নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে জেন্টলম্যান’স গেম অথবা ভদ্রলোকের খেলা। বর্তমান সময়ে মাঠে আগ্রাসন দেখানোর যুগেও এই ঐতিহ্য সত্যিকার অর্থে যারা ধরে রেখেছে, সেই দলটির নাম নিউজিল্যান্ড। আরও একবার তারা প্রমাণ রেখেছে কেন তাদের স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়ে তাবৎ দুনিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই। তাই তো দলকে ফাইনালে তোলার ‘নায়ক’ হওয়ার আগেই অনেকের চোখে ‘নায়ক’ বনে যান ড্যারিল মিচেল।
গতপরশু রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তখন রোমাঞ্চের সব রসদ প্রস্তুত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে হাতে ৬ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের চাই ১৮ বলে ৩৪ রান। অর্থাৎ প্রতিটি বলই তখন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি রানই। আর সেসময়ই স্পোর্টসম্যানশিপের দারুণ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মিচেল।
পেন্ডুলামের মতো ম্যাচের ভাগ্য যখন এদিক-ওদিক হেলছে, তখন ১৮তম ওভার করতে বল হাতে তুলে নেন ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। তার প্রথম বলটি সোজা ব্যাটে খেলেন স্ট্রাইকে থাকা জিমি নিশাম। রশিদ যান বল থামাতে, নন-স্ট্রাইকে থাকা মিচেল যান রান নিতে। দুজন দুজনের গতিপথে এসে পড়ায় বল ধরা সম্ভব হয়নি রশিদের পক্ষে। বরং সেটা চলে যায় লং-অনের দিকে।
সিঙ্গেল নেওয়ার তখন সুবর্ণ সুযোগ। বলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় রানের ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সুযোগটা হয়তো লুফে নিত যেকোনো দলই। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা অন্য ধাতুতে গড়া। মিচেল অনুভব করেন যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রশিদের সামনে এগিয়ে গিয়ে তাকে বল থামাতে বাধা দিয়েছেন। তাই সিঙ্গেল নেওয়া থেকে বিরত থাকেন! অথচ নিশাম ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিলেন ক্রিজের মাঝপথে। হাত উঁচিয়ে তাকে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন মিচেল।
এই রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনাল ম্যাচে স্কাই স্পোর্টসের হয়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন। মিচেল যখন রান নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন তিনি বলে ওঠেন, ‘এটাই হলো নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের স্বরূপ, আসলেই এটা। খুব সহজেই এক রান নেওয়া যেত। কিন্তু নন-স্ট্রাইকার (মিচেল) বললেন, “না, আমি রশিদের গতিপথে বাধা দিয়েছিলাম।” যদি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে সংক্ষেপে বোঝাতে হয়, তাহলে এটাই হলো সেটা।’
চলমান বিশ্বকাপের আগে কখনোই ওপেন না করা মিচেলই কিউইদের ইংল্যান্ড বধের রাতে ম্যাচসেরা। সমান ৪টি করে চার ও ছয়ে ৪৭ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪১ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পর নিজের শেষ ২০ রান তিনি আনেন মাত্র ৬ বলে। কিউইদের উইনিং শটটিও আসে মিচেলের ব্যাট থেকে। ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকসের ফুলটস ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড হেরে গেলে মিচেলের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো জোর তর্ক-বিতর্ক জমত। তবে তেমনটা ঘটেনি। মিচেলই ঘটতে দেননি। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে দলকে ফাইনালে তোলার পর মিচেল নিজেও জানান, বিতর্ক এড়াতেই ঐ রান নেননি তিনি। ৩০ বছর বয়সী মিচেল বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, আমি সম্ভবত কিছুটা হলেও রশিদের গতিপথে বাধা হয়ে গিয়েছিলাম। আমি এমন কেউ হতে চাইনি যে কিনা অল্পস্বল্প হলেও বিতর্ক তৈরি করতে পারে। তাই আমি (সিঙ্গেল নেওয়া সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েও) খুশি ছিলাম।’
নিউজিল্যান্ড যদি ম্যাচটা হেরে যেত, তাহলে মিচেলের সিদ্ধান্ত নিয়ে জমতে পারত আলোচনা-সমালোচনা। তেমনটা না ঘটায় খুশি তিনি, ‘আমরা সবাই উদার মনোভাবে সঙ্গে এই খেলাটা খেলি এবং আমি অনুভব করেছি যে এটা সম্ভবত আমারই দোষ ছিল। তাই রান নেওয়ার চেষ্টা করিনি। (সেটা পেছনে ফেলে) নতুন করে শুরু করা এবং চালিয়ে যাওয়াটা আরও দারুণ ছিল। আমি খুশি যে এটা (রান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত) কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি (ম্যাচের ফলে)।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।