পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বড় বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে সউদী সরকার ও বিনিয়োগকারিরা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সউদী আরব সফরে গিয়ে সেখানকার বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ’র সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশে সউদী বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন সউদী মন্ত্রী। সালমান এফ রহমান সউদী চেম্বার অব কর্মাসের প্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ীদের সাথেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রস্তাব ও মতবিনিময় করেন। ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশে সউদী বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি বরাদ্দের প্রস্তাবের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন সালমান এফ রহমান। এ প্রসঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চুড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানা যায়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে শত শত কোটি ডলারের সউদী বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এমন এক সময় এ ধরণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যখন আমাদের প্রধান শ্রম বাজার সউদী আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সউদী শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সউদী বিনিয়োগ বিশেষ অবদান রাখতে পারে। হাজার কোটি ডলারের সউদী বিনিয়োগ দেশে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্থ করে তুলবে।
বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ সউদী আরব ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল। সে সব প্রস্তাব বেশিদূর অগ্রসর না হলেও ভারতের কয়েকটি সেক্টরে বিপুল পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করেছে দেশটি। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর সউদী আরব সফরে গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে সউদী বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে তুলে ধরা হলে সউদী সরকার ও বিনিয়োগকারিদের আগ্রহে হাজার হাজার কোটি ডলারের সউদী বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দেয়। সউদী আরবে কর্মরত প্রায় ৩০ লাখ প্রবাসী কর্মীর পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সউদী আরবের বিনিয়োগকারিরা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে তা আমাদের আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। গত বছর করোনা মহামারী শুরুর আগে বাংলাদেশের ৭টি সেক্টরে সউদী আরব থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে সউদী আরবের প্রধান তেল কোম্পানী সউদী আরামকোর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের পেট্টোলিয়াম রিফাইনারি স্থাপনসহ জ্বালানি সেক্টরে বিপুল পরিমান বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সে সব প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপায়নে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় এখনো শুধু সম্ভাব্যতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
পেট্রোলিয়াম, জ্বালানি ও বিদ্যুতখাতে সউদী বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে এসব সেক্টরে অনেক আগেই কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব হতো। এবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার উদ্যোগে যে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো সামনে রেখে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ার প্রত্যাশা দেখা যাচ্ছে, তা যেন আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে ব্যাহত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। সউদী আরব ছাড়াও গত দুই দশকে জাপান, কোরিয়াসহ বেশকিছু শিল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশে শিল্পকারখানা রিলোকেট ও বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এসব প্রস্তাবের অর্ধেকও যদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো, তাহলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের চেহারা এখন ভিন্নরূপে দেখা যেত। সউদী আরামকো বাংলাদেশে ২০ মিলিয়ন টন ক্ষমতাসম্পন্ন তেল শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন টন। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা ক্রুডঅয়েল পরিশোধন করে আঞ্চলিক বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য খাতে বড় ধরণের অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারের সুযোগ রয়েছে। সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আকার বর্তমানে ১.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণ বা তারো বেশি অঙ্কে উত্তীর্ণ হওয়া অসম্ভব নয়। এ প্রেক্ষিতে, উন্নয়ন সহযোগিতা, কর্মসংস্থানসহ সউদী আরবের বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত ত্বরিৎ উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।