Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সওগাত নিয়ে এসেছে ইসলাম -খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৬ পিএম

নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহ তায়ালার নিকট মনোনীত ধর্ম"। ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য নিয়ে এসেছে মুক্তির পয়গাম। গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সওগাত নিয়ে এসেছে ইসলাম। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার বিষয়ে যাতে কোনো প্রকার উগ্রতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য খুৎবা পূর্ব বয়ানে ইমাম-খতিবরা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। জায়গার অভাবে অধিকাংশ মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী আজ খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, "নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহ তায়ালার নিকট মনোনীত ধর্ম"। ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য নিয়ে এসেছে মুক্তির পয়গাম। ইসলামে মানব জাতি আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে স্বীকৃত। আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন "নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি "। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন "হে মানবজাতি আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে, পরে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হতে পার"।
ইসলাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অমুসলিমদের অধিকার রক্ষায় যে উদাহরণ ও বিধি-বিধান প্রদান করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বেনযীর। আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন "যদি আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত মঠ, গির্জা, ইয়াহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম"। কোরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন "তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না অন্যথায় তারা সীমা লঙ্ঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে"।
ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন "দ্বীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই "। তাইতো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানে নিযুক্ত শাসনকর্তা হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) কে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন "ইয়াহুদী বা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী কাউকে তার ধর্ম ত্যাগ করতে বাধ্য করা যাবে না "। ইসলাম মানবজীবনকে একান্তই সম্মানজনক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মানুষের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য অপরাধ সাব্যস্ত করে জীবনের নিরাপত্তার গুরুত্ব প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা ঘোষণা করেন, " নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে কেউ হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলো। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো"।
পেশ ইমাম বলেন, কোন সংকীর্ণতা নয়, হিংসা-বিদ্বেষ নয়, উদারতা ও মহানুভবতা হচ্ছে ইসলামের বৈশিষ্ট্য। ইসলাম গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সওগাত নিয়ে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামী অনুশাসন মানার ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম আদর্শে আদর্শবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, এই রবিউল আউয়াল মাসে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এই পৃথিবীতে আগমন করেন। আল্লাহ পাক বলেছেন, আমি আপনাকে (মুহাম্মদ সা.) জগৎবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)। তিনি ছিলেন দয়ার নবী। তিনি মানুষকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আরো বলেন, জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্যই প্রিয়নবী সা. আমাদের আদর্শ। কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সা.এর জীবনেই তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। (সূরা আহজাব, আয়াত নং-২১)।
তিনি বলেন, নবী করিম সা.এর সীরাত হলো আকাশের মত। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন, মাথা তুললেই সে আকাশ দেখতে পাবে। অনুরূপ মানুষ তার জীবনের যে মোড়েই থাকুক না কেন, শৈশবে থাকুক কিংবা যৌবনে থাকুক, বার্ধক্যে উপনীত হোক, বৈবাহিক জীবন হোক, ব্যবসায়িক জীবন হোক, সামাজিক জীবন ব্যবস্থায় হোক, সামান্য মাথা তুলে তাকালেই সে আকাশের মত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখতে পাবে এবং সে সঠিক পথের দিশা পেয়ে যাবে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীর সীরাত আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, সৃষ্টিকুলের ওপর ¯্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী পবিত্র কোরআনের মর্যাদাও পৃথিবীর সমস্ত বাণীর শীর্ষে ও উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত। আর এ কোরআনই একমাত্র কিতাব যা বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ হিসবে প্রমাণিত। এ কিতাব নাযিল করা হয়েছে সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মহামানব সমগ্র জগতের মুক্তির দিশারী বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। এ গ্রন্থ শুধু মুসলমান নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক মহাপাথেয়। ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি এর মাঝেই নিশ্চিত। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপস্থিতিতে ইহাই বিশ্ববাসীর কল্যাণে দিক নির্দেশনার একমাত্র সম্বল। আর এ কোরআনই হলো রাসুলের পবিত্র জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এর প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণে দশটি নেকি। কোরআন তিলাওয়াতে মুমিন অনুভব করে অসাধারণ প্রশান্তি। কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণে ও গবেষণা অধ্যায়নে ধন্য হয়েছে অসংখ্য অগণিত কাফের, মুশরিক, ঈমানহারা বিজ্ঞ জনেরাও। তাই কোরআনই একমাত্র কিতাব যাকে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ভালবাসে ও সম্মান করে। যার অবমাননায় শুধু মুসলানই নয় সমগ্র জাতি ব্যথিত হয়, কষ্ট অনুভব করে, তাদের অন্তর ভেঙ্গে চুর্মার হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনের অবমাননার পরিণাম দুনিয়া ও আখিরাতে খুবই খারাপ ও ভয়াবহ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা তো হাসি-তামাশা ও ফুর্তি করছিলাম। বলো, তোমরা কি আল্লাহ, আল্লাহর আয়াত (কোরআন) ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে ফুর্তি করছিলে? (সূরা তাওবা-৬৫), যারা আমার আয়াত (কোরআন) কে উপহাস (অবমাননা) ও ব্যর্থ করার চেষ্টা করে তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী। (সূরা হজ্ব-৫১)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন : যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ওপর অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন এমন শাস্তি, যা (দুনিয়া ও আখিরাতে) লাঞ্ছিত করে ছাড়বে। (সূরা আহজাব-৫৭)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পবিত্র মাস রবিউল আউয়ালসহ সমগ্র জীবনে কোরআন ও সুন্নাহের সম্মান রক্ষা করত: সঠিক জীবন যাপন করার তৌফিক দান করেন। আমীন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরী বছরের গুরুত্বপূর্ণ মাস রবিউল আউয়ালের আজ প্রথম জুমা। এ মাসে আমরা নিয়মিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাত পাঠের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি। কারণ সীরাত পাঠের একটি অনন্য প্রাপ্তি হচ্ছে ঈমান বৃদ্ধি। প্রাচীন ও আধুনিক ইতিহাস সাক্ষী যে, পবিত্র সীরাত যুগে যুগে অসংখ্য মানুষকে ঈমানের পথ দেখিয়েছে। সৌভাগ্যবান মুমিনের জন্য পবিত্র সীরাতের অধ্যয়ন ও আনুগত্য যে মর্যাদাপূর্ণ প্রাপ্তি নিয়ে আসে তা হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ও ভালোবাসা। যে ভালোবাসার কারণে লাভ হবে জান্নাতে তাঁর সঙ্গ ও সান্নিধ্য। মুমিন যতই তাঁকে জানবে ততই তাঁর মহানুভবতার সাথে পরিচিত হবে, মানবজাতির প্রতি তাঁর মহাঅনুগ্রহের দিগন্ত ততই তার সামনে উন্মোচিত হতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে বা এ বিষয়ে আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’’ (সূরা আহযাব : আয়াত নং-২১)। আসুন, তাঁর সে আদর্শ জানার লক্ষ্যে আমরা সীরাত বিষয়ক গ্রন্থসমূহ পাঠ করি এবং তার আলোকে নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি।
খতিব আরও বলেন, ইসলাম সহনশীলতার ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ফলে এদেশের অমুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশেই বসবাস করছে। এ পরিবেশ বজায় রাখতে তাদেরও কিছু কর্তব্য আছে। এসব কর্তব্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা এবং যে কোনো ধরণের কটূক্তি, উত্তেজনাকর বা আপত্তিকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ইসলাম ধর্ম, নবীজী (সা.) এবং কোরআন অবমাননাসহ এ ধরণের গর্হিত কাজ থেকে নিষেধ করে এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা পূর্ব বয়ান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ