Inqilab Logo

সোমবার ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শঙ্কা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু

ঢাকা শিশু হাসপাতালে একদিনে ৮০ রোগী ভর্তি চলতি বছর মারা গেছেন ৩৫ জন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে আসছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার তান্ডব কমছে প্রায় তিন মাস পর। কিন্তু রাজধানী ঢাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে ডেঙ্গু নিয়ে। করোনার ভেতরেই ডেঙ্গুর মারাত্মক রূপ নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সময় মতো মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ অনেক আগেই ডেঙ্গুর বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে সতর্ক করে মশা নিধনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারে ডেঙ্গুতে শিশুদের পাশাপাশি তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ব্যক্তিগত চেম্বারেও একই অভিজ্ঞতা চিকিৎসকদের। হাট-বাজারের ফার্মেসীগুলোতে জ্বরের ওষুধের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু করোনা এবং ডেঙ্গু দুটোর লক্ষণ ও উপসর্গই হচ্ছে জ্বর। তাই জ্বর হলে কেবল করোনা নয়, ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঢাকায় ডেঙ্গু বেড়ে চলেছে। করোনার এই সময়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কেউ বুঝতে পারছে না। নীরবেই ডেঙ্গু বাড়ছে। এখনই নজর দেওয়া না হলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন ২৭৮ জন ভর্তি হয়েছেন। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ২৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৬ জনে। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৫ জন। গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ ৮০ জন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম জানান, গত জানুয়ারি থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৫৪ জন। বর্তমানে এ হাসপাতালে ৮০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ১৪ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানতে চাইলে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত¡বিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, গত জুন মাসেই ডেঙ্গুর বিষয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়ে ছিলাম। আর বর্তমান যে অবস্থা সেটা চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। যদি সেটা থাকে তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখনকার চেয়ে বাড়বে না। আসলে সিটি কর্পোরেশন কাজের চেয়ে কথা বেশি বলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, লকডাউনের ভেতরে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গিয়েছে, আর এই সুযোগে মশা আরামে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পেয়েছে। কেবল বাড়ি-ঘর নয়, অফিস, দোকানপাট সবই বন্ধ ছিল। এ কারণে বংশ বৃদ্ধি করায় ডেঙ্গু বেড়েছে। তাই সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তবে আগামী সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর নাগাদ এটা বাড়তেই থাকবে। এরপর শীত এলে হয়তো কমবে।

৫ জন শিশু গত জুলাইয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর মধ্যে ৬ বছর ২ মাসের এক শিশু করোনায়ও আক্রান্ত ছিল। খিলগাঁওয়ের এই শিশুটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে করোনা ধরা পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে এ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ বছরে এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৯ জন ছাড়া গত জুলাইয়ে ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানায়।

গত ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করে বলেন, ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি তাতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি না হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। যদি রোগীর সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে এই ৬ হাজার ৬৫০ জন রোগীর বিপরীতে ২৬ মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৪০৫ জন। অথচ এ বছরের চলতি মাসের ২০ দিনেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮১৪ জন। অথচ এ বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারীতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৬ জন।

কয়েক দিন আগে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, কারো জ্বর হলে এখন করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষাও করতে হবে। সারা দেশে সিভিল সার্জনদের কাছে পর্যাপ্ত এনএস-১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে।

ডেঙ্গু রোগীদের সম্পর্কে বেসরকারি গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক বলেন, শিশুটির পরিবার স্বাভাবিক ভাইরাস জ্বর হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু শিশুটি যখন অজ্ঞান হয়ে যায়, তারপর হাসপাতালে আনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। রোগীরা এখন একেবারে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় এসে ভর্তি হচ্ছেন, তার আগে আসছেন না। অনেক রোগীই পাচ্ছি ভর্তি হচ্ছেন যখন তার ১২ থেকে ১৩ হাজার প্লাটিলেট। ১২ থেকে ১৩ হাজার প্লাটিলেট কাউন্ট সমস্যা নয়, কিন্তু ১২ থেকে ১৩ হাজার প্লাটিলেট নিয়ে আসা মানে তিনি আরও আগে থেকেই আক্রান্ত। কিন্তু তারা সেটা জানতো না বা জানলেও সঠিক গাইডেন্স পাচ্ছিল না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ