Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালেবানের শক্তির উৎস কী?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

আফগানিস্তানে তালেবানের অবিশ্বাস্য সামরিক সাফল্যের দিকে আফগান সরকার তো বটেই, পুরো বিশ্বই এখন হা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কারণ গত সাত দিনে ডজন-খানেকের বেশি প্রাদেশিক রাজধানী শহর তাদের দখলে চলে গেছে। এক্ষেত্রে আরও যা বিস্ময়কর তা হলো, এগুলোর মধ্যে সাতটিই হলো আফগানিস্তানের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ, যেখানে তালেবান অতীতে কখনই তেমন কর্তৃত্ব করতে পারেনি।

প্রশ্ন উঠছে, ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে গত ২০ বছর ধরে ক্রমাগত আমেরিকা এবং নেটো বাহিনীর তাড়া খেয়ে বেড়ানোর পরও তালেবান কীভাবে এই সামরিক শক্তি দেখাতে পারছে? যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক এবং আফগান রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডক্টর আসিম ইউসুফজাই বলেন, গত ১০ বছর ধরে এই কৌশল নিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়েছে তালেবান। তারা জানতো আমেরিকা এক সময় আফগানিস্তান ছাড়বেই। শুধু সময়ের অপেক্ষা করছিল তারা। তিনি আরও বলেন, আমেরিকানদের কৌশল ছিল আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলোকে কব্জায় রাখা। কিন্তু শহরের বাইরে গ্রাম-গঞ্জ তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থেকে গিয়েছিল। তারপর এক সময় যখন আমেরিকা আফগান সেনাবাহিনীর ওপর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে শুরু করলো, তালেবান তখন আস্তে আস্তে শহরগুলো নিশানা করতে শুরু করে।

এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন হঠাৎ ১১ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান, তখন থেকে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ঘুম হারাম করে দিয়েছে তালেবান। গত দুই মাসে ঝড়ের গতিতে দেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলা দখলের পর গত এক সপ্তাহ ধরে পতন হচ্ছে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক রাজধানী শহর। ইউসুফজাই মনে করছেন যে রণকৌশলে খুবই বিচক্ষণতার পরিচয় দিচ্ছে তালেবান। জাতিগত পশতুন অধ্যুষিত দক্ষিণ এবং পূর্বের বদলে তারা শক্তি নিয়োগ করেছে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশগুলোতে, যেখানে সরকারি বাহিনী এবং সরকার সমর্থিত মিলিশিয়াদের শক্তি বেশি।

মাস-খানেক আগে এক হাজারেরও বেশি সরকারি সৈন্য দলত্যাগ করে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে পালিয়ে যায়। তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও তাজিকিস্তানের সীমান্তবর্তী বাদাখশানে তারা ঢুকতে পারেনি। অথচ সেই প্রদেশ এখন তাদের দখলে। এছাড়া, তাখার, কুন্দুজ এবং জারাঞ্জের মত প্রদেশ, যেখানে পশতুনরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, সেগুলোও যেভাবে তেমন বড় কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই তালেবান দখল করেছে, তা বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। ইউসুফজাই বলছেন, তালেবান মূলত জাতিগত পশতুন এবং কট্টর সুন্নী ওয়াহাবী ভাবধারার একটি গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত হলেও গত কয়েকবছর ধরে তারা আফগানিস্তানের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। তালেবানের সেই চেষ্টা যে ফল দিচ্ছে, বাদাখশানের মত তাজিক অধ্যুষিত প্রদেশ কব্জা করার ঘটনা তারই্ ইঙ্গিত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণাধর্মী মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসিতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলছে, হতাশ তাজিক, তুর্কমেন এবং উজবেক গোষ্ঠী নেতাদের অনেকেই তালেবানে যোগ দিচ্ছে। যার ফলে, তালেবান তাদের চিরাচরিত প্রভাব বলয়ের বাইরেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারছে। উত্তর-পূর্বের প্রদেশ বাদাখশানে অনেক তাজিক যোদ্ধা এখন তালেবান। একইভাবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ফারিয়াব প্রদেশে অনেক তুর্কমেন যোদ্ধা এখন তালেবান। উত্তরের যোজযান প্রদেশে উজবেক অনেক যোদ্ধাকেও দলে ঢোকাতে সমর্থ হয়েছে তালেবান।

ইসলামাবাদে সিনিয়র সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাহিদ হোসেন বলেন, শুধু সাধারণ যোদ্ধাই নয়, বর্তমানে তালেবানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশই তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন এবং হাজারা সম্প্রদায়ের। এ বছর জানুয়ারিতে তালেবানের শীর্ষ নীতি-নির্ধারণী পরিষদ, যেটি রাহবারি শুরা বা কোয়েটা শুরা নামে পরিচিত, তাতে কমপক্ষে তিনজনকে নেয়া হয়েছে যারা জাতিগত পশতুন নন। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো প্রদেশে তালেবানের নিয়োগ দেওয়া ছায়া গভর্নররা জাতিগত পশতুন নন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এসব যোদ্ধা এবং গোষ্ঠী নেতাদের অনেকেই কাবুল সরকারের ওপর বিভিন্ন কারণে নাখোশ, যেটাকে কাজে লাগিয়েছে তালেবান। তারা এসব অসন্তুষ্ট গোষ্ঠী নেতাদের ভরসা দিচ্ছে যে, তাদের সাথে যোগ দিলে নিরাপত্তা এবং মর্যাদা মিলবে। একইসাথে তালেবান তাদের বলছে, কাবুল সরকারের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ শুধু পশতুনদের যুদ্ধ নয় বরঞ্চ ‘ইসলামী আমিরাত’ সৃষ্টির যুদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা কার্নেগী এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সাম্প্রতিক এক প্রকাশনায় গবেষক জাইলস দোরোনসোরো ‘তালেবানের যুদ্ধ জয়ের কৌশল’ শিরোনামে এক গবেষণা রিপোর্টে লিখেছেন, তালেবানের বুদ্ধিমত্তা এবং সক্ষমতাকে খাটো করে দেখেছে নেটো জোট। ‘তালেবানকে নিয়ে ভ্রান্ত কিছু ধারণা আন্তর্জাতিক বাহিনীর সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তারা ভেবেছিল তালেবান অনেকগুলো গোষ্ঠীর একটি নড়বড়ে কোয়ালিশন, যারা শুধুই স্থানীয়ভাবে শক্তিধর।’ কিন্তু বাস্তবে, জাইলস দোরোনসোরো বলেন, তালেবান খুবই শক্তিধর একটি সংগঠন যাদের জুতসই কৌশল রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে এবং সমন্বয় রয়েছে। ‘তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা এবং প্রোপাগান্ডা খুবই কার্যকরী। স্থানীয় কমান্ডারদের যথেষ্ট স্বাধীনতা রয়েছে, ফলে পরিস্থিতি বুঝে তারা দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

টানা ২০ বছর আমেরিকান এবং নেটো বাহিনীর সাথে লড়াই করে টিকে থাকার মত টাকা-পয়সা, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, বুদ্ধি কে জুগিয়েছে তালেবানকে? ইউসুফজাই মনে করেন, টাকা-পয়সা বা অস্ত্রের জন্য তালেবানের অন্যের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ মাদকের ব্যবসা থেকে তালেবান প্রচুর পয়সা পায়। ‘আমেরিকা এবং ইউরোপে হেরোইনের যে বাজার, তার ৯০ শতাংশ আসে আফগানিস্তান থেকে। দেশের দক্ষিণে আফিমের চাষ থেকে শুরু করে হেরোইন তৈরি এবং এর চোরাচালানের ওপর কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে তালেবান।’ জাতিসংঘের যে কমিটি তালেবানের ওপর নিয়মিত নজরদারি করে, তাদের দেয়া এক হিসাব বলছে যে আফিম চাষ, চাঁদা এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কর বসিয়ে তালেবান বছরে ৩০ কোটি ডলার থেকে ১৬০ কোটি ডলার ডলার পর্যন্ত আয় করে। এক হিসাবে, ২০২০ সালে শুধু আফিম চাষ থেকেই তালেবানের আয় ছিল ৪৬ কোটি ডলার। তবে এই আয়ের সুনির্দিষ্ট হিসেব পাওয়া সম্ভব নয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Universal Stand ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 2
    এর কোন বস্তুবাদী ব্যাখ্যা নেই। আপনি এর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু দিন শেষে শুধু দিশেহারাই হবেন। তাঁরা ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান ও মহান আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত। তাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবেনা।
    Total Reply(1) Reply
    • jack Ali ১৪ আগস্ট, ২০২১, ৫:০৭ পিএম says : 0
      This man gave dislike because he the grandfather of Ibless. Allah will throw him in the Hell;;;;;; InshaAllah. or May Allah guide him into Islam. Ameen
  • Sifat Milton ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪১ এএম says : 0
    সংখ্যা এবং সামরিক শক্তি তে অনেক বেশি/বড় (তিন গুণ এর ও বেশি/বড়) হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন সমর্থন পুষ্ট আফগান বাহিনী তালেবান বাহিনীর সাথে পেরে উঠছে না। নিশ্চই তাহলে তারা নৈতিক ভাবে চরম দূর্বল যার প্রভাব পড়ছে তাদের সামরিক শক্তিতে। হামিদ কারজাই এর উত্তরসূরী আশরাফ ঘানি এবং তাদের সমর্থকদের বুঝতে হবে যে ২০ বছর আগে বৈধ সরকার কে মার্কিনিরা ক্ষমতাচ্যুত করে কিছু বেইমান কে তাঁবেদারকে পুতুল সরকার বানিয়ে দিয়েছিল। আর বেইমান এর কোন নৈতিকতা থাকে না। এই বিশ বছরেরও নিজেদের জনপ্রিয় করতে পারে নি, নিজেদের সরকারের বৈধতাও আর্জন করতে পারেনি। আজ যখন নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান বৈধ শাসক রা জনগণের সমর্থন নিয়ে প্রবল শক্তিতে ফিরে আসছে তখন অবৈধ বেঈমান রা সামরিকভাবে শক্তিশালী হলেও ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Sohel ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪১ এএম says : 0
    তালেবানের শক্তির উৎস হচ্ছে সর্বশক্তমান আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করা আর"" জিহাদ ফি ছাবিলিল্লাহ"" বাচলে গাজী মরলে শহীদ। জমিন যার আইন চলবে তার,,, এটাই শক্তি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahin Mojumdar ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
    তাদের শক্তির উৎস হচ্ছে. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahshan Ahmed ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
    তাদের শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে ঈমান। এই জিনিসটাই তাদের ঠিকিয়ে রেখেছিল এবং আগামীতেও ঠিকিয়ে রাখবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাদের যতই জংগী -জংগী ট্যাগ দিক, কোন সমস্যা নাই।তারা তাদের মাতৃভূমিকে মার্কিন দখলদারি -যুদ্ধবাজদের হাত থেকে রহ্মা করে যাচ্ছে। গত ২/৩ মাস থেকে যা নিউজ দেখছি তাতে মনে হচ্ছে আফগানদের প্রিয় তালিকায় রয়েছে তালেবানরাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Arif Sheikh Manik ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
    তাদের শক্তির উৎস খাঁটি ইমান, আর শক্তি দাতা সয়ং আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • ওমর ফারুক ১৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:০০ এএম says : 0
    তালেবান জিন্দাবাদ,আফগান সরকার নিপাত যাক ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Alam. ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫১ এএম says : 0
    ???? Taleban no terrorists. They are really Muslim. Islam is the complete code of life. So, they are successfully ing sha-Allah. Oh Allah help them. ✔️
    Total Reply(0) Reply
  • jack Ali ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:৪৪ পিএম says : 0
    Victory comes from Allah, if we see in the past when muslim were few in numbers and they didn't proper weapon but they defeated two super power and muslim become superpower. O'Allah change the heart of Muslim to real Muslim who will follow strictly Qur'an and Sunnah then again we will unite all so called muslim populated country under one banner of Islam and then again we will be able to destroy all kafir super power and bring peace in the whole world.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ