পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ট্রেনে যাত্রীসেবার মান ও নিরাপত্তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। যাত্রীসেবার মান অত্যন্ত নিম্ন। নিরাপত্তা, বলতে গেলে উধাও। চলন্ত ট্রেনে ডাকাতি, ছিনতাই আর বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপ ইত্যাদি যেন সাধারণ ঘটনায় পরিণিত হয়েছে। কিছুদিন আগেও ট্রেনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশী ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা থামছেই না। বরং ক্রমাগত বাড়ছে। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এ সমস্যাকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। গত পরশু রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৯ মাসে চলন্ত ট্রেনে ১১০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০০টি এবং আহত হয়েছে ২৯ জন রেলযাত্রী ও কর্মী। সমস্যাটি অতি পুরাতনও বটে। যখন থেকে এদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে, তখন থেকেই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। অন্যান্য দেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সাম্প্রতিক কালেও বিভিন্ন দেশে এ ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তবে সে সব দেশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশেই এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৯ সালে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে ৫শ’র ওপর। ২০২০ সালে করোনাকারণে ট্রেন কখনো কখনো বন্ধ থাকায় পাথর নিক্ষেপের সংখ্যা কিছুটা কম হয়েছে। তবে ইদানিং বেড়েছে। গত মাসেই ১৭টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে, যাতে আহত হয়েছে ২০ জন, যাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হওয়া ছাড়াও অতীতে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৩ সালে প্রীতিদাশ নামের একজন প্রকৌশলীর মৃত্যুর কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।
যাত্রীসাধারণ যাতে আরামে, স্বাচ্ছন্দে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অপরিহার্য কর্তব্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কামরা, আরামদায়ক সিট, পর্যাপ্ত আলো, বাতাস ও পানির ব্যবস্থা এবং উন্নত-টাটকা নাস্তা, চা-কফি বা কোমলপানীয়ের আয়োজন ইত্যাদি নিশ্চিত করার দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই কর্তৃপক্ষের। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, সাধারণ ট্রেনের কথা তো বলাই বাহুল্য, আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেও ভাঙ্গাচোরা, অপরিচ্ছন্ন কামরা, ময়লা-ছেড়া সিট এবং আলো-বাতাস-পানির অভাব লক্ষ করা যায়। অধিকাংশ ট্রেনের খাবার বাসী ও খাওয়ার অযোগ্য। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট ও চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কর্তৃপক্ষের কোনো বিকার লক্ষ করা যায়নি। রেলওয়ের কর্তাব্যক্তিরা যাত্রীদের মানুষ বলে মনে করলে অবশ্যই যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতো। ট্রেনকে বলা হয় সবচেয়ে নিরাপদ গণপরিবহন এবং অবশ্যই অন্যান্য গণপরিবহন থেকে সাশ্রয়ী। ট্রেনের প্রতি মানুষের আকর্ষণের এটাই প্রধান কারণ। ট্রেনে ডাকাতি, ছিনতাই কিংবা পাথর নিক্ষেপ স্বাভাবিককারণেই যাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কেউ ইচ্ছা করে আহত-নিহত হতে কিংবা সর্বস্ব হারাতে চাইতে পারে না। যে কোনো মূল্যে ও ব্যবস্থায় তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কীভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়া যায়, কীভাবে পাথর নিক্ষেপ সমস্যার সমাধান করা যায় সে জন্য বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। অতীতে আমাদের দেশে সমস্যাটা সুরাহার জন্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তা কাজে লাগানো যেতে পারে। গত পরশুর সংবাদ সম্মেলনেও পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে ৮ দফা পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অবিলম্বে ওই ৮ দফা পদক্ষেপ কার্যকর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, গণপরিবহন হিসেবে ট্রেন একাধারে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। সেবার হীনমান এবং নিরাপত্তার অভাব সত্তে¡ও ট্রেনযাত্রীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার এটাই আসল কারণ। বিশ্বজুড়েই ট্রেন ও রেলওয়ের গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ট্রেন ও রেলওয়ের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রায় প্রতিটি দেশ। ট্রেন ও রেলওয়ের উন্নয়নের চীন-জাপান প্রভৃতি দেশ অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো ট্রেন ও রেল লাইন তৈরি করেছে তারা। আমাদের প্রতিবেশী ভারতও ট্রেন ও রেলওয়েকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তার রেলযোগাযোগের ব্যবস্থা চীন-জাপানের মতো না হলেও তা দেশের বিরাট চাহিদা পূরণ করছে। ভারতের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি, যদিও একই সময়ে দু’ দেশের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে যে কোনো কারণেই হোক, রেলওয়ে অবহেলার শিকার হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে রেলওয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এবং এর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সুফল কমই দৃশ্যমান হয়েছে। রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রেলওয়েতে ‘কালো বিড়ালে’র অস্তিত্ব এখনো আছে বলে মনে করা হয়। বলা বাহুল্য, দুর্নীতি থাকলে, দুর্নীতির কালো বিড়ালরা সক্রিয় থাকলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যহত হবে, ত্রুটিপূর্ণ হবে এবং তার সুফল থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না। আমরা আশা করবো, রেলওয়ের উন্নয়নে আরো গুরুত্ব ও মনোযোগ দেয়া হবে এবং সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প দুর্নীতমুক্তভাবে দ্রুত শেষ করা হবে। একইসঙ্গে ট্রেনে যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।