পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
আফগানিস্তান ইস্যুতে দুই দিনের ট্রয়কা প্লাস বৈঠক গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি, পররাষ্ট্র সচিব সোহেল মাহমুদ, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমেদ খান, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি মুহাম্মদ সাদিক, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিশেষ প্রতিনিধি ও আফগানিস্তানের উপ-সহকারী সচিব টমাস ওয়েস্ট, আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিশেষ দূত জমির কাবুলভ এবং আফগানিস্তান বিষয়ক চীনের বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াও জিং।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইকা প্লাসের দুই দিনের বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে কোরেশি বলেন, আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক পতন বা সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এবং ইতিবাচক সম্পর্ক অনুসরণ করা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেউই গৃহযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। এবং অস্থিতিশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটি অর্থনৈতিক পতন। সবাই চায় আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে সক্রিয় সন্ত্রাসী উপাদানগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা হোক এবং আমরা সবাই একটি নতুন শরণার্থী সঙ্কট রোধ করতে চাই। আফগানিস্তানে শান্তি শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয়, বাকি বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তান আজ অর্থনৈতিক পতনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক তহবিল কমে যাওয়ার সাথে সাথে বেতন দেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও বাদ পড়ে যাচ্ছে। সেখানকার লোকেরা একটি গুরুতর খরার প্রভাবের মধ্যে ভুগছে। অতএব, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা জোরদার করা অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পৌর সেবার খাতগুলিতে জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন। কুরেশি বলেন, নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় আফগানিস্তানের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় পাকিস্তানের সরাসরি ভ‚মিকা রয়েছে। একই ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সাথে, আমরা আফগানিস্তানের প্রতিটি জাতিগত স¤প্রদায়কে দেশের চ‚ড়ান্ত ভাগ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, তিনি বলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে পাকিস্তান ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের লোকদের সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তানের কৃষকদের সহায়তার জন্য পচনশীল খাদ্য আইটেমের উপর শুল্ক মওকুফ, মানবিক সহায়তার বিধান, পথচারীদের চলাচলের সুবিধা, কোভিড-১৯ এর সময় সীমান্ত খোলা রাখা এবং মেডিকেল কেসের জন্য আগমনের ভিসা।’
আলাদাভাবে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে ‘আফগানিস্তানের (জনগণের) মুখোমুখি হওয়া একটি গুরুতর মানবিক সঙ্কট এড়াতে তার সম্মিলিত দায়িত্ব পালন করার’ আহŸান জানিয়েছেন। একটি টুইট বার্তায় এই মতামত প্রকাশ করে, তিনি যোগ করেছেন যে, তার সরকার আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কিকে আশ্বস্ত করেছে, যিনি পাকিস্তানে তিন দিনের সফরে আছেন, ‘আফগানিস্তানে সমস্ত সম্ভাব্য মানবিক সহায়তা’ দেয়ার বিষয়ে। ‘পাকিস্তান সবসময় তাদের প্রয়োজনের সময়ে আফগান জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে... আমরা আফগান জনগণকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, জরুরী চিকিৎসা সরবরাহ এবং শীতকালীন আশ্রয়কেন্দ্র পাঠাচ্ছি। আমরা সমস্ত আফগানদের বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করব’, তিনি টুইট করেছেন।
এর আগে গত বুধবার আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বে দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিলেন আট রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। আমন্ত্রণ পেয়েও সেই বৈঠকে অংশ নেয়নি পাকিস্তান ও চীন। তবে ইসলামাবাদে আফগানিস্তান বিষয়ক পাকিস্তানের বিশেষ দূত মহম্মদ সাদেক খানের আমন্ত্রণে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন চীন, রাশিয়া ও আমেরিকার প্রতিনিধিরা। বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। আমির খানের নেতৃত্বে তালেবানের প্রতিনিধি দল ১০ নভেম্বর পাকিস্তানে গিয়েছে। বৈঠকে অর্থনীতি, শরণার্থী সমস্যা থেকে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হবে। ক‚টনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আঞ্চলিক দেশগুলো ভারতের থেকে পাকিস্তানকে যে কাবুল প্রশ্নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সেটা স্পষ্ট। তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনার জন্য পাকিস্তান ছাড়া যে গতি নেই, এই তত্ত¡ আবারও সামনে চলে আসছে। ক‚টনীতি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতের ভাল লাগুক বা না লাগুক, পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান বদলানো যাবে না। আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য এবং সংযোগের জন্য পাকিস্তান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। এই কারণে আফগানিস্তানের বাণিজ্য করতে শুধু চীন নয়, আমেরিকা এবং উজবেকিস্তানও মধ্যবর্তী চুক্তি করে থাকে ইসলামাবাদের সঙ্গেই। সূত্র : ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।