Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদির ব্যর্থতা ঢাকতে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করছে সংবাদমাধ্যমই

করোনা এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কট

আল জাজিরা | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভারতে যখন করোনা মহামারি আঘাত হানে, তখন এটি দেশটির সমস্ত ক্ষেত্রের বিশেষ করে বিশাল গণমাধ্যম ক্ষেত্র, স্বাস্থ্যখাত, ধর্মীয় সহনশীলতাসহ সমস্ত ক্ষেত্রের গভীর ত্রুটিগুলি সামনে নিয়ে আসে। তবে বিজেপি সরকারের এসব ত্রুটি ধামাচাপা দিতে ভিন্ন দিকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণামূলক ও বিকৃত তথ্য প্রচার এবং তা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে প্রাথমিক কাজটি সংবাদমাধ্যমই করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আল জাজিরাকে সাক্ষাতকার দেয়া প্রখ্যাত কিছু ভারতীয় সংবাদিক।

ভারতে প্রায় ৪শ’টি নিউজ চ্যানেল রয়েছে। দেশটিতে ২০টি ভিন্ন ভাষায় সংবাদ সম্প্রচার করা হয়। ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি প্রায় হাজার খানেক সংবাদপত্র রয়েছে। গত এক দশকে ভারতের সামজিক ও গণমাধ্যমগুলোর আগের চেয়ে আরো মেরুকরণ এবং রাজনীতিকরণ হয়েছে, যা চলমান করোনা মহামারির মধ্যে ভারতের মানবিক বিপর্যয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সংবাদ মাধ্যমের স্বকীয়তা ধরে রাখার ব্যর্থতার বিষয়ে নিউজলন্ড্রির নির্বাহী সম্পাদক মনীষা পান্ডে বলেছেন, ‘সংবাদ মাধ্যমের যে একটি বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত, তা হল, সরকারের জবাবদিহিতা। আমাদের সাংবাদিকদের আরও তদন্ত নির্ভর হওয়া উচিত ছিল, দেশের স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থ্যক্যের দিকে আরো বেশি নজর দেয়া উচিত ছিল। তবে দিল্লীভিত্তিক সিংহভাগ সংবাদমাধ্যম, যাদের অসংখ্য দর্শক এবং অনুসরণকারী রয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে সরকারের তোষামোদকারী হিসেবে কাজ করেছে।’
ভারতে করোনা মহামারি শুধু ভারতের স্বাস্থ্যখাতের সমস্যগুলোকেই উন্মুক্ত করেনি, সেই সাথে জনকল্যাণের প্রতি বিজেপি সরকারের উদাসীনতা, ধর্মান্ধতা এবং তথ্য গোপনের প্রবৃত্তিকেও উন্মুক্ত করেছে। ভারতের মূল সমস্যাগুলোর থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে তারা রগরগে চটকদার খবর, বিকৃত তথ্য এবং মুসলিমবিদ্বেষ ব্যবহার করেছে। ইন্ডিয়া স্পেন্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক গোবিন্দরাজ ইথিরাজ বলেন, ‘তথ্য বিকৃতি একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

২০১৪ সালে ক্ষমতায় বসার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন একটিও সংবাদ বিবৃতি দেননি যেখানে তিনি সংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে গিয়েছেন। বিপরীতে, মোদির সরকারের সমালোচনার কারণে বহু সংবাদকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মীকে আটকও করা হয়েছে। সরকার ফেসবুক. ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মোদি-বিরুদ্ধ সমালোচনামূলক পোস্ট ব্লক করার নির্দেশনাও দেয়।

দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারদারাজন বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক যে, মিডিয়ার একটি বিশাল অংশ করোনা মহামারিকে সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতার দিকে নিয়ে যেতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তারা মুসলিমদেরকে করোনা সংক্রমণের বাহক হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। এটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং অপরাধমূলক। এটি ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রাথমিক ব্যর্থতা।’

ভারদারাজন বলেন, এবং তারপরেই রয়েছে সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন, লাখ লাখ কর্মীর আটকে পড়া ও দেশজুড়ে করোনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা এবং সচেতনতামূলক সংবাদ প্রচার। সরকারের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণামূলক ও বিকৃত তথ্য প্রচার এবং তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার প্রাথমিক কাজটি কিছু সংবাদ মাধ্যমই করেছে। সূত্র : আল-জাজিরা।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
    আল জাজিরার রিপোর্টটি ১০০০ভাগ সত্যি
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৫৪ এএম says : 0
    ভারতকে ডুবানোর জন্য নরেন্দ্র মোদিই যথেষ্ট
    Total Reply(0) Reply
  • প্রিয়সী ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৫৬ এএম says : 0
    কোন দেশের সংবাদমাধ্যমের এই ধরনের কাজ করা একদম ঠিক না
    Total Reply(0) Reply
  • নওরিন ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৫৭ এএম says : 0
    সংবাদ মাধ্যমের যে একটি বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত, তা হল, সরকারের জবাবদিহিতা। সাংবাদিকদের আরও তদন্ত নির্ভর হওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৫৮ এএম says : 0
    গত এক দশকে ভারতের সামজিক ও গণমাধ্যমগুলোর আগের চেয়ে আরো মেরুকরণ এবং রাজনীতিকরণ হয়েছে, যা চলমান করোনা মহামারির মধ্যে ভারতের মানবিক বিপর্যয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • বাশীরুদ্দীন আদনান ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৩:০১ এএম says : 0
    ইসলামবিদ্বেষ ভারতের প্রভাবশালীদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
    সংবাদমাধ্যম শাসকগোষ্টির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ