নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
১৯ বলে ৭ ছক্কা! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার পাকিস্তানের জার্সিতে আসিফ আলীর ‘ছক্কাবৃষ্টি’র ছোট্ট প্রমাণ। অথচ এই আসিফই একসময় ছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীদের হাসি-তামাশার পাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ট্রল করার প্রধান ‘আকর্ষণ’ ছিলেন তিনি। ভাগ্যও তার সহায় ছিল না।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা নিশ্চয়ই মনে আছে? ওয়াহাব রিয়াজের বলে থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ক্যাচটা নিতে পারেননি আসিফ। সে সময় গ্যালারিতে এক ভক্ত উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বিরক্ত মুখে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন আসিফ আলীর দিকে। টেকো মাথার সেই পাকিস্তানি ভক্তের ছবি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। বারবার ভাইরাল হয়েছেন সেই খেলোয়াড়ও। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষেক হলেও তিনি আন্তর্জাতিক মানের নন, মানসিকভাবে দুর্বল, শুধু ক্যাচ ছাড়েন- এসব কটূক্তিমাখা ট্রলের শিকার হতে হয় তাঁকে। কিন্তু দিন কি সবার সমান যায়? পরিশ্রম ও নিবেদনে দিন পাল্টানো যায়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসিফ আলী তার উদাহরণ।
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের শেষ দুই ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন আসিফ। একেবারে পাকিস্তানের বাঁচা-মরার মুহূর্তে নামতে হয়েছে। দুবারই ছক্কাবাজিতে পাকিস্তানকে জিতিয়েছেন আসিফ। এ পথে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯ বলে মেরেছেন ৭ ছক্কা। পরশু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২ বলে ২৪ রানের সমীকরণ মিলিয়েছেন এক ওভারে, চার ছক্কায়- নাসের হুসেইনের ভাষায়, ‘সিক্স, ডট, সিক্স, ডট, সিক্স, সিক্স!’ হার্শা ভোগলের টুইট, ‘উন্মত্ত মার।’ আর বেন স্টোকস নামটা রাখার পরামর্শ দিয়ে টুইট করেন, ‘রিমেম্বার দ্য নেইম!’
পাশার দান যেভাবে পাল্টে যায়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসিফ আলীর ক্যারিয়ারও সেভাবে পাল্টে গেল। পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে আসিফ আলী এখন নায়ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে ‘ফিনিশার’ তো বলা হচ্ছেই, পাশাপাশি জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘মানি হাইস্ট’- এর আদলে তাঁকে ‘মানি হাইস্ট গাই’ও বলা হচ্ছে। পাওয়ার হিটিংয়ে প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে তিনি যেভাবে ম্যাচ ‘ডাকাতি’ করছেন, তাতে নামটা ভালোই মানানসই।
তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখানেই থেমে নেই। আসিফ আলী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সমালোচকদের ভুল প্রমাণের পর সমর্থকেরাও বেশ অনুশোচনায় ভুগছেন। হাজার হোক আসিফকে নিয়ে তো কম ট্রল করা হয়নি! অনলাইনে তাই আসিফ আলীর প্রতি ক্ষমা চেয়ে একটি ফরম ছেড়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা- ‘আসিফ আলী অ্যাপোলজি ফরম।’ এই ফরম পূরণের মাধ্যমে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ফরমের বাঁ পাশে ওপরে আসিফ আলীর ছবি ও নাম। নিচে তার প্রতি অতীতে বাজে আচরণের কিছু কারণ লেখা। তিনি ফুরিয়ে গেছেন- সংবাদমাধ্যমের এ কথা বিশ্বাস করেছিলাম, শুধু তার পরিসংখ্যান দেখেছি, ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে ঘৃণা করি, ক্রিকেট বুঝি না- এমন কিছু কথা লিখে সেগুলোর পাশে টিক চিহ্ন দেওয়ার জায়গা রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ এসবের মধ্যে যেসব কারণে আসিফ আলীকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন, সেখানে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এরপর আরও একটি ঘর পূরণ করতে হবে- যেখানে লেখা, আসিফ আলীর প্রতি সম্মান দেখাব, তাঁকে নিয়ে বাজে কথা বলব না।
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে খেলেন আসিফ আলী। ঘরোয়া এ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ভালোই খেলেছেন তিনি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা দেখাচ্ছেন, তা অনন্য। ভোগলের টুইট-ই তার প্রমাণ, ‘আসিফ আলীকে এর আগে কয়েকবার দেখে মনে হয়েছে, সে শক্তিশালী ব্যাটসম্যান। কিন্তু এই পর্যায়ের উন্মত্ত মার মারতে পারেন, সেটা ভাবনায় ছিল না।’
পাকিস্তানেরই সমর্থকদের ক্ষমা প্রার্থনাপত্র দেখে মনে হচ্ছে, তেমন ভাবনা অনেকেরই ছিল না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।