মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নির্দেশ সত্তে¡ও গাড়ি না থামানোয় নাগাল্যান্ডের মন জেলায় খনি শ্রমিকদের জঙ্গি ভেবে গুলি করেছে সেনা- সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল গত মঙ্গলবারই। নির্দেশ না মানলেই কি এভাবে গুলি করে মারতে পারে কমান্ডোরা? নাগাল্যান্ড পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এবার উঠে এল, ওখানে কোনো চেক পোস্টই ছিল না যে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। গুলি চলেছে খনি শ্রমিকদের গাড়ির সামনে থেকে। ধাওয়া করলে গুলি লাগত গাড়ির পিছন থেকে। দ্বিতীয় রহস্য, সেনা কমান্ডোরা নাগাল্যান্ডে অভিযানে গিয়েছিল আসামের গাড়ি নিয়ে, নম্বর প্লেট পাল্টে! কিন্তু কেন?
স্পষ্টতই লোকসভায় দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও সেনাবাহিনীর দাবির ঠিক উল্টো কথা বলছে নাগাল্যান্ড পুলিশ ও প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্ট। যেখানে বলা হয়েছে, গ্রামবাসীদের তরফে প্রথমে কোনো আক্রমণের ঘটনাই ঘটেনি। বলার পরেও না থামায় কয়লা খনি থেকে আসা শ্রমিকদের গাড়ির দিকে গুলি চালানোর যে তথ্য লোকসভায় দিয়েছিলেন শাহ, সেই তত্ত¡ও খারিজ করেছে পুলিশের সরেজমিন রিপোর্ট। সেনার তরফে দাবি করা হয়েছিল, বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া জঙ্গি গতিবিধির খবর পেয়েই ওটিং গ্রামে হানা দেন কমান্ডোরা। কিন্তু নাগাল্যান্ডের ডিজিপি জন লংকুমার ও নাগাল্যান্ডের কমিশনার রোভিলাউও মোর ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিয়ে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে, ‘কমান্ডোরা গ্রামবাসীদের পরিচয় জানার চেষ্টা না করেই এলোপাথাড়ি গুলি করে মারেন তাঁদের। ওই এলাকায় জঙ্গি গতিবিধির কোনো খবরই ছিল না’।
তদন্ত রিপোর্টে পুলিশের দাবি, ‘পিছু ধাওয়া করে গুলি চালানো হলে গাড়ির পিছনে গুলি লাগত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পিক-আপ ভ্যানের উইন্ডস্ক্রিন ভেদ করেছে অধিকাংশ গুলি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, গুলি সামনে থেকেই চালানো হচ্ছিল’। আরও অভিযোগ, ‘ঘটনাস্থলে কমান্ডোদের ফেলে পালানো গাড়ির নম্বরপ্লেট পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আদতে আসামের গাড়ি ভাড়া নিয়ে উপরে ভুয়ো নম্বরপ্লেট লাগিয়ে কমান্ডোরা ঢুকেছিলেন’। ঘটনার পরে কমান্ডোদের ব্যবহার করা একটি স্করপিয়ো, একটি বোলেরো, একটি উইংগার গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আরো একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জওয়ানরা জখম দুই গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আসামে পালান।
নাগাল্যান্ড পুলিশ তিন আইপিএসকে নিয়ে বিশেষ তদন্ত দল গড়েছে। তাদের এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কমান্ডোদের ফেলে যাওয়া ও তাদের পুড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সব সরঞ্জাম সংগ্রহ করে থানায় আনা হয়েছে। নিহত সেনার ট্যাভর-২১ রাইফেলও উদ্ধার হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কমান্ডোরা খনি শ্রমিকদের উপরে মেশিনগান, রাইফেল, পিস্তল সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই গুলি চালিয়েছিলেন। ছোড়া হয়েছিল রাইফেল গ্রেনেডও।
ওটিংয়ের ঘটনা নিয়ে মন জেলায় সাত দিনব্যাপী শোক পালন চলছে। গতকালও জেলায় বন্ধ পালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে কন্যাক সংগঠন ঘোষণা করেছে জেলায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আর কোনো রকম সহযোগিতা করা হবে না। জেলার কোথাও সামরিক বাহিনীকে এই কদিন টহল দিতেও মানা করা হয়েছে। যেহেতু আসাম রাইফেলস স্থানীয় মানুষকে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে, তাই অবিলম্বে মন থেকে সরে যেতে হবে ২৭ নম্বর আসাম রাইফেলসকে। তুলে নিতে হবে তাদের ঘাঁটি। স্থানীয় মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতি বছর ৪ ও ৫ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডে কালো দিবস পালন হবে।
অন্যদিকে, এনএসসিএন-এর জঙ্গি বাহিনী ‘নাগা আর্মি’-র ‘মেজর জেনারেল’ লাংনেই কন্যাক হুমকি দিয়েছেন, ‘আজ হোক বা কাল, নিরীহ নাগাদের রক্তপাতের বদলা নেওয়া হবেই।”
নিহতদের পোশাক বদলে ফেলা হয়েছিল?
পরিচয় লুকোতে নাগাল্যান্ডে সেনা জওয়ানদের গুলিতে নিহতদের পোশাক কি বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল? এক প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের পরিবারের তরফে এমনই অভিযোগ করা হয়েছে। ওটিং গ্রামের বাসিন্দা ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী কিপওয়াং কোনিয়াকের অভিযোগ, গুলির শব্দ শুনে তারা কয়েক জন গ্রাম থেকে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখেন, সেনা জওয়ানরা কয়েক জন নিহতের পোশাক বদলে ফেলেছে। নিহতদের কয়েক জনকে অন্য বস্ত্রে ঢাকা দিয়েছে। শোমওয়াং নামে এক নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তারা গিয়ে দেখেন তাঁদের স্বজন অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় নিথর পড়ে রয়েছেন মাটিতে।
নাগাল্যান্ডের মন জেলায় শনিবার সেনা জওয়ানদের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। পরে রোববার হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরো এক জনের। মৃত্যু হয় এক জওয়ানেরও। ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনীর ভ্যান ছুটে বেরিয়ে যাওয়ার ছবি যিনি ভিডিয়োয় তুলে রেখেছিলেন মানপেই নামের সেই গ্রামবাসী জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন লাশগুলো ভ্যানে রাখা হয়েছে। সেগুলোকে অন্য বস্ত্রে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, আউটলুক ইন্ডিয়া, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।