নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জীবনের ৩৪টি বসন্তের ২১টিই কেটেছে এই আঙিনায়। মেরুণ-হলুদ জার্সি গায়ে চড়েছেন উত্থানের গগণে। অবশেষে লিওনেল বিদায় জানালেন তার শৈশবের ক্লাবকে, যে ঠিকানার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। যে ক্লাবে এতদিনের স্মৃতি, এত সুখ-দুঃখের স্মৃতি মেদুরতা, সেখান থেকে বিদায় নেওয়াটা তো বড় কষ্টেরই। তবে বাস্তবতা বড় কষ্টের, বেদনার। সেই আবেগ লুকানোর কোনো চেষ্টাই করেননি লিওনেল মেসি। আর করলেও পারতেন কিনা সন্দেহ...। স্ব-পরিবারে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসেছিলেন মেসি, হয়তো শেষবারের মতো। দীর্ঘ দিনের সতীর্থ জেরার্ড পিকে, জর্ডি আলবাসহ বার্সার সকল খেলোয়াড়ই কক্ষে উপস্থিত। ক্যাম্প ন্যু-র সামনে অসংখ্য ভক্ত-সমর্থকের জটলা। সকলে চোখের কোনই চিকচিক করছে নোনা অশ্রচতে। দীর্ঘ দিনের বন্ধন ছিন্ন হওয়ার দুঃখে ছোট্ট শিশুর মতো মেসি ভেঙে পড়লেন কান্নায়, কাঁদালেন গোটা বিশ্বকেও। কিংবদন্তির বিদায়ী ভাষণের চৌম্বক অংশ দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন ইমরান মাহমুদ
গত বছরের চেয়ে এ বছরটা ভিন্ন
মেসি : গত কয়েকদিনে অনেক ভেবেছি কী বলব এখানে। সত্যিটা হচ্ছে কী বলব বুঝে উঠতে পারছি না। জীবনের এতগুলো বছর এখানে কাটানোর পর আমার জন্য দিনটা অনেক বেশি কঠিন। গত বছর বুরোফ্যাক্স নিয়ে নাটকের সময় (ক্লাব ছাড়তে হলে) আমি কী বলব সেটা ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু এ বছর সবকিছু অনেক ভিন্ন। এটা আমার ঘর, আমাদের ঘর। আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটাই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আজ সবকিছু ছেড়ে যেতে হচ্ছে।
২১ বছরের সম্পর্কের শেষ
মেসি : ১৩ বছর বয়সে এখানে এসেছিলাম আমি। আজ ২১ বছর পর ক্লাবটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমি, আমার স্ত্রী, আমার তিন কাতালান-আর্জেন্টাইন সন্তান... (কান্না)। ক্লাবটাতে যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত।
দর্শকহীন মাঠে বিদায়
মেসি : দেড় বছর ধরে মাঠে আমাদের সমর্থকদের দেখতে পাইনি। তাঁদের না দেখে বিদায় নিতে হচ্ছে, এই ব্যাপারটাই বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তবে আমি এখানে আবার ফিরব, এটা আমার ঘর। আমার সন্তানদেরও আমি কথা দিয়েছি, আমি আবার এখানে ফিরে আসব। এভাবে বিদায় নিতে হবে কখনো ভাবিনি। মনে হয় না কেউই ভেবেছে। চেয়েছিলাম মাঠভর্তি দর্শকের শেষ একবারের অভ্যর্থনার মধ্যে বিদায় নিতে... (আবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মেসি)।
বার্সায় কোনো একটা মুহ‚র্ত বেছে নিতে বলা হলো মেসিকে
মেসি : এত এত মুহ‚র্তের মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়া কঠিন। কত শত দারুণ মুহ‚র্ত কেটেছে, কিছু কঠিন মুহ‚র্তও ছিল। তবে একটি বেছে নিতে হলে আমি বলব, আমার অভিষেক। সেখান থেকেই সবকিছুর শুরু, আমার প্রথম স্বপ্ন প‚রণ।
কী হয়েছে আসলে?
মেসি : আমি ভেবেছিলাম সবকিছু চ‚ড়ান্ত হয়ে গেছে, সব বিষয়ে সম্মতি হয়ে গেছে। এরপর একেবারে শেষ মুহ‚র্তে জানা গেল লা লিগার নিয়মের কারণে চুক্তি নবায়নকে আনুষ্ঠানিক করা সম্ভব হচ্ছে না। এটাই হয়েছে।
ক্লাবের পক্ষ থেকে চেষ্টা
মেসি : ক্লাবের ভেতরে কী হয়েছে আমি বলতে পারছি না। লাপোর্তা বলেছেন, চুক্তি নবায়ন হয়নি লা লিগার নিয়মের কারণে। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, আমি এখানে থাকার জন্য যা কিছু করা সম্ভব সব করেছি। থাকতে চেয়েছি আমি। গত বছর চাইনি, সেটা বলেছিও। এ বছর আমি থাকতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি।
নতুন চ্যালেঞ্জ
মেসি : এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি এই ক্লাবটা, এই জায়গাটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমার জীবন পুরো বদলে যাচ্ছি। এখন আবার শ‚ন্য থেকে শুরু করতে হবে। বড় বদল এটা, আমার পরিবারের জন্যও এই শহর ছেড়ে যাওয়া কঠিন হবে। তবে আমরা ঠিকঠাকই থাকব। কঠিন চ্যালেঞ্জ এটা, তবে এটা মেনে নিতেই হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে।
পিএসজিতেই যাচ্ছেন?
মেসি : পিএসজি একটা সম্ভাবনা। তবে সত্যি বলতে আজ পর্যন্ত কারও সঙ্গেই কিছু চ‚ড়ান্ত হয়নি। (বার্সার পক্ষ থেকে মেসির চুক্তি নবায়ন না হওয়ার) বিবৃতি যখন এসেছে, এরপর থেকে অনেক ফোন এসেছে, অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চ‚ড়ান্ত হয়নি। আমরা এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
মানুষ কীভাবে তাঁকে মনে রাখবে?
মেসি : বিনয়ী থেকে, সবাইকে সম্মান দেখিয়েই এই ক্লাবে বেড়ে উঠেছি আমি, চাইব মানুষ আমাকে সেভাবেই মনে রাখুক। পাশাপাশি মাঠে যা করেছি সেটাও মনে রাখুক।
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহ‚র্ত
মেসি : আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহ‚র্ত এটা, কোনো সন্দেহ নেই। ক্যারিয়ারে অনেক অনেক কঠিন মুহূর্ত এসেছে, অনেক হার সয়েছি, কিন্তু ওসবের পর অনুশীলনে ফেরার, জবাব দেওয়ার সুযোগ থাকে। এখানে (এই কঠিন মুহূর্তের) তো পাল্টা জবাব দেওয়ার কিছু নেই। এই ক্লাবে আমার সময় শেষ। অবশ্যই এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত।
কষ্ট হচ্ছে মেসির
মেসি : ক্লাবটা ছাড়তে হচ্ছে, এটাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ক্লাবটাকে আমি ভালোবাসি। এমন একটা মুহূর্ত আসবে, এটা আমি কখনো ভাবিনি। মিথ্যা বলছি না, সব সময়ই মনে যা আছে সেটা বলার চেষ্টা করেছি, সত্যিটা বলার চেষ্টা করেছি। গত বছর আমি ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলাম, এই বছর তা নয়। এ কারণেই কষ্টটা বেশি হচ্ছে।
তাঁকে ছাড়া বার্সা কীভাবে মানিয়ে নেবে
মেসি : বার্সা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাব, দারুণ একটা ক্লাব। খেলোয়াড় আসবে-যাবে। লাপোর্তা যা বলেছেন, যে কারও চেয়েই ক্লাব বড় - এটা সত্যি। সমর্থকেরা এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, সব সময়ই এমনটা হয়েছে। ক্লাবে অনেক দারুণ খেলোয়াড় আছে, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবেই চলবে।
লিগ সভাপতি হাভিয়ের তেবাসকে নিয়ে
মেসি : আমি শুধু জানি লা লিগার কারণে এটা (বার্সায় থাকা) সম্ভব হয়নি, ক্লাবের দেনার কারণে সম্ভব হয়নি। ক্লাবের পক্ষে দেনা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। তেবাসের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই, তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছেই মাত্র কয়েকবার। প্রতিবারই আলোচনাগুলো বন্ধুত্বপ‚র্ণই ছিল। তেবাসের সঙ্গে আমার কোনো বিবাদ নেই।
যখন আমি ফিরবেন...
মেসি : সবকিছু চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর গত কয়েকদিন খুব বেদনার ছিল। এখন যখন আমি বাড়ি ফিরব, সবকিছু আরও খারাপ লাগবে। তবে এই মুহ‚র্তটাতে আমার পরিবারের আরও কাছে থাকা দরকার, যাঁদের ভালোবাসি তাদের সঙ্গ দরকার। ফুটবল খেলে যাওয়া দরকার, যে কাজটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। একবার ফুটবল খেলতে শুরু করলে সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
পিএসজির কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কদিন আগের ছবি নিয়ে
মেসি : কোপা আমেরিকার সময়েই ঠিক করেছিলাম (ছুটির মধ্যে ইবিজাতে) ডি মারিয়া ও পারেদেসের সঙ্গে দেখা করব। নেই (নেইমার) তখন ফোন করল, সবার তাই একসঙ্গে দেখা হলো। ভেরাত্তিও ছিল। এটা শুধু একটা ছবিই। ওরা মজা করছিল, বলছিল, আমার উচিত পিএসজিতে যাওয়া। তবে এটা শুধু একটা ছবিই। এখানে আলাদা কিছু নেই, এর পেছনে কোনো গল্প নেই, বিস্ময়ের কিছু নেই। নিছকই ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা।
নির্বাচনের সময়ে লাপোর্তার সঙ্গে আলোচনা
মেসি : নির্বাচনের সময়ে লাপোর্তার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে গিয়েছিলাম, সেখানেই নিশ্চিত ছিলাম আমি এখানেই থাকছি। এ নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। এরপর যা হয়েছে তা তো দেখেছেনই, এটা (চুক্তি নবায়ন) সম্ভব হয়নি।
কখন চুক্তির আলোচনা থেমেছে?
মেসি : বার্সার যখন আর কিছু করার ছিল না তখনই চুক্তির আলোচনা থেমেছে। ক্লাব বুঝতে পেরেছে লা লিগা এটা (চুক্তি নবায়ন) হতে দেবে না। সম্ভবই ছিল না সেটা। এরপর আমারও ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হতো, যেটা এখন করব।
তার দিক থেকে আর কিছু করা সম্ভব ছিল কি না
মেসি : আগেও বলেছি, আমি থাকার জন্য যা করা সম্ভব সব করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না।
বার্সায় মেসির আক্ষেপ
মেসি : আমি আরও দু-একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাইতাম। লিভারপুলের বিপক্ষে সেমিফাইনাল (২০১৯), পেপের (গার্দিওলা) অধীনে চেলসির বিপক্ষে সেমিফাইনাল (২০১২)...। আমার কোনো আক্ষেপ নেই, সব সময় সব কিছু নিংড়ে দিয়েই চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়দের যে দারুণ একটা প্রজন্ম ছিল, তাতে আমরা আরও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারতাম।
মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে
মেসি : আমি বেতন ৫০ শতাংশ কমিয়েছি, সেটা নিয়ে দুই পক্ষের সম্মতি হয়েছে, এরপর তারা (বার্সা) আমার কাছে আরও কিছুর দাবি করেনি। অনেক কিছুই এখন (সংবাদমাধ্যমে) বলা হচ্ছে যেগুলো সত্যি নয়।
কেউ প্রতারণা করেছে কি না
মেসি : না, আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টায় সফলতা এল না। আপনি যখন নিয়মিত কথা না বলবেন, আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হবে। কিন্তু সেসবের সবকিছু সব সময় সত্যি হয় না। আমি শুধু আমার দিক থেকে কী হয়েছে সেটা বলতে পারি। আমি সব সময় সৎ থেকেছি, কাউকে ধোঁকা দিইনি। এটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ ছিল।
এই পশ্নোত্তর পর্বের সঙ্গেই শেষ হয় বার্সায় মেসির বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন। সবাই করতালি দিয়ে শেষবার বার্সায় অভিবাদন জানালেন মেসিকে। বার্সা-মেসির সম্পর্কের শেষ আনুষ্ঠানিকতাটুকুও যে শেষ হয়ে গেল তাতে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।