গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
মানুষকে কষ্ট দেয়া ও নিপীড়ন করা একটি ধ্বংসাত্মক নিন্দনীয় আচরণ। কাবিরা গুনাহ। বড় অন্যায় কাজ। সব ধর্মেই মানুষকে কষ্ট দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ ইরশাদ করেন, আর তোমাদের মধ্যে যে অত্যাচার করে (মানুষকে কষ্ট দেয়) আমি তাকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাবো। (সূরা ফুরকান, আয়াত নং ১৯)। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার জামাতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। জায়গার অভাবে মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার বয়ানে বলেন, উত্তম চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ করে। চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন না করে ঈমানের সৌন্দর্য অর্জন করা সম্ভব নয়। নিজে যেমন হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি অন্যকেও হিদায়াতের দাওয়াত দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে মহান আল্লাাহ তাঁর রাসূল (সা.) কে সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সূরা : ক্বলাম, আয়াত ৪)।
ইরশাদ হচ্ছে, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সঙ্গে সে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করো। যে ব্যক্তি তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। শুধু এতটুকেই ক্ষ্যান্ত নয়। আরো নির্দেশ আসছে, এরপর যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে, তোমার প্রতি জুলুম করে তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ করো। তার সাথে ভালো আচরণ করো। কথাবার্তা ও মৌখিক আচরণে একজন মু’মিনকে কিভাবে শালীন হতে হবে সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলো।’ (বাকারা:৮৩)। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন,‘তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সাদকার সওয়াব হয়ে যায়’। (তিরমিযী)। অনেক হাদীসে নবী করীম (সা.) উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জন এবং খারাপ চরিত্র বর্জনের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। ঈমানের উচ্চ আসনে আসীন হওয়ার জন্য উন্নত নৈতিক চরিত্র ও আচার ব্যবহারের ন্যায় আর কোন আমল নেই। তিনি ইরশাদ করেন‘ ঈমানদার হচ্ছে ঐ লোক যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সে লোক সর্বোত্তম যে তাদের স্ত্রী পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণে অভ্যস্ত। (আহমদ-তিরমিযী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন,‘আল্লাহ ভীতি ও উত্তম চরিত্র’। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন,‘মুখ (বচন) ও গোপন অঙ্গ (যিনা-ব্যভিচার)’। (তিরমিযী)। শুধু তাই নয়, উত্তম চরিত্র ও আচার ব্যবহার এতো উত্তম আমল যে, চরিত্রবান মু’মিনরাই পরকালে নবী করীম (সা.) এর একান্ত সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পাবেন। তিনি ইরশাদ করেন,‘তোমাদের মধ্যে ঐসব লোকেরাই আমার কাছে সবচেযে বেশি প্রিয় এবং ক্বিয়ামতের দিন আমার অতি নিকটে আসন পাবে, যাদের চরিত্র ও আচার ব্যবহার উত্তম’। (তিরমিযী)। সুতরাং উত্তম চরিত্র,নীতি নৈতিকতার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি জীবন, সমাজিক ও পারিবারিক জীবনকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে তুলি। যাতে করে একটি সুখি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে ওঠে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন , মানুষকে কষ্ট দেয়া ও নিপীড়ন করা একটি ধ্বংসাত্মক নিন্দনীয় আচরণ। কাবিরা গুনাহ। বড় অন্যায় কাজ। সব ধর্মেই মানুষকে কষ্ট দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম ধর্মে বান্দা মা’ফ না করলে এর শাস্তি জাহান্নাম। দুঃখের বিষয় মুসলিম হয়েও একজন অন্যজনকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয়। কখনও ইচ্ছায়, কখনও অনিচ্ছায়, কখনও কথায়, কাজে কর্মে গালি দিয়ে গীবত করে খোঁটা দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, লেখনির মাধ্যমে, ফেইসবুক টুইটারে স্ট্যাটাস দিয়ে, জুলুম নির্যাতন মারামারি কাটাকাটি সন্ত্রাসী রাহজানি, খুন গুম, হত্যা, ধোঁকা প্রতারণা, কখনও রাস্তা বন্ধ, সম্পদ জবর দখল করা ছাড়াও আরও হাজারও উপায়ে এখন মানুষকে কষ্ট দেয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কিছু প্রভাবশালীদের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ তো দূরের কথা টু শব্দটিও করতে সাহস পায়না। নিরুপায় হয়ে কষ্টের গøানি সহ্য করছে । কেউবা অতিষ্ট হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আবার কেউবা মাজলুম হয়ে মহান রবের দরবারে রোনাজারি করতে করতে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। অথচ মানুষকে কষ্ট দেয়ার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। চরম খারাপ। পরকালে তো আছেই, কখনও কখনও কারও কারও ক্ষেত্রে দুনিয়াতেই এর পরিণাম ভোগ করতে দেখা যায়। (আল্লাহ সকলকে মা’ফ করেন)। খতিব বলেন, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কষ্ট দেয়ার নিন্দা করত: কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্যে পাপের বোঝা বহন করে। (তার পরিণতি জাহান্নাম)। (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৫৮)। যে ব্যক্তি অহেতুক অযথা মানুষকে কষ্ট দেয়, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কেউ নেই। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা যা বলো তারা তা মিথ্যারোপ করে। অতএব, তোমরা আজাব ফেরাতে পারবে না এবং কোনো সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে অত্যাচার করে (মানুষকে কষ্ট দেয়) আমি তাকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাবো। (সূরা ফুরকান, আয়াত নং ১৯)। রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হয় আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তিনি তাকে অপমান করে ছাড়বেন, যদিও সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে। (তিরমিযি শরীফ,হাদিস নং ২০৩২)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, সেই ব্যক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে (বোখারী শরীফ হাদিস নং ১০)। আল্লাহ সকলকে কবুল করুন। আমিন। মঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে ওয়াদা করেছেন, যারা মজবুত ও দৃঢ় ঈমানের অধিকারি হবে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে দৃঢ় থাকার উপর সাহায্য করবেন ও তৌফিক দান করবেন। দুনিয়ার যত কষ্ট ক্লেশ বা জুলুম নির্যাতন বা বিপদ আপদ তাদেরকে একচুল পরিমাণ ও ঈমান থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। সূরা ইবরাহীম। পৃথিবীর ইতিহাসে এর লক্ষ কোটি প্রমাণ রয়েছে। হযরত বিল্লাল রা., খাব্বাব, আম্মার রা.সহ আনসার মুহাজির এবং পরবর্তী অসংখ্য মুসলিম সব কিছু বিসর্জন দিতে হলেও ঈমান বিসর্জন দেয়নি। তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা ঈমানের দৌলতের উপর দুনিয়া আখেরাত তথা আখেরাতে প্রথম ঘাঁটি কবরে বরযখে কালেমার উপর দৃঢ় অবস্থানে রাখবেন। তারা ঈমানের দৌলত নিয়ে কালেমা সংগে নিয়েই পরকালে উপস্থিত হবে। আর কবরে ফেরেশতারা তিনটি প্রশ্ন করার সাথে সাথেই তারা সঠিক জবাব দিবে এবং প্রথম ঘাঁটিতেই তাদের মুমিন হিসেবে সীলমোহর পড়ে যাবে। তাদের পরবর্তী ঘাঁটিগুলোতে আর কোন সমস্যা হবে না। বরং কবরের জগৎ থেকেই তারা জান্নাতের সুখ অনুভব করতে থাকবে। পক্ষান্তরে জালেম, মুনাফিকরা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য পাবে না বিধায় তাদের ঈমান দৃঢ় থাকবে না আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে দৃঢ় রাখবেন না। দূর্বল ঈমানদার বা মুনাফিকরা কবরের আযাব দেখতে পায়না বা বিশ্বাস করে না। কিন্ত তারাতো অনেক কিছুই না দেখেও বিশ্বাস করে শুধু পরকালের আযাব বিশ্বাস করে না, সেজন্য তাদেরকে আল্লাহ তায়ালাও দৃঢ় রাখবেন না। তারা সাহায্যহীন হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে দৃঢ় ও মজবুত ঈমানদার হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।