মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতীয় আদালত প্রায় চার সপ্তাহ পর বলিউডের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে জামিন দিয়েছে। দু’বার আরিয়ানের জামিন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধী শিবির দাবি করতে থাকেন যে, মোদির সরকারের নিয়ন্ত্রণে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরিয়ানের আটক ও গ্রেফতার ‘অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনি’ এবং তার অপরাধ প্রমানিত না হওয়া সত্ত্বেও তাকে দোষী সাব্যস্ত গণহত্যাকারীদের সাথে একটি জনাকীর্ণ কারাগারে রাখা হয়েছিল।
প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আরিয়ানের উকিল মুকুল রোহতগি বোম্বে হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন যে, অভিযানের সময় আরিয়ানের কাছে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি এবং কর্তৃপক্ষ তাকে মাদক সেবন পরীক্ষায় পজিটিভ টেস্ট করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সমালোচকরা দাবি করেছেন যে, আরিয়ান খানের প্রতি কঠোর আচরণের অর্থ ছিল, তার মেগাস্টার বাবা এবং দেশের সমস্ত সংখ্যালঘুদের স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেয়া যে, ভারতের প্রকৃত ক্ষমতা বলিউডের নয়, মোদির সরকারের হাতে।
সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যে, ২০১৫ সালের একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিশ্বজুড়ে ৩.৫ বিলিয়ন ভক্তের বলিউডের মেগাস্টার শাহরুখ ভারতের ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিষয়ে যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, সেটির কারণেই তার ২৩ বছর বয়সী ছেলে আরিয়াকে মোদির রোষাণলের শিকার হতে হয়েছে। ১৪ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার দেশকে শাসন করার জন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বছর পর সেই সাক্ষাতকারটিতে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘ধর্মীয় সহনশীলতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।’
সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদনে রাজনীতিবিদ কিশোর তিওয়ারি উল্লেখ করেছেন যে, মাদক কর্মকর্তা যিনি আরিয়ান খানকে গ্রেফতার এবং তদন্তের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলিউডের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন। এ মামলাকে জোরদার করার জন্য সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে উঠেছে। চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক অঙ্কুর পাঠক বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় মুসলিম সুপারস্টারের সন্তানকে তুচ্ছ কারণে আটকে রাখার সময় যে ধরনের বার্তা পাঠানো হয়েছে তা স্পষ্টতঃ তার যদি সুযোগ না থাকে, তাহলে বাকিদের কীভাবে থাকবে?
চলচ্চিত্র সমালোচক সুচরিতা ত্যাগী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শাহরুখ খান নীরব হয়ে গেছেন। কিন্তু বার্তাটি মনে হচ্ছে: বাগে আসুন বা আমরা আপনাকে জব্দ করব। বলিউড এখন দশ বছর আগের মতো নয় যখন তারকারা প্রকাশ্যে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতেন। এমনকি সাধারণ ইনস্টাগ্রাম প্রভাব বিস্তারকারীরাও এখন সরকার সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন। শাহরুখের ক্ষেত্রে অপরাধটি হ’ল, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার, কিন্তু সবচেয়ে বড় মুসলিম সুপারস্টারও।
বলিউডের বাইরে মুসলিম ভারতীয়দের বক্তব্যে আত্ম-দমন এখন স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার প্রখ্যাত মুসলিম কৌতুক অভিনেতা মুনাওয়ার ফারুকী ‘হিন্দু বিরোধী’ হিসিবে অভিহিত হওয়ার এবং হত্যা-হুমকি পাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো তার অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। এ সপ্তাহে একটি ক্রিকেট ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক জয় উদযাপন করার অপরাধে এক মুসলিম শিক্ষক এবং তিন কাশ্মীরি ছাত্রকে নির্যাতন ও গ্রেফতার করা হয়।
বলিউড এবং এর অবিস্মরণীয় প্রভাব বিস্তারকারী শক্তিশালী মুসলিম তারকাদের দেশ ভারত দেশে প্রতি বছর বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক চলচ্চিত্র তৈরি করত। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে, আরিয়ান খানের গ্রেফতার একটি উদাহরণ মাত্র। অন্যান্য মুসলিম মেগাস্টাররাও মোদি সরকারের অযাচিত চাপের সম্মুখীন হয়েছেন। তার রাজনীতিবিদরা প্রভাবশালী মুসলিম অভিনেতাদের ক্রমবর্ধমানভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন হিন্দুত্ব মতাদর্শের বিরুদ্ধচারণ না করার জন্য।
শাহরুখ খান এবং সালমান খানের পাশাপাশি বলিউড সুপারস্টার ট্রিনিটির অন্যতম আমির খান সম্প্রতি আসন্ন দীপাবলি উৎসবে আতশবাজি ফাটানো বন্ধে লোকেদের উৎসাহিত করার জন্য একটি বিজ্ঞাপন করে মোদি সরকার এভং হিন্দুত্ববাদীদের রোষের শিকার হয়েছেন। শাসক দলের একজন বিধায়ক তার বিরুদ্ধে হিন্দুদের মধ্যে ‘অশান্তি সৃষ্টির’ অভিযোগ করেছেন।
এ বছরের শুরুতে মন্ত্রী এবং বিধায়করা একইভাবে অ্যামাজন প্রাইমের একটি ভিডিও সিরিজ ‘তাণ্ডব’কে হিন্দু-বিরোধী বলে অভিযুক্ত করেন। সিরিজের মুসলিম প্রধান অভিনেতা সাইফ আলী খান এবং এর মুসলিম পরিচালক আলী আব্বাস জাফরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ফিল্ম এবং জেন্ডার স্টাডিজে ডক্টরেট করা আরতি সিং বলেছেন, ‘যখন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শুরু হয়েছিল, এটি সর্বদাই বহুসংস্কৃতি ছিল। সমস্ত গান এবং নাচের সাথে, বিনোদনের সাথে সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরতে বলিউডের ক্ষমতা অতুলনীয় ছিল। বলিউড সবসময়ই ভারতের বহুত্ববাদকে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি এটিকে স্বৈরাচারী সরকারের সফট টার্গেট করেছে।’
সিংয়ের মতে, বলিউডে মুসলিম সুপারস্টারদের প্রভাবের ওপর মোদির আক্রমণের প্রকৃত সত্য এই যে, তিনি ভারতকে একটি মিশ্র সংস্কৃতি হিসাবে দেখেন না এবং তারপরে এ সত্যটি রয়েছে যে, মোদির মতাদর্শী সঙ্ঘ পরিবার (হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের অংশ) আন্তঃধর্মীয় বিবাহকেও ঘৃণা করে। সিং বলেন, ‘শাহরুখ একজন হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেছেন এবং আমির খানের প্রাক্তন স্ত্রীরাও হিন্দু ছিলেন, সালমান খানের মাও তাই।’
হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসক দল বিজেপির নিয়ন্ত্রিত প্রায় সমস্ত রাজ্যই একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে আন্তঃধর্মীয় বিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে যে, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মহিলাদের প্রলুব্ধ করতে এবং অবশেষে তাদের ধর্মান্তরিত করার জন্য মাঠে নেমেছে। চলচ্চিত্র সমালোচক এবং সাংবাদিক অঙ্কুর পাঠকের মতে, বলিউড এবং মুসলিম সুপাস্টারদের ভূমিকা সর্বদা একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে একত্রিত রাখার ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য ছিল যাকে সংঘ পরিবার এখন নিরঙ্কুশ হিন্দুত্ববাদের প্রতি হুমকি হিসাবে দেখে। সূত্র : ভাইস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।