মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সম্প্রতি ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে দেশটির প্রখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘ফ্যাবইন্ডিয়া’র হিন্দুদের দীপাবলী উৎসব সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপনে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’, যার অর্থ উর্দুতে ‘ঐতিহ্য উদযাপন’ বাক্যটি ব্যবহার করার পর সেটিকে বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়, যখন ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি এবং উগ্রবাদী হিন্দু গোষ্ঠী দাবি করে যে, বিজ্ঞাপনটিতে মুসলিমদের উর্দু ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাংস্কৃতিকভাবে অনুপযুক্ত এবং হিন্দুধর্ম ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য আপত্তিকর।
ইতিমধ্যেই বিজেপি এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এটিকে হিন্দুধর্মের জন্য আক্রমণাত্মক বলে অভিহিত করে ফ্যাবইন্ডিয়াকে বয়কটের ডাক দিয়েছে। বিজেপির উস্কানিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আক্রোশ এবং ঘৃণামূলক প্রচারণা আরও বেড়ে গেছে এই অভিযোগে যে, বিজ্ঞাপনটিতে মহিলারা হিন্দু সংস্কৃতির বাহক বিন্দি পরেননি।
কিন্তু সত্যটি হ’ল এই যে, উর্দু ভাষার উৎপত্তি ভারতে। এটি দেশটির সংবিধানে দেশের সরকারী ভাষাগুলির অন্যতম হিসাবে স্বীকৃত এবং এই ভাষায় ভারতের বহু বিখ্যাত সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবুও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মুসলিমদের কোনঠাসা করতে বিজেপি ভাষাটিকে ক্রমবর্ধমানভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করেছে, যার প্রেক্ষিতে এটিকে প্রায়শই ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ইসলামিক রাষ্ট্র্র পাকিস্তানের মুসলিম ভাষা হিসাবে নিন্দা করা হয়।
ভাষাবিদ ক্রিস্টোফার কিং তার ‘ওয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ টু স্ক্রিপ্ট’ বইতে বলেছেন, ‘হিন্দি এবং উর্দুকে ‘ভাষাগত ভিত্তিতে নয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে দুটি ভিন্ন ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘উর্দু বহু শব্দ ফার্সি থেকে ধার করা। এটি মধ্যযুগীয় ভারতের অভিজাত ভাষা (এমনকি উর্দুর আরবি এবং তুর্কি শব্দগুলিও ফার্সির মাধ্যমে এসেছে)। অন্যদিকে, হিন্দির বহু শব্দ সংস্কৃত থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে, উল্লেখযোগ্যভাবে, হিন্দু ও উর্দু উভয় ভাষার অভিধানের সিংহভাগেরই মূল শব্দভাণ্ডার প্রাকৃত ভাষা থেকে প্রাপ্ত।’
উল্লেখযোগ্য বিষয় হ’ল, ভারতীয় জনতা পার্টির ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ (মুমকিন আরবি থেকে ফার্সিতে এসেছে) বা ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ (আজাদি একটি ফার্সি শব্দ), এমনকি ‘হিন্দু’ এবং ‘হিন্দি’-এর মতো মৌলিক শব্দগুলিও ফার্সি থেকে নেয়া। তারপরেও ভাষা ও সংস্কৃতির অপচর্চা করে নানা ছুঁতোয় মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ উগ্র হিন্দুবাদীদের বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়।
শুক্রবার একটি টায়ার কোম্পানির বিজ্ঞাপনে ভারতের ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সমালোচনাকরী এবং বলিউডের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা আমির খানের বিরুদ্ধে হিন্দুদের বিপর্যস্ত করার অভিযোগ তোলা হয়। বিজ্ঞাপনটিতে আমির সবাইকে দীপাবলির সময় দূষিত আতশবাজি না পোড়ানোর পরামর্শ দেয়ায় বিজেপি সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ে তার বিরুদ্ধে ‘হিন্দুদের মধ্যে অস্থিরতা’ সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন।
হেগড়ের লিখিত অভিযোগ অনুসারে, বিজ্ঞাপনটির উচিত ছিল হিন্দু ধর্মের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রদর্শনের পাশাপাশি, জুমার নামাজের সময় এবং মুসলিমদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের দিন রাস্তা অবরোধ এবং মসজিদগুলিতে আযান সম্প্রচার করে মহা অসুবিধা সৃষ্টির বিষয়ে কথা বলে আসল সমস্যাটি মোকাবেলা করা। আমিরের পাশাপাশি বলিউড কিং শাহরুখ খানও সম্প্রতি বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিম বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। তার ছেলে আরিয়ান খানকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার এবং জামিন করা হয়েছে, যদিও মামলাটির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে নিন্দিত হয়েছে।
গত বছর জুয়েলারী কোম্পানি তানিস্কের একটি বিজ্ঞাপনে একটি মুসলিম পরিবারে বিবাহিত এক হিন্দু মহিলাকে দেখানো হলে, প্রতিষ্ঠানটির দোকানগুলিতে উগ্র হিন্দুবাদীরা হামলা চালায় এবং অনলাইনে তীব্র সমালোচনা করে তানিস্ককে বয়কট করার আহ্বান জানায়। একইভাবে ২০১৮ সালে ক্লোজ আপ টুথপেস্টের একটি বিজ্ঞাপনে হিন্দু-মুসলিম দম্পতিদের তুলে ধরা হলে, তা অনলাইনে ঘৃণামূলক প্রচারণার শিকার হয়। ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন নয়। এই ধরনের অভিযোগ বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ এবং এখন বিজ্ঞাপনে আরও বেশি করে হিন্দু ধর্মের প্রতি সংবেদনশীলতা আনা হয়েছে। ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতের জনপ্রিয় সংস্কৃতি এবং মিডিয়াকে হিন্দুবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক এবং ভারতীয় মিডিয়া বিশেষজ্ঞ রোহিত চোপড়া বলেছেন যে, এমনটি করা হচ্ছে মুসলিমদের, বিশেষ করে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রগতিশীল মুসলিমদের কোনঠাসা করে রাখার জন্য। এমনকি বলিউডের সর্বোচ্চ তারকারাও মোদি সরকারের কাছ থেকে সুরক্ষিত নয়।’ তিনি বলেন, ‘এখন, এর বিশিষ্ট বিজেপি সমর্থকরা এই বৈষম্যকে বৈধতা দিচ্ছে। কোনটা ‘ভারতীয়’, কোনটা ‘হিন্দু’ আর কোনটা ‘মুসলিম’, তা নির্ধারণ করে তারা সেটিকে মূলধারায় পরিণত করছে।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, কুয়ার্ট্জ ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।