মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আফগানিস্তানে তালেবান ফের ক্ষমতায় বসার উপক্রম হওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লিকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করেছে ভারত। যে অর্থে তৈরি হয়েছে বাঁধ, রাস্তাঘাট থেকে আফগান সংসদ ভবন। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত কারণে আফগান-ভূমে প্রভাব বাড়িয়েছিল দেশটি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের ৩ বিলিয়ন ডলার সম্ভবত পানিতে গেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
ন্যাটো ও মার্কিন বাহিনী সেনা প্রত্যাহার করতেই আফগানিস্তানে তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। ফলে ২০ বছরে নয়াদিল্লি-কাবুলের যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠছিল তা ধাক্কা খেতে চলেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চলা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি ভারত।
৯/১১ হামলার পর আফগানিস্তানে প্রভাব বাড়াতে তৎপর হয় নয়াদিল্লি। ২০১১ সালে ভারত-আফগানিস্তান কৌশলগত সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। তারপর থেকে পরিকাঠামো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাঁধ নির্মাণে অর্থসহযোগিতা শুরু করে ভারত সরকার। ২০২০ সালে নভেম্বরে জেনেভা শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, আফগানিস্তানের এমন কোনো অংশ নেই যেখানে ভারত নেই। ৩৪টি প্রদেশে চলছে চারশটির বেশি প্রকল্প।
হেরাট প্রদেশে ৪২ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে তালেবানের হামলায় ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে একাধিক ভারতীয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালে বিদ্যুৎপ্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। এ বাঁধ এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।
২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছে ভারতের বর্ডার রোড অরগানাইজেশন। ইরান সীমান্তের কাছাকাছি এ এলাকা। কান্দাহার, গজনি, কাবুল, মজহর-ই-শরিফ ও হেরাট শহরকে ছুঁয়ে গেছে এ রিং রোড। পাকিস্তানকে এড়িয়ে এ রাস্তা ধরে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারত নয়াদিল্লি। অতিমারির সময়ে চাবাহার দিয়ে আফগানিস্তানে ৭৫ হাজার টন গম পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। এ রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছে ছয় ভারতীয় নাগরিকের।
কাবুলে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে সংসদ ভবন নির্মাণ করেছে ভারত। ২০১৫ সালে সেটির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের প্রতি এটি ভারতের শ্রদ্ধার্ঘ্য বলে জানান তিনি। সংসদ ভবনের একটি ব্লকের নামকরণ করা হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামে।
এছাড়া কাবুলে বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে ফুল-ই-খুমরি বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০০ কেভি ডিসি ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি হয়েছে। টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিও করেছে ভারতীয়রা।
কাবুলে একটি শিশু চিকিৎসাকে নতুন করে গড়ে তুলেছে নয়াদিল্লি। ইন্ডিয়ান মেডিকেল মিশনের আওতায় জায়গায় জায়গায় বিনামূল্যের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বহু ক্লিনিক তৈরি করেছে নয়াদিল্লি।
স্কুলের বেঞ্চ, ডেস্ক ও গ্রামাঞ্চলে সৌর প্যানেল তৈরি করেছে ভারত। কাবুলে একাধিক সুলভ শৌচালয়। এছাড়া পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ, স্কলারশিপ ও ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ভারত।
জেনেভা সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানে শতুত বাঁধ তৈরি করছে ভারত। ২০ লাখ মানুষ পাবেন পানীয় জল। প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে প্রায় ১০০টি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করা হয়।
প্রশ্ন উঠছে, ভারতে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কি জলে গেল? দেশটির সাবেক স্পেশাল ফোর্স অফিসার লেফট্যানান্ট জেনারেল পিসি কাটোচের কথায়, আফগানিস্তানে স্থিতাবস্থা আনতে সক্ষম হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই ভেবেই ভারত বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু আমেরিকা তালেবানের হাতে ছেড়ে দিল আফগানিস্তানকে। তেমন এটাও ঠিক, ভারতের প্রতি সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক সহৃদয়। সেটাই পরে কাজে দেবে। দেশগঠনে ভারতের সহায়তা দরকার পড়বে তালেবানের। অতীতের থেকে এ তালেবান আলাদা। আর তাদের মুখপাত্র তো বলেই দিয়েছে, নিজেদের ভূখণ্ডকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবে না। ভারত উন্নয়নের কাজকর্ম চালিয়ে যাবে বলেও তারা বিশ্বাস করে।
সূত্র: জিনিউজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।