নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ক্রিকেট কিংবা ফুটবল- বিশ্বকাপ মানে শুধু মাঠের চৌহদ্দিতেই বন্দী কোনো উৎসব নয়; নানার রঙয়ের নানান গল্পেরও হয় মঞ্চায়ন। সেই হিসেবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেন ঝাঁপি খুলে বসেছে একাধিক বিস্ময় জাগানিয়া গল্পের ডালি নিয়ে। রূপকথাকে হার মানানো সেসব গল্প নিয়েই আজকের অফট্র্যাক ‘বিশ্বকাপের বিস্ময়’-
‘যাযাবর’ ভিসে
ক্রিস গেইলকে ক্রিকেটপ্রেমীরা ভালোবেসে ডাকেন টি–টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা! বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে খেলেই এমন উপমা পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘খুনে’ ব্যাটসম্যান! ক্রিকেট বিশ্বে এমন ফেরিওয়ালা আরও অনেকেই আছেন এখন। কিন্তু ডেভিড ভিসে তাঁদের সবার চেয়ে আলাদা। আজ এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন তো কাল খেলতে যান ও দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। শুধু কি তাই, জাতীয় দলেও যে তিনি স্থির নন! দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব ভিসের। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের হয়েই খেলেছেন। আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে এখন। আর এ বিশ্বকাপে ভিসে নামিবিয়ার! গেইলকে টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা বললে ভিসেকে তো ক্রিকেট যাযাবর বলাই যায়!
একটা ক্রিকেট দল যদি কোনো ক্রিকেটারের ঘর হয়, ক্রিকেটার ডেভিড ভিসের ঘরটা তাহলে কোথায়, সে এক প্রশ্ন বটে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া দল টাইটানস সব সময়ই হৃদয়ের খুব কাছে থাকবে ভিসের। স্বীকৃত ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা যে তার শুরু সেখানেই! ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল সাসেক্সেই একসময় ক্যারিয়ার শেষ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। খেলেছেন আইপিএল, পিএসএল, বিপিএলের মতো ফ্রাঞ্চাইজি লিগেও। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তবে সে ক্যারিয়ারও লম্বা হয়নি। পাঁচ বছর পর যখন আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে, ভিসে খেলছেন নামিবিয়ার হয়ে। শুধু ঘরোয়া দল নয়, জাতীয় দলটাও বদলে গেছে এই অলরাউন্ডারের। ভিসেকে ক্রিকেটের যাযাবর বলবেন না, তো কাকে বলবেন!
কাঠমিস্ত্রির ছেলে
সুপার টুয়েলভে থাকা টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে যদি সাজানো বাগান মনে হয়, তাহলে সে বাগানের এক কোনায় আগাছার চোখে দেখা বুনো ফুলে তাকানোর সময় কোথায়! ওমানের ওপেনার যতিন্দর সিং যেন সেই বুনো ফুল- ছোট দেশের ছোট তারকা কিন্তু সৌরভে কারও চেয়ে কম যান না!
নেপালের বিপক্ষে গত মাসে যতিন্দর সিং ৬০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেট নিয়ে খোঁজখবর রাখা সংবাদকর্মী পিটার ডেলা পেনা টুইট করেন, ‘বিশ্ব ক্রিকেটে যতিন্দর সিংয়ের মতো উন্নতি করা কোনো ব্যাটসম্যান পাওয়া কঠিন। নিজ চেষ্টায় সে নিজেকে উঁচু মানের ওপেনার হিসেবে গড়ে তুলেছে। ১৯ বলে ৫০ করার পথে ৩০ রান তুলেছে এক ওভারে।’
সময়টা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বলেই যতিন্দরকে নিয়ে এ তথ্যে অনেকে নড়চড়ে বসতে পারেন। যতিন্দরের জন্ম ভারতের পাঞ্জাবের লুধিয়ানায়। মা–বাবা পাঞ্জাবি, বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি। বিরাট কোহলি কিংবা বাবর আজমদের মতো পুরোপুরি পেশাদার ক্রিকেটার যতিন্দর হতে পারেননি। ওমানের রাজধানী মাসকাটের এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক বিভাগে চাকরির ফাঁকে সময় পেলে তাঁকে দেশের হয়ে ওপেন করতে দেখা যায়। ভারতে জন্ম হলেও ক্রিকেটে তার আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি মাসকাটের ভারতীয় স্কুলে। ওমান অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়ে এখন জাতীয় দলে।
স্কটিশ ‘ডেলিভারিম্যান’
ক্রিকেটে বিখ্যাত হওয়ার আগে অন্য পেশায় ছিলেন- এমন তালিকায় সবার আগে মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম আসে। রেলওয়েতে টিকিট কালেক্টরের কাজ করেছেন ধোনি। তবে ক্রিস গ্রিভসের গল্পটা আলাদা। ধোনির ক্রিকেটার হওয়া কিংবা জাতীয় দলে ঢোকার জন্য এতটা অপেক্ষায় থাকতে হয়নি, যতটা থাকতে হয়েছে গ্রিভসকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের চার দিন পর ৩২ বছরে পা দিয়েছেন গ্রিভস!
তাকে নিয়েও হয়তো আলোচনার অবকাশ থাকতো না, যদিনা প্রথম পর্বের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে হারিয়ে মূল পর্বে খেলার শঙ্কায় ফেলে না দিতো। ২৮ বলে ৪৫ রান করার পর আবার বল হাতেও বাংলাদেশের তিন ও চারে নামা দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন গ্রিভস। অথচ কদিন আগেও ই-কমার্স আমাজনের পণ্য মানুষের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন এই স্কটিশ অলরাউন্ডার!
বিশ্বকাপে প্রথম জয় এনে দেওয়া গ্রিভসকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন অধিনায়ক কাইল কোয়েৎজার। কিছুদিন আগেও গাড়ি চালিয়ে আমাজনের পণ্য সরবরাহের কাজ করতেন গ্রিভস, সে তথ্যও তার সুবাদে জানা, ‘আমি সত্যিই গ্রিভসকে নিয়ে গর্বিত। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। কদিন আগেও আমাজনের পার্সেল বিতরণ করছিল, আর এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাচ্ছে। আমি নিশ্চিত না, এটা ফাঁস করে দেওয়ায় সে আমার ওপর খুশি হবে কি না।’
অঁতুরঘর দক্ষিণ আফ্রিকা!
ক্রিস গ্রিভসের গল্পটা কিন্তু শেষ হয়নি। তার রেশ টানতে হচ্ছে অন্য আরেক গল্পের পার্শ্ব চরিত্র রূপে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার। তবে তার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বরেকর্ড গড়া আয়ারল্যান্ডের পেসার কার্টিস ক্যাম্পার যেন মিলে গেলেন এক সুঁতোয়। বিশ্বকাপে প্রথম ও সব মিলিয়ে তৃতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে চার বলে চারটি উইকেট শিকার করেছেন। দুজনই এখন রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে গেছেন। তাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে সব জায়গায়। পত্রিকার পাতা থেকে টিভি স্ক্রিন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম- সব জায়গাতেই এখন এ দুজনের নাম আর ছবিতে সয়লাব।
তবে ক্যাম্পার আয়ারল্যান্ড আর গ্রিভস স্কটল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করলেও তাদের ক্রিকেটের হাতে খড়ি হয়েছে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায়! দুজনের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা- সবই দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু তারা প্রতিনিধিত্ব করছেন ইউরোপের দুটি আলাদা দেশের। মূলত দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নিজেদের মেলে ধরতে না পারা বা ভালো সুযোগ সুবিধার জন্যই ইউরোপে পাড়ি দিয়েছেন তারা। বৃথা যায়নি তাদের এ মহাযাত্রা। দুজনেই হয়েছেন সফল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।