Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু, পোল্যান্ডে ফের বিতর্কে গর্ভপাত আইন

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:২৬ পিএম

এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড জুড়ে নতুন করে শুরু হল গর্ভপাত আইন নিয়ে বিতর্ক। গর্ভপাত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ না হলে মহিলা আজ বেঁচে থাকতেন। এমনই অভিযোগ হাজার হাজার পোল্যান্ডবাসীর।

জানা গিয়েছে, প্রসবের সময় মৃত্যু হয়েছে ৩০ বছরের ইসাবেলার। ২২ সপ্তাহ গর্ভধারণের পরই ইসাবেলা জানতে পারেন তার শিশুর গর্ভেই মৃত্যু হয়েছে। তা সত্ত্বেও মেলেনি গর্ভপাতের অনুমতি। ফলে চিকিৎসকদের চোখের সামনেই প্রসবের সময় মৃত শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন ইসাবেলা।

গত জানুয়ারি মাসেই হাজার হাজার পোল্যান্ডবাসী নেমেছিলেন রাস্তায়। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দেয়া গর্ভপাত বিরোধী আইনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তারা। গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হোক, এই দাবি পোল্যান্ডে চিরকালীন। গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই প্রথম প্রসবের সময় মৃত্যু হল এক মহিলার।

জানা গিয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে তার ওয়াটার ব্রেক করে যেতেই তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছন ইসাবেলা। এর আগেও একাধিকবার আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে ধরা পড়ে গর্ভস্থ ভ্রুণের ত্রুটি। তার পরিবারের অভিযোগ, আলট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে শিশুটির ওজন ৪৮৫ গ্রাম। প্রসব হলেও শিশুটি মৃতই জন্ম নিত। তা সত্ত্বেও গর্ভপাত আইনের গেঁরোয় নিরুপায় হয়ে বসে থাকতে হয়েছে তাদের। বসে বসে দেখতে হল ইসাবেলা সেপটিক শকে আক্রান্ত হলেন। এমনটাই জানিয়েছে ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরা।

পারিবারিক আইনজীবী জানিয়েছে, আলট্রাসোনোগ্রাপিতেই ধরা পড়ে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা স্থির করেন, সিজার না করলে ইসাবেলাকে বাঁচানো কঠিন। এরপরই শেপটিক শকে চলে যান তিনি। চোখের সামনে তার হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায়। তার মতে, এই মৃত্যু গর্ভপাত আইনের ফলাফল। ইসাবেলার মা বারবারা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এটা মিথ্যা। হাসপাতালে আমার মেয়ের সঙ্গে কী ভাবে এমনটা হতে পারে? মেয়ে তো সেখানে চিকিৎসকদের কাছে সাহায্যের জন্যই গিয়েছিল।’

হাসপাতালের তরফে যদিও বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ইসাবেলার মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু, হাসপাতালকেও দেশের আইন মেনেই কাজ করতে হয়। যদিও ইসাবেলার মৃত্যুর সময় দায়িত্বে থাকা দুই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেছে দক্ষিণ পোল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালটি।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড হতে শুরু করে ‘আর একজনও নয়’। গর্ভপাত আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পোল্যান্ড। যদিও প্রশাসনের দাবি আইনের জন্য এই মৃত্যু নয়। হাসপাতালের গাফিলতিতে ইসাবেলার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের।

প্রধানমন্ত্রী মেটেউজ মোরাউইকি বলেন, ‘একজন মায়ের জীবন-মৃত্যু নিয়ে সংশয় থাকলে চিকিৎসকদের সেইমতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এরসঙ্গে গর্ভপাত আইনের কোনও সম্পর্ক নেই।’ তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, গর্ভপাত আইনের ভয় দেখিয়ে চিকিৎসকদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে মায়ের জীবন বিপন্ন হলেও গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না চিকিৎসকরা। সূত্র: রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ