাওয়া যায় না। সে যাই হোক হজরত হুজাইফাতুল ইয়াসান (রা.)-এর বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে, কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে একটি হলো ধোঁয়া, যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যবর্তী স্থানকে ভরে দেবে। তা পৃথিবীতে ৪০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। ফলে মোমিনরা সর্দি বা ঠান্ডাতে আক্রান্ত হবে। আর কাফিররা জ্ঞান ও বিলুপ্তির পর্যায়ে পৌঁছবে। মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তিরমত তাদের মুখ, নাক, কান, চক্ষু ও পায়ুপথ দিয়ে ধূম্র নির্গত হতে থাকবে। (শরহে আকিদায়ে সিফারানিয়্যাহ: ২/১২৮)।

 

 



 

Show all comments
  • Khan M.G. Mostofa ৪ মার্চ, ২০২৩, ৮:৪৮ এএম says : 0
    " ‘অতএব, আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে।’" This is the final day that the whole universe will break down, then this will appear. It will happen when Hajrat Israphil (AS) give the sound from his Singga....when Almighty Allah give the order. The above explanation is not true.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেয়ামত


আরও
আরও পড়ুন