পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীটি আবারও সামনে এসেছে। বিশেষ করে, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এ দাবীর পক্ষে বেশ জোরালো অবস্থান নিয়েছে বলে তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। ২০২৩ সালের নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবী আদায়ে দলটি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত সপ্তাহে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন ও হাইকমান্ডের নেতৃবৃন্দ সিরিজ বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ আগামী দিনে দলের কর্মসূচি কেমন হবে, কি করতে হবে, কিভাবে আন্দোলন করা উচিৎ ইত্যাদি বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। এসব মতামত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, দলটির নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। পাশাপাশি এ কথাও বলা হয়েছে, দাবী আদায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে দলের জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের মাঠে নামতে হবে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, আন্দোলনে রাজপথে না থাকলে পদ থেকে সরে যেতে হবে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেছেন, আগামী নির্বাচন তাদের জন্য ‘ডু অর ডাই’ হয়ে রয়েছে। তা নাহলে, দলটির অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবে না। কেউ কেউ বলেছেন, দেশের জনগণ তাদের দাবীর পক্ষে রয়েছে। আন্দোলন শুরু করলে তারাও রাস্তায় নেমে আসবে।
দুই.
আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেখা যায়নি। যারা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থেকেছেন এবং এখন আছেন, তারাও এ বিষয়টি জানেন। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই তারা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে থাকেন। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ রাজপথের সব বিরোধীদল দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়েছিল। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব বিরোধীদলের সম্মতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল, যার প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ। এই সরকারের অধীনে প্রথমবারের মতো দেশে অত্যন্ত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরপরই মোটামুটি সকলেই নিশ্চিত ছিলেন, আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে এবং সরকার গঠন করবে। এমনকি খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেলেও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে এমন ধারনা ছিল, আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসছে এবং বিএনপি বিরোধী দলে বসবে। সে সময় এমন কথাও শোনা গিয়েছিল, নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ একটি ছায়া মন্ত্রীসভা গঠন করে ফেলেছে। কোনো কোনো নেতা মন্ত্রী হওয়ারও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল, সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিএনপি বিজয় লাভ করেছিল। নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে যে ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তার কারণ হচ্ছে, নির্বাচনটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছিল এবং জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছিল। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সৌন্দর্যটা এখানেই। এতে নিশ্চিত জয় পেতে পারে এমন দল পরাজিত হয় এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন দলও বিজয়ী হয়। ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম-আদমী পার্টি গঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। কেউ ভাবতে পারেনি মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০১৫ সালে দিল্লীর নির্বাচনে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতায় যেতে পারবে। দলটি দিল্লীর ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টিতে বিজয় লাভ করেছিল। কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক সততা, দক্ষতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তার দলকে বিজয়ী হতে এবং তাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে সহায়তা করে। একইভাবে ’৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিজয় লাভের মূল কান্ডারি ছিলেন দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তার আপসহীন নেতৃত্ব দেশের মানুষ এতটা পছন্দ করবে, তা বিএনপিও ধারনা করতে পারেনি। কারণ, সেসময় বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। অনেক জেলায় দলটির কমিটি পর্যন্ত ছিল না। প্রার্থীও ছিল অনভিজ্ঞ ও নতুন। তারপরও বিএনপির অভাবনীয় বিজয়ের প্রধানতম কারণ ছিল, বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব। ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়’ বলে যে কথা রয়েছে, সে সময় খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেছিল। তিনি দলের চেয়ে মানুষের কাছে ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়ে পরবর্তী নির্বাচন নিজের অধীনে করার উদ্যোগ নেয়। এতেই গোল বাঁধে। পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে হবে, এমন কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিএনপি তার অধীনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেয়। এর বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে। বিরোধীদলগুলোর জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের মধ্যে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যুক্ত করা হয় এবং মাত্র ছয় মাসের মাথায় আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচন করা হয়। বিএনপি এই নির্বাচনটি করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিটি সংবিধানে যুক্ত করার জন্য, যাতে সবসময় এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি হেরে যায়। আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। নির্বাচনটি তখন আওয়ামী লীগসহ সকলের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তা আবারও প্রমাণিত হয় এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি হেরে গেলেও ১১৬টি আসনে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ বিরোধীদল হিসেবে আবির্ভূত হয়। অথচ ধারণা করা হয়েছিল, বিএনপির বিরুদ্ধে বিরোধীদলগুলো যেভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল এবং বিতর্কিত নির্বাচনের কারণে যেভাবে তাকে সমালোচিত হতে হয়েছিল, তাতে শোচনীয় পরাজয় হবে। কিন্তু তা হয়নি। এর কারণ, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া। যদি সে সময় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতো, তাহলে বিএনপির পরিণতি ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতোই হতো। ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পর নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০১ সালে বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয় লাভ করে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়। সমস্যা বাঁধে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে। সে সময়ের সংবিধান অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। তিনি ইচ্ছুক না হলে, তার আগের প্রধান বিচারপতি, তিনি না হলে প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন। আওয়ামী লীগ সে সময়ের কোনো প্রধান বিচারপতিকে মেনে না নিলে শেষ অপশন হিসেবে প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে দলীয় লোক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ তাকেও মেনে নেয়নি। নির্বাচনী সিডিউল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ নমিনেশন পেপার জমা দিলেও পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার কারায় জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, যা ওয়ান-ইলেভেন সরকার হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ এই সরকারকে স্বাগত জানায়। এই সরকার এসেই সব ওলট-পালট করে দেয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে। আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাকে আটক করার পাশাপাশি সংস্কারপন্থী নামে দুই দলের নেতাদের নিয়ে বিকল্প দল গঠন করার উদ্যোগ নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, দুই নেত্রীকে মাইনাস করা। তবে দুই নেত্রীর দৃঢ়তায় ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এক পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে বিজয় লাভ করে। ক্ষমতায় এসেই দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে উচ্চ আদালতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি গড়ালে আদালত পরবর্তী দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা বাতিল করে দেয়। ক্ষমতাসীন দল আদালতের রায় আমলে নিয়ে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসনের জোরে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করে।
তিন.
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার তার অধীনে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের মাঝেই ক্ষমতাসীন জোট সরকার নির্বাচন করে ফেলে। এতে আগেভাগেই বিনাভোটে ১৫৩টি আসনে তারা বিজয় লাভ করে। সে সময় ক্ষমতাসীন জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ নির্বাচন করা হয়েছে এবং স্বল্প সময়ে আরেকটি নির্বাচন করা হবে। তবে পরবর্তীতে তা আর হয়নি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে বিএনপিসহ তার মিত্র দলের ওপর জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগ এনে ব্যাপক দমন-পীড়ন ও হামলা-মামলা শুরু করে। এতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপার্সনের সাজা হয় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনেরও বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়। এতে দলটির নেতৃত্বে দুর্বলতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করলেও তাদের ভরাডুবি হয়। দেখা যাচ্ছে, বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচন এবং উপ-নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় থাকে। বর্তমানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এ সময়ের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন এবং মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। মানুষের মনে এ ধারনার সৃষ্টি হয়েছে, ভোট দিয়ে লাভ নেই, দিন শেষে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাই বিজয়ী হবে। জনগণের মধ্যে এখন ভোটবিমুখতার প্রবণতা এখনও বিরাজমান। আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে আড়াই বছরেরও কম সময় বাকি। নির্বাচনটি যে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই হবে, তা এক প্রকার নিশ্চিত। এ নির্বাচন যাতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তা নিয়ে বিএনপি এখন থেকেই আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল জোরেসোরেই বলছে, তার অধীনেই নির্বাচন হবে এবং এ নিয়ে বিএনপি বা বিরোধীদলগুলো আন্দোলন-সংগ্রাম করলে তা মোকাবেলা করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি বা তার নেতৃত্বাধীন জোট কি তাদের দাবী আদায় করতে পারবে? এ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো যেমন ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, তেমনি ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে বিএনপি’র ঘোর সমর্থকরাও এখন বিশ্বাস করে না দলটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করতে সক্ষম হবে। এমনকি দলটির অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যেও এমন সন্দেহ রয়েছে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। এক. দলটির অনেক সমর্থক কনফিউজড এবং হতাশ। তাদের ধারণা, বিএনপির পক্ষে তার দাবী আদায় করা সম্ভব নয়। দুই. অনেকে এ নিয়ে নিস্পৃহ এবং আলোচনা করতেই রাজী নয়। তারা মনে করে, এ নিয়ে আলাপ করার মানে নেই। বিএনপি সমর্থক ও অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে এমন নেতিবাচক মনোভাব প্রবল হয়ে রয়েছে। বিএনপির দাবী আদায় করার ক্ষেত্রে এ ধরনের কনফিউশন ও নিস্পৃহ মনোভাব বড় বাধা হয়ে আছে। এই বাধা দূর করে তাদের উজ্জীবিত করতে না পারলে দলটির পক্ষে দাবী আদায় করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ বিএনপি নিজের ঘর ও সমর্থকদের দমে যাওয়া মনোভাব চাঙা করতে না পারলে তাকে আরেকটি ব্যর্থতার শিকার হতে হবে। তার উপর রয়েছে সরকারের বাধা এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত। বিএনপি ও তার জোট এবং অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিগত এক দশকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী আদায় করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে সম্ভব হবে তেমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের এখনো দুই বছরের মতো বাকি। এই সময়ে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। সরকারের অতীতের কৌশল আবারও সফল হবে এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে বিরোধীদলের পক্ষে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী আদায় কতটা সম্ভব হবে, এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
চার.
ক্ষমতাসীন দল আগামী নির্বাচন তার মতো করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তার কিছু যাবে আসবে না। জনগণ ভোট দিতে পারল কি পারল না, এ নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। ভোট দিতে না পারায় জনগণ কি সরকারকে কিছু বলতে পেরেছে? পারেনি। কারণ হচ্ছে, কর্তৃত্ববাদী সরকার দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকলে একসময় জনগণ তা মেনে নেয়। সরকারও জানে, জনগণকে কিভাবে নিশ্চুপ রাখতে হয় এবং বিরোধীদলকে সামাল দিতে হয়। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর বিশিষ্টজনরা কিছুদিন আলোচনা-সমালোচনা করবে, তারপর থেমে যাবে, এটাও সরকার জানে। এখন দেখার বিষয়, বিরোধীদল সরকারের কঠিন প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে কিভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী আদায় করে। তবে এ কথাও সত্য, প্রাচীর যতই দুর্ভেদ্য হোক না কেন উপযুক্ত রণকৌশল থাকলে, তা না ভেঙ্গেও অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়। এমন নজির ইতিহাসে রয়েছে। ট্রয় নগরীর দুর্ভেদ্য প্রাচীর ডিঙ্গাতে না পেরে প্রতিপক্ষ সুকৌশলে বিশাল আকৃতির কাঠের ঘোড়ার ভেতরে অবস্থান নিয়ে ট্রয় নগরীতে প্রবেশ করে তা ধ্বংস করে দিয়েছিল।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।