Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘স্পেস ফিভার’ এ আক্রান্ত ইউরোপ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ পিএম

জটিল স্যাটেলাইটের আকার ও উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রায় সাধারণ কম্পিউটারের মতো হয়ে ওঠায় মহাকাশ মুনাফার বড় উৎস হয়ে উঠেছে৷ সেইসঙ্গে সস্তায় রকেট উৎক্ষেপণের উদ্যোগও বাড়ছে৷ অনেক নতুন কোম্পানি মহাকাশের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠছে৷ নরওয়ের আন্ডোইয়া স্পেস সংস্থার রজার এনোকসেন মনে করেন, আগামী কয়েক দশকে মহাকাশ শিল্পে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে৷

মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা, জলবায়ু পরিবর্তনের পর্যবেক্ষণের মতো কার্যকলাপ বাড়বে৷ কিন্তু কে সেই আয়ের ভাগীদার হবে, কার ব্যবসাই বা লাটে উঠবে? এ ক্ষেত্রে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকেই সেই সাফল্যে ভাগ বসাতে চান৷ এই শিল্পশাখার বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাকাশ ক্ষেত্রের বাজার অদূর ভবিষ্যতে এক লাখ কোটি ইউরোর মাত্রা অতিক্রম করতে চলেছে৷

জার্মানিতে তিনটি স্টার্টআপ কোম্পানি মহাকাশে পাঠানোর উপযোগী ছোট রকেট তৈরি করতে চায়৷ গোটা বিশ্বে প্রায় একশোটি কোম্পানি সেই উদ্যোগে শামিল হয়েছে৷ জার্মানির দক্ষিণের রকেট ফ্যাক্টরি নামের কোম্পানি অপেক্ষাকৃত সস্তায় রকেট পাঠিয়ে বাজার দখল করতে চাইছে৷ গ্রাহকদের উৎক্ষেপণ-প্রতি ৩০ লাখ ইউরো গুনতে হবে৷ সংস্থার কর্ণধার স্টেফান ব্রিশেংক মনে করেন, ‘‘মাসে একটি উৎক্ষেপণ হলেই আমরা মুনাফা করতে পারবো৷ তবে আমরা সপ্তাহে একটি উৎক্ষেপণ করতে চাই৷ আমরা চাই, পুরো প্রক্রিয়া যেন অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রের মতো সহজ ও আড়ম্বরহীন হয়ে উঠুক৷''

কঠিন পরিবেশে রকেটের পরীক্ষা চলছে৷ সেটির মধ্যে অত্যন্ত শীতল ও তরল নাইট্রোজেন ভরা হয়েছে৷ একমাত্র এভাবেই ইঞ্জিনিয়াররা ওয়েল্ডিং করা অংশগুলির সহ্যশক্তি যাচাই করতে পারেন এবং ঠিক কতটা চাপের মুখে সেটি ভেঙে পড়বে, তাও বুঝতে পারেন৷ দেখা গেল, সেই মোড়ক প্রত্যাশা ছাপিয়ে আরও চাপ সহ্য করতে পারে৷

হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার বাজারে সেটা কি একটা মাইলফলক? বিজনেস কনসাল্টেন্ট হিসেবে মারিয়া ইয়ানকে বলেন, ‘‘উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে জার্মানি এখনো বাকিদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে৷ আমাদের তিনটি মাইক্রোলঞ্চার রয়েছে৷ সেগুলি থেকে এখনো কোনো উৎক্ষেপণ হয়নি এবং এখনো প্রায় কোনো আয় হয়নি৷ গোটা বিশ্বে অতিরিক্ত সংখ্যায় লঞ্চ কোম্পানি বর্তমান চাহিদা পূরণ করায় আমাদের এই হাল৷''

স্যাটেলাইট প্রযুক্তি একেবারে ভিন্ন এক ক্ষেত্র৷ বেশ কিছু জার্মান কোম্পানি এ ক্ষেত্রেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তবে রকেটের মতো স্যাটেলাইটের জগতেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা কম নয়৷ অ্যানালিস্ট হিসেবে নিনা স্টারি বলেন, ‘‘আমাদের মতে, নিজস্ব বিজনেস মডেল ও পণ্যের মাধ্যমে সত্যি একটা সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি৷ অর্থাৎ কোনো ব্যবহারিক সমস্যা দূর করতে হবে৷ মহাকাশ থেকে তথ্য আসছে বা ‘স্পেস সলিউশন' প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, তা গ্রাহকের কাছে জরুরি নয়৷ তার অর্থনৈতিক সুবিধা কী, সেটা স্পষ্ট করে দিতে হবে৷''

‘এস ফোর' নামের জার্মান স্টার্টআপ কোম্পানি সত্যি সেই সুবিধা তুলে ধরতে চায়৷ এই কোম্পানি ক্ষুদ্র প্রযুক্তির মাধ্যমে মিনি স্যাটেলাইট আরও ‘বুদ্ধিমান' করে তুলছে৷ এই কিউবটি কোনো স্যাটেলাইটকে মহাকাশে সুনির্দিষ্ট অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে৷ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শিলিং মনে করেন, ‘‘মিনিয়েচার এই ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে৷ স্যাটেলাইটের আকার ছোট হচ্ছে, কিন্তু গুনাগুন কমছে না৷ ছোট আকারের কারণে একই দামে আরও বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হচ্ছে৷''

কম্পিউটারের মতোই আগে থেকে তৈরি কম্পোনেন্ট বা যন্ত্রাংশ দিয়ে ছোট স্যাটেলাইট অ্যাসেম্বেল করা বা জোড়া দেওয়া হয়৷ বড় আকারে এমন স্যাটেলাইট তৈরি করা যায়, উপাদানগুলি দ্রত বদলে ফেলা যায়৷ ফলে এমন স্যাটেলাইট তৈরির কাজ অনেক সহজ হয়ে উঠেছে৷ এস-ফোর কোম্পানি এরই মধ্যে মিনি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে৷ সেগুলি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে স্বাধীনভাবে পারস্পরিক সমন্বয় করতে পারে৷ যেমন আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে এমন স্যাটেলাইট আকাশে ছাইয়ের মানচিত্র তৈরি করতে পারে, যা বিমান চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷

গোটা ইউরোপে এমন ‘স্পেস ফিভার’ চলছে৷ চলতি বছর নরওয়েতে ছোট রকেটের জন্য এক উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে৷ সেটাই হবে ইউরোপের ভূখণ্ডে প্রথম এমন কেন্দ্র৷ জার্মানির রকেট ফ্যাক্টরিও সেখান থেকে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে৷ কিন্তু নরওয়েতে এখনো নির্মাণ কাজ শুরুই হয় নি৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাকাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ