Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্নি ও শিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্থায়ী পশ্চিমা মিত্র

ওয়াহাবি : ইসলামের সহিংস রাজনৈতিক সংস্করণ-শেষ পর্ব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

তরুণ আরবরা, যারা সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে তুর্কিদের সহযোগিতা করেছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে তাদের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা তখন নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে আত্মনিবেশ করে।

সেসময় মক্কার আমির এবং শরীফ হুসেইন বিন আলী আল হাশিমি একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তুরস্কের মেসোনিক ইউনিয়নবাদীদের অপছন্দ করতেন, যারা অটোম্যান সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল। তিনি প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের সতর্ক করেন। কিন্তু ইউনিয়নবাদীরা তার কথা শোনেনি। এমনকি, তারা তার বিরুদ্ধে বিরূপ আচরণ করে। এরপর, শরীফ হুসেন তরুণ আরবদের শরণাপন্ন হন এবং তুর্কিদের হাত থেকে আরবকে বাঁচাতে ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেন। এদিকে, ব্রিটেন, যারা অটোম্যান সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করতে চেয়েছিল, তারা ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ আরবের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন করে আসছিল। তারা হুসেইন বিন আলী এবং তার সন্তানদের একটি মহান আরব রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ব্রিটিশ গুপ্তচর টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সকে তাদের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত করে।
ব্রিটেন বিন আলীকে এক হাতে রেখে অন্য হাতে সউদ পরিবারকে ক্ষমতা বসার জন্য প্রস্তুত করছিল। শেক্সপিয়ারের হত্যার পর সউদী উপদেষ্টা হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন জন ফিলবি। লরেন্সের বন্ধু গারট্রুড বেল এবং কর্নেল জেরার্ড লিচম্যানও তাকে সমর্থন করেন। কেমব্রিজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ফিলবি তার পরামর্শদাতা এডওয়ার্ড গ্র্যানভিল ব্রাউনের মাধ্যমে গোয়েন্দাবৃত্তিতে যোগ দেন। তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তা হ্যারল্ড ‘কিম’ ফিলবির পিতা, যিনি পরে কেমব্রিজ ফাইভের একজন হিসাবে বিখ্যাত হয়েছিলেন।
ইবনে সউদ সুন্নি তুর্কিদের ও সুন্নি শরীফ হোসেনকে ঘৃণা করতেন এবং তাদেরকে কাফের বলে গণ্য করতেন। তিনি একবার তার উপদেষ্টা ফিলবিকে বলেছিলেন, ‘আমি মক্কার শরীফ বা মক্কার মুসলিমদের ব্যতীত অন্য মুসলিমদের কন্যা গ্রহণ করতে পারি না, যাদেরকে আমরা মুশরিক বলে মনে করি।’ তিনি তাকে বলেছিলেন যে, খ্রিস্টানরা হযরত ইসহাক (আইজাক) এর বংশধর এবং আরবরা হযরত ইসহাকের ভাই হযরত ইসমাইল (ইশমায়েল) এর থেকে এসেছে। তাই তিনি ফিলবিকে নিজের চাচাতো ভাই বলে মনে করেন। ইবনে সউদের মতে, সুন্নি তুর্কিরা তাতার বংশোদ্ভূত এক পিশাচের বংশধর। যুদ্ধের পর ব্রিটেন হুসেইন বিন আলীর সন্তানদের একটি রাষ্ট্রের শাসনভার পাইয়ে দেয়া সত্তে¡ও তার প্রতি তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ইবনে সউদ, যিনি ব্রিটিশ সমর্থনে মক্কা ও মদিনা দখল করেছিলেন, তাকে ১৯২৬ সালে সউদী আরবের শাসক ঘোষণা করা হয়। ফিলবি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাদশা আবদুল আজিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি আমেরিকান তেল এবং অটোমোবাইল কোম্পানিগুলির মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেন এবং যুদ্ধে তার পরিষেবার জন্য পুরস্কৃত হন।
সউদী আরব প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটেন অন্তরালে চলে যায়, যেমনটি সে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে করেছে এবং আরবে নজরদারির ভার যুক্তরাষ্ট্রকে সঁপে দেয়। এইভাবে, সউদী আরব, যে কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের অর্থায়ণ করে থাকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিত্র হয়ে ওঠে এবং হিলটন সুইটের মতো আকাশচুম্বী ভবন পবিত্র কাবাকে ঘিরে ফেলে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ্। (সমাপ্ত)



 

Show all comments
  • প্রিয়সী ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:২৭ এএম says : 4
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহি বুঝ দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • Jubairal Mahmud ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:২৭ এএম says : 0
    সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • রায়হান ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৩৪ এএম says : 0
    সারাবিশ্বে মুসলমানরা এত নির্যাতিত হচ্ছে আর আমরা পরে আছি শিয়া সুন্নি ওয়াহাবী নিয়ে
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৩৫ এএম says : 0
    এসব কিছু ভুলে গিয়ে এখন সময় এসেছে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৩৮ এএম says : 0
    আমাদের মুসলমানদের মধ্যে এই দলাদলি থাকার কারণেই আজ আমরা সারা বিশ্বে মার খাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৪১ এএম says : 0
    পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে; তখন তিনি তোমার হৃদয় প্রীতির বাঁধনে বেঁধে দিলেন এবং তোমরা তারই অপার অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা হেদায়াত লাভ কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৪১ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মানুষকে জীবন পরিচালনায় সব ধরনের মতভেদ, অনৈক্য আর পরস্পরের মাঝে বিভক্তি থেকে বিরত থেকে আল্লাহর রুজ্জু তথা পথে স্থির থাকার কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জসিম ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৪২ এএম says : 0
    পবিত্র কুরআনের শিক্ষার ওপর আমল করলেই আমাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকবে। জাতীয় ও ধর্মীয় সব ধরনের ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আর এ ঐক্য-ই আমাদের এক উম্মতে পরিণত হবার নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে। যার ফলে আমরা এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আরব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ