Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাক্কানিদের নিষেধাজ্ঞা বাতিল নিয়ে ভারত কেন উদ্বিগ্ন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২১, ৪:২২ পিএম

ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আফগানিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। আশরাফ গনি সরকারের কাছে তার একটাই অনুরোধ ছিল— আফগানিস্তানে বন্দি আনাস হাক্কানিকে জেরা করে ভারতে আইএসআই-এর হামলার ছক সম্পর্কে যে কোনও তথ্য মিললে, তা যেন দিল্লিকে জানানো হয়। কারণ ২০০৮ ও ২০০৯-এ হাক্কানি নেটওয়ার্ক আইএসআই-এর মদতেই আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়েছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি।

২০১৪ সালে আনাস হাক্কানিকে সিআইএ বাহরাইন থেকে গ্রেফতার করলেও তালেবানের হাতে বন্দি একজন আমেরিকান ও এক অস্ট্রেলীয় অধ্যাপকের মুক্তির বিনিময়ে ২০১৯-এ তাকে আফগানিস্তানের জেল থেকে ছেড়ে দিতে হয়। হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হাক্কানির পুত্র ও বর্তমানে ওই সংগঠনের প্রধান সিরাজুদ্দিনের ভাই আনাসই দোহায় তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠকে তাকেই প্রধান ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। আর তা দেখেই দিল্লির নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্তাদের রক্তচাপ বেড়েছে। তালেবান সরকারে হাক্কানি নেটওয়ার্ক প্রধান ভূমিকায় উঠে এলে, তা ভারতের জন্য উদ্বেগের বলেই দিল্লি মনে করছে।

একই সঙ্গে জালালুদ্দিন, সিরাজুদ্দিন হাক্কানি-সহ তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের উপরে এত দিন জাতিসংঘের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা এ বার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে তুলে নেয়া হতে পারে। এটি নিয়েও ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০১১-তে জাতিসংঘে তালেবান নিষেধাজ্ঞা কমিটি তৈরি হয়। সংগঠনের নেতাদের আর্থিক লেনদেন, অস্ত্র কেনাবেচা, যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দিল্লি বরাবরই এই নিষেধাজ্ঞা কমিটিকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন ভারতের শঙ্কার কারণ হল, আমেরিকার সঙ্গে তালেবানের চুক্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়টি রয়েছে বলে খবর মিলছে।

ভারতের সরকারি সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি মানেই যে জাতিসংঘ হাক্কানিদের উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেবে, এমন নয়। আমেরিকা, চীন একমত হলেও বাকিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিষেধাজ্ঞা তোলার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীনের সাথে রাশিয়া ও ব্রিটেনও তালেবানকে সমর্থন দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ফ্রান্স নীরব থাকলেও বাকি ৪ দেশের বিরুদ্ধে যাবে বলে মনে হয় না। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগস্ট মাসে নিরাপত্তা পরিষদ পরিচালনার ভার ভারতের হাতে থাকলেও গোটা বিষয়ে ভারতের কিছুই করার নেই।

ভারতের চিন্তা আরও বাড়িয়ে তালেবান এখন কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব কার্যত হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোদ্ধাদের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ স্টেশন, নিরাপত্তা বাহিনীর পরিকাঠামো সবই হাক্কানিদের নিয়ন্ত্রণে। তারা এখনও পর্যন্ত কাবুলের নাগরিকদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করছে। বিশেষ করে তাজিক, হাজারা সম্প্রদায় ও মহিলাদের সঙ্গে তাদের ব্যবহারে কাবুলের নাগরিকরাও বিস্মিত। দিল্লির নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা মনে করছেন, হাক্কানিরা সরকারে অংশ নেবে বলেই ভাবমূর্তি বদলাতে চাইছে।

কেন হাক্কানি নেটওয়ার্ক নিয়ে ভারতের এত মাথাব্যথা? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, হাক্কানি নেটওয়ার্ক তালিবানের সব থেকে লড়াকু বাহিনী। তালেবান নেতৃত্বের অংশ হলেও তারা অনেকাংশেই স্বাধীন। অধিকৃত কাশ্মীরের নির্যাতিত মুসলিমদের প্রতি তাদের সহমর্মিতা রয়েছে। এ কারণে গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জাতিসংঘে তালেবানের সমালোচনা না করলেও হাক্কানি নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সূত্র : এবিপি।



 

Show all comments
  • md mia ২৩ আগস্ট, ২০২১, ৫:১৬ পিএম says : 0
    Alhamdulillah
    Total Reply(0) Reply
  • জ্ঞান সন্ধানী বালক ২৩ আগস্ট, ২০২১, ৭:১৫ পিএম says : 0
    কারণ, এখানে দাদাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন জাগে!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ