নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
নিঃসন্দেহে ক্রিকেট বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক পরিচিতি। বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরেই খেলাধুলায় এদেশের মানুষ পুরোপুরি ক্রিকেট নির্ভর। এদেশে যেখানে একসময়ের সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলসহ অন্যান্য খেলা মৃতপ্রায়, সেখানে ক্রীড়াপাগল বাংলাদেশের মানুষকে মাঠমুখো করে রেখেছে এই ক্রিকেটই। বিশ্বকাপসহ বেশক’টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সফল আয়োজনও করেছে বাংলাদেশ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও এখন বিশ্বমানের। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও আছে বেশ কিছু দাপুটে জয়ের টগবগে স্মৃতি। বেশ কিছু লিজেন্ডারি ক্রিকেটারও বিশ্বকে উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ যাদের মধ্যে এখনও বিশ্ব দরবারে ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যাকে নিয়ে বুক ভরা গর্ব দেশের প্রতিটি মানুষের। ক্রিকেটের এ ধারাবাহিক উন্নতিতে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। পাশাপাশি ঢাকার ক্লাবগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদানও এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।
ক্রিকেটের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে এদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবির দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। যাদের প্রচেষ্টায় এখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বুনছে দেশের ১৭ কোটি ক্রীড়াপ্রেমী। কিন্তু এ স্বপ্নের ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় ‘উইকেট’। আরো মোটা দাগে বললে ‘মিরপুরের উইকেট’।
টি—টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজনে ব্যাটিংনির্ভর স্পোর্টিং উইকেট তৈরির পরিবর্তে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী বোলিং উইকেট তৈরি করে বিসিবি বিশ^কাপে অংশগ্রহণের আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরকে এক বিরাট চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে কারণে মিরপুরের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের কোন চমক নেই। ফলে টেলিভিশনের দর্শকরা দলের জয়ে আনন্দ পেলেও খেলা দেখার আনন্দ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। অথচ এই টি—টোয়েন্টি ক্রিকেটে দর্শকদের একমাত্র প্রত্যাশাই থাকে ব্যাটসম্যানদের চার আর ছয়ের তাণ্ডব দেখা।
সম্প্রতি দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি—টোয়েন্টি সিরিজটি ৪—১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ৫ ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি দাপটের সঙ্গে জিতে নিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। সিরিজে ব্যাটসম্যানদের বিস্তর ভোগান্তির দৃশ্য ছিল নিয়মিত। আন্তর্জাতিক টি—টোয়েন্টির ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রানের সিরিজে বাংলাদেশের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একই পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশ সফররত নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলটিও। নিঃসন্দেহে দলের ধারাবাহিক এমন অর্জন গর্বের। তবে সত্যিই কি তাই? অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে কাঠগড়ায় তুলতে হয়েছে হোম অব ক্রিকেটের উইকেটকেই। সম্পূর্ণ নিজেদের বিজয়ের সুবিধার্থে তৈরি করা উইকেটে বোলাররা যেমন একচেটিয়া সুবিধা পাচ্ছেন, ঠিক তেমনই উইকেটের কারণে একচেটিয়া ব্যর্থ হচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। অথচ পুরো চিত্রটাই টি—টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিপরীত। আইসিসি যে উদ্দেশ্য নিয়ে টি—টোয়েন্টি ফরম্যাটের আবির্ভাব ঘটিয়েছিল, চার—ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে দর্শকদের বিনোদনের খোরাক জোটানো, যেটা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত বাংলাদেশের দর্শকরা। টি—টোয়েন্টি ফরম্যাটের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় তৈরি এ উইকেটে নিজেদের যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারছেন না সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্যর মতো ব্যাটসম্যানরাও।
বাংলাদেশ—অস্ট্রেলিয়া সিরিজটিতে রান হয়েছে ওভারপ্রতি ৫.৮৫ করে। টি—টোয়েন্টিতে এরচেয়ে কম রানের সিরিজ দেখা গিয়েছিল ২০১২ সালে। কেনিয়া—আয়ারল্যান্ড সিরিজে ওভারপ্রতি রান হয়েছিল ৬.১১ করে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুই দল মিলিয়ে পুরো সিরিজে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ১৩১। এসেছে মাত্র দুই ফিফটি। ১২০ রানের পুঁজিকেই এখানে দেখিয়েছে বেশ বড়। গত বুধবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড থেমেছে যৌথভাবে টি—টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ৬০—এ। যাতে করে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছে এমন এক উইকেটে যেখানে ব্যাটসম্যানদের স্কিলই ঠিকভাবে যাচাই করা যাচ্ছে না। উইকেটের এমন অবস্থা আন্তর্জাতিক টি—টোয়েন্টিতে আগে কখনোই দেখা যায়নি।
টি—২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছিলেন বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। অক্টোবর—নভেম্বরে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি—টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব আসরে থাকবে না এমন উইকেট। টি—টোয়েন্টিতে যেকোনো সিরিজেই ব্যাটসম্যানদের অনুকূলে যেখানে স্পোর্টিং উইকেটই প্রাধান্য পায় আইসিসি ইভেন্টে সেটা পাবে আরো বেশি করে। আর তাই এ দুটি সিরিজকে সামনে রেখেই স্পোর্টিং উইকেটের আবদার ছিল ডমিঙ্গোর। এমনকি নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগেও ১৫০—১৬০ রানের উইকেট আশা করেছিলেন এই প্রোটিয়া কোচ। তবে তা পাননি বলে সম্প্রতি আক্ষেপ ঝরেছে তার কণ্ঠে।
মিরপুরের বাইশগজ বরাবরই মন্থর বলে একটা কথা চালু আছে। সব মিলিয়ে এখানে উইকেট আছে আটটি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলা হচ্ছে এগুলোতেই। সবক’টির দশাই এক। উঁচু—নিচু বাউন্স, বল থেমে আসার জন্য দ্বিধা নিয়ে খেলতে হয় ব্যাটসম্যানদের। মূলত ২০১৭ সালে হোম অব ক্রিকেটের মাঠ সংস্কারের পর থেকেই মাঠ সবুজের গালিচা তকমা হারিয়ে বাদামি রং ধারণ করেছিল নতুন করে সাজানোর পর। আউটফিল্ড—এর অবস্থা বাজে হয়ে পড়েছিল। সেসময় সিরিজ খেলতে আসা অস্ট্রেলিয়া আউটফিল্ড নিয়ে প্রকাশ্যেই অভিযোগ জানায়। তাতে মাঠের ভাগ্যে জোটে আইসিসির দু’টি ডিমেরিট পয়েন্টও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, টি—টোয়েন্টির যে মূল আকর্ষণ ‘চার—ছক্কায় দর্শক মাতানো’ সেটিও পরিলক্ষিত হয়নি ঘরোয়া ক্রিকেটের জনপ্রিয় বিপিএলের কয়েকটি আসরেও। এখানে খেলতে এসে, কিংবা ম্যাচ দেখে মিরপুরের উইকেট নিয়ে সমালোচনা করেছেন দেশি—বিদেশি তারকাদের অনেকেই। গত বিপিএলেই উইকেট নিয়ে সমালোচনা করে জরিমানা গুণেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালও।
অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেলে বর্তমান যে দলটি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিনিধিত্ব করছে, তাদের সামর্থ্য আছে জানিয়ে ক’দিন আগে বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেছিলেন, এবার অন্তত সাহস দেখানো উচিত বাংলাদেশের, খেলা উচিত স্পোর্টিং উইকেটে। মিরপুর স্টেডিয়ামে বছরের বিভিন্ন সময়ে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলও মনে করেন মিরপুরে এরচেয়ে অনেক ভাল উইকেট বানানো সম্ভব। বিশ্বকাপ মাথায় নিয়ে কিউইদের বিপক্ষে করা উচিত সেটাই। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে তারা যুক্তি দেখান যেহেতু বিগত বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্ত টি—টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জয়ের ধারায় ছিল না তাই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের আগে দলকে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে এনে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই ঘরোয়া উইকেট এইভাবে তৈরি করা হয়েছে। তবে তাদের সবারই মত, নিঃসন্দেহে এটা একটা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং এ পরীক্ষা—নিরীক্ষার ফল আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের জন্য ভালোও হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে।
ক্রিকেটে ঘরের মাঠে নিজেদের সুবিধামতো উইকেট তৈরি করে ফায়দা লোটার কাজটি একসময় করতো ভারত। কোনো দেশকে নিজেদের মাটিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেস্না উইকেটে স্পিনারদের ঘূর্ণি ফাঁদে ফেলে সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাততো ধোনি—কোহলিরা। তবে ফিরতি সফরে বিদেশের মাটিতে গিয়েই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তো তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। সিরিজ হারের লজ্জা নিয়ে ফিরতে হতো দেশে। এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনার পর আত্মাহুতির সে পথ থেকে সরে এসেছে ভারত। বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘরের মাঠের উইকেট বানিয়ে বর্তমানে দলটি সফলও হচ্ছে বিদেশের মাটিতে। যার প্রমাণ চলতি ইংল্যান্ড সিরিজেও।
উইকেট মন্থর হলে এক ঝাঁক স্পিনার লাগিয়ে ম্যাচ জেতার কৌশলই সোজা পথ। সেস্না বোলাররা হাত ঘোরালেই এখানে পেয়েছেন সাফল্য। এতে করে তাদের ভেতরে জমা হতে পারে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। উইকেট থেকে অনেক বেশি সাহায্য থাকায় তাদের মূল্যায়ন করার অবস্থাও তাই থাকছে না। বিশ্বকাপে তাই দল নির্বাচনে সমন্বয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়বে বিসিবির জন্য। ভালো উইকেটে না খেললে আদর্শ সমন্বয় খুঁজে বের করাও যে কঠিন। তাই দেশের ক্রিকেটে বৃহত্তর স্বার্থে অতিসত্ত্বর এমন বাজে দৃষ্টান্ত থেকে সরে এসে বিশ্বমানের ক্রিকেট খেলতে দেশের মাটিতে স্পোটিং উইকেট তৈরি করতে উদ্যোগী হতে হবে বিসিবিসহ ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলকেই। নইলে শুধু এই উইকেটের জন্যই ভবিষ্যতে দেশের ক্রিকেটের জন্য অপেক্ষা করছে অশনি সঙ্কেত!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।