পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যুক্তরাষ্ট্র করোনাকারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একটি তালিকা করেছে। তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত এ তালিকায় যেমন রয়েছে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশ, তেমনি আছে ‘মোটামুটি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশ। তালিকাতে আছে মোট ৭০টি দেশের নাম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে করোনার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কমে আসলেও যুক্তরাষ্ট্রের কথিত তালিকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে তার নাম রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। সব কিছুই খুলে দেয়া হয়েছে। এতদিন বাদ ছিল শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; তাও গত ১২ সেপ্টেম্বর খোলা হয়েছে। গতকাল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, করোনামহামারিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে। বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের অবস্থা এখনো অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই স্বস্তিদায়ক অবস্থার চিত্র বাস্তবেও দৃশ্যমান। যখন করোনাসংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ক্রমশ কমে আসছে, সকল ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রের তালিকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হওয়া বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন এবং আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রমাণ বহন করে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঊর্ধ্বমুখী করোনাসংক্রমণের কারণে যুক্তরাজ্য ৬২টি দেশকে ‘রেডলিস্ট’ভুক্ত করে তাদের নাগরিকদের যুক্তরাজ্য ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ওই রেডলিস্টে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এতে বাংলাদেশীরা যুক্তরাষ্ট্র যেতে বাধার মুখে পড়েছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছে। কর্ম, শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন উপলক্ষে সেখানে বাংলাদেশীরা গিয়ে থাকে। আবার দেশেও ফেরে। তাদের সকলের জন্যই একটা বড় রকমের দুর্ঘট তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রনের সর্বশেষ পরিস্থিতি যুক্তরাজ্যের অজানা থাকার কথা নয়। তারপরও রেডলিস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহার করা হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমিন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডামনিক রাতের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে মিলিত হয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি। করোনার জিনোম সিকোয়েন্সসহ সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য সম্পর্কে সায়েন্টিফিক ডাটা চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ডাটা নিজস্ব পদ্ধতিতে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অথচ ভারত শুরুতে ওই রেডলিস্টে থাকলেও ইতোমধ্যে তার নাম প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। রেডলিস্টে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাম এখনো বহাল রাখার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটা যুক্তরাজ্যের বিশেষ সিদ্ধান্তের অংশ হতে পারে। ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে বিভীষিকা ছড়িয়েছে, ভারত তা থেকে মুক্ত থাকেনি। বলা যায়, সবচেয়ে বিপর্যয় স্থষ্টি করেছে সেখানে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ কিংবা অন্য যে কোনো দেশে ডেল্টার প্রকোপ ও ক্ষতি কম হয়েছে। পরবর্তীতে সবদেশেই ডেল্টার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। যার মধ্যে ভারত আছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান অথবা অন্য দেশও আছে। অথচ ভারতকে আগে আগে রেডলিস্ট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক বরাবরই মসৃন, স্বাভাবিক এবং হৃদ্য। করোনা প্রশ্নে বাংলাদেশীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সম্পর্কের এই পটভূমিতে অত্যন্ত বেমানান। তার এ বিষম আচরণ দু:খজনক।
সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ এশিয়ার ভুরাজনীতিতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম শীর্ষ সারিতে রাখা কিংবা যুক্তরাজ্যের রেডলিস্টে তার নাম যুক্ত করা এবং প্রত্যাহার না করা এই পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া কিনা তেমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঠেছে। কারণ যাই থাক এবং তা যত বড় হোক, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কূটনৈতিক যোগাযোগ ও তৎপরতার ঘাটতির কথা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ ও বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। কোনো কারণে সেটা এতটুকু ক্ষুণ্ণ হোক, তা কারোই কাঙ্খিত হতে পারে না। করোনা অতিমারির ঢেউ একের পর এক আঘাত হানছে। আবার তা শিথিলও হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু একেবারে শেষ হচ্ছে না। সহসা এ অতিমারি শেষ হবে, এমনটাও কেউ মনে করে না। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই সবদেশে সবাইকে চলতে হবে, এরকমটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে করোনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ামক হতে পারে না। সেই বিবেচনা সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র তার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে এবং যুক্তরাজ্য তার রেডলিস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিয়ে দেবে, আমরা একান্তভাবে সেটাই প্রত্যাশা করি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তরফে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হবে বলেও আমরা আশা করি। এই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় টিকা কার্যক্রম বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ে অধিকাংশ লোককে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।