বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুসলিমের ওসিয়ত করার মতো কোনো বিষয় রয়েছে, তার জন্য উচিত নয়, ওসিয়ত অলিখিত অবস্থায় দু’রাত অতিবাহিত করা। (সহিহ বুখারী : ২৭৩৮)।
হাদিসের দাবি হলো, মুসলমানকে তার প্রতিদিনের কাজ-কারবার সাফ রাখতে হবে। কারো সাথে কোনো দেনা-পাওনা থাকলে তা লিখে ওসিয়ত করে রাখবে। একজন মুসলিম পার্থিব জীবনে এমনভাবে থাকবে, যেভাবে একজন সিপাহী সীমান্তচৌকিতে পাহারারত থাকে। যে কোনো মুহূর্তে তার প্রস্থানের নির্দেশ আসুক সে এর জন্য প্রস্তুত থাকে।
এখানে ওসিয়ত সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল উল্লেখ করা মুনাসিব মনে হচ্ছে। এক. ঋণ পরিশোধের ওসিয়ত : যে সকল হক আদায় করা ওয়াজিব তার জন্য ওসিয়ত করাও ওয়াজিব। যেমন, একজন ঋণ নিয়েছে। এখন তার কর্তব্য হলো, এই ওসিয়ত করে রাখা যে, তার সম্পদ থেকে যেন এ ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, ঋণের খবর ঘরের লোকদেরও জানা থাকে না। এমতাবস্থায় তার মৃত্যুর পর জানা না থাকার কারণে কাছের লোকেরাও তা পরিশোধ করতে পারে না। ফলে এ হক তার জিম্মায় থেকেই যায়। ঋণও শোধ হয় না। সেও দায়মুক্ত হতে পারে না।
দুই. নামাজ-রোজার ফিদয়ার ওসিয়ত : কারো জীবনে কোনো নামাজ-রোজা কাযা হয়ে থাকলে জীবদ্দশাতেই তা আদায় করে ফেলা উচিত। খোদানাখাস্তা যদি কাযা আদায়ের সুযোগ না পাওয়া যায় তাহলে এমর্মে ওসিয়ত করে যাওয়া ফরজ যে, আমরা জিম্মায় এত নামাজ, এত রোজা কাযা রয়েছে। এগুলোর ফিদয়া যেন আদায় করা হয়। যদি কেউ এমন ওসিয়ত না করে তাহলে যে কঠিন গুনাহগার হবে।
তিন. জাকাত আদায়ের ওসিয়ত : কারো ওপর কয়েক বছরের জাকাত ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও সে আদায় করেনি। তার কর্তব্য বিগত বছরগুলোর হিসাব করে জাকাত আদায় করা। জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ আদায় করতে না পারলে মৃত্যুর পূর্বে অন্তত ওসিয়ত করে যাবে যে, আমার এ পরিমাণ জাকাত অনাদায়ী রয়েছে। তা যেন আদায় করা হয়। অন্যথায় গুনাহগার হবে।
চার. বদলি হজের ওসিয়ত : কারো ওপর হজ ফরজ হয়েছে। কিন্তু আদায় করতে পারেনি। তার কর্তব্য হলো, বদলি হজের ওসিয়ত করে যাওয়া। ওসিয়ত না করলে দ্বিগুণ গুনাহ হবে। প্রথমত ফরজ আদায় না করার গুনাহ। দ্বিতীয়ত মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত না করে যাওয়ার গুনাহ।
ওসিয়ত পূরণে জীবিতদের করণীয় : জীবিতদের কর্তব্য, মৃতব্যক্তির জায়েয ওসিয়ত পুরা করা। তবে মৃতব্যক্তি কোনো নাজায়েয ওসিয়ত করলে তা পুরা করা হারাম। কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের ওসিয়ত করে গেলে জীবিতদের ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর জন্য মৃতের সমস্ত সম্পত্তির প্রয়োজন হলেও।
কেউ যদি কোনো নেক কাজে সম্পদ ব্যয় করার ওসিয়ত করে যায়; যেমন, আমার সম্পত্তি দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করবে, কোনো মাদরাসায় ব্যয় করবে, কোরআন মাজীদ বিতরণ করবে, বিধবা-এতিমের জন্য এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, এমতাবস্থায় তার কাফন-দাফনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা সম্পন্ন করা জরুরি। ওয়ারিসগণ তা সম্পন্ন না করলে গুনাহগার হবে। তবে এ ওসিয়ত পুরা করতে যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তির প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অতিরিক্তটা ব্যয় করা আবশ্যক নয়। ওয়ারিসগণের ইচ্ছা। চাইলে স্বেচ্ছায় ব্যয় করবে, নইলে না। অবশ্য কোনো ওয়ারিস যদি নাবালেগ হয়, তাহলে তার অংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশের অধিক গ্রহণ করা কোনোভাবেই জায়েয হবে না।
কারো জিম্মায় নামাজ-রোজা, হজ-জাকাত কাযা রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে যদি সে ওসিয়ত করে যায়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে ওসিয়ত পুরা করতে হবে। যদি তা পুরা করতে আরো বেশি সম্পদের প্রয়োজন হয় তাহলে তা পুরা করা যদিও ওয়ারিসদের ওপর ওয়াজিব নয়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিসগণের কর্তব্য, নিজেদের অংশ থেকে তা আদায় করে দেওয়া।
গায়রে ওয়ারিসের জন্য ওসিয়ত করতে হলে : ওয়ারিস নয় এমন কাউকে নিজের সম্পত্তি থেকে কিছু দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ওসিয়ত করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির চার ছেলে। জীবদ্দশায় তার এক ছেলের ইন্তেকাল হয়ে গেছে। বাকি তিন ছেলে তার মৃত্যুর সময় জীবিত ছিল। তো তার মৃত্যুর পর তিন ছেলের মাঝে বণ্টন হবে।
শরীয়তে তার মৃত ছেলে বা মৃত ছেলের সন্তানদের জন্য কোনো অংশ নির্ধারণ করে দেয়নি। এখন এ ব্যক্তি যদি তার মৃত ছেলের সন্তানদেরকে সম্পত্তি থেকে ভাগ দিতে চায়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি থেকে তাদের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে যে, আমার সম্পদের এই পরিমাণ তাদেরকে দেওয়া হবে। তবে কোনো ওয়ারিসের ক্ষেত্রে এরকম ওসিয়ত কার্যকর হবে না। অনুবাদ : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।