২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
রবিবার ২৫ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ২০২২। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, “ফার্মাসি ইউনাইটেড ইন একশন ফর আ হেলদিয়ার ওয়ার্ল্ড”। ২০১০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যদিও বাংলাদেশে সেটা হতে সময় লেগেছে আরও ৪ বছর অর্থাৎ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে। ১৯১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশনের (এফআইপি) প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয় তাই আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশনের উদ্যোগে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ইস্তাম্বুল সম্মেলনে ২৫ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে সারাবিশ্বে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। এফআইপি-র সদস্য সংগঠনগুলো সহ সারা বিশ্বজুড়ে ফার্মাসিস্টরা উদযাপন করে থাকে।
আর বাংলাদেশে ২০১৪ সালে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ প্রথমবারের মত এই দিবসটি পালন করে। এর পর থেকে প্রতিবছর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন ফার্মেসী পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ বড় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে উৎসাহের সঙ্গে র্যালি ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, সেমিনার ও বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে দিবসটি নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে। এর আগে বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টদের পালনের জন্য বিশেষায়িত কোনো দিবস ছিল না। দোকানে ওষুধ বিক্রি করেন বা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন যারা, তাদের বলা হয় ফার্মাসিস্ট। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটটা এর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। খুব কম মানুষই জানেন এর বাইরেও ফার্মাসিস্টদের বহুমুখী ক্ষেত্র আছে। দেশ এগোচ্ছে, এখন সময় আরেকটু বিশদভাবে জানার। যারা কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে বিফার্ম (ব্যাচেলর অব ফার্মেসি) পাস করে থাকেন, তাদের বলা হয় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বা এ- গ্রেড ফার্মাসিস্ট।
এসব ফার্মাসিস্টের ফার্মেসি কাউন্সিল অফ বাংলাদেশ থেকে এ-গ্রেড ফার্মাসিস্ট রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়ে থাকে, যা পরবর্তী কর্মজীবনে দরকার হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে থাকে। আর আমরা খুব ভালো করেই জানি, উন্নততর জীবনের জন্য, সমৃদ্ধ জাতির জন্য চাই সুস্থ ও সাবলীল মানুষ, চাই চেতনাস্নিগ্ধ আলোকিত ঋদ্ধ মানুষ। একটি সুন্দর সাবলীল জীবনের জন্য সুস্থ থাকা অনিবার্য। জীবনের অনন্ত চাহিদার মধ্যে সুস্থতাই প্রথম চাওয়া। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
বর্তমানে দেশে জনগণ সরকারি ও বেসরকারি খাতে যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে তা পরিসর ও গুণগত মানের দিক থেকে আরো উন্নীত করা প্রয়োজন। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-র মূলমন্ত্র ছিল ‘সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা’। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফার্মেসি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ফার্মেসিকে একটি পেশাগত বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় ডাক্তার ও নার্সের ভূমিকা যেমন অপরিসীম, ঠিক তেমনিভাবে ওষুধের সংরক্ষণ, গুণগত মান, সঠিক ওষুধ নির্বাচন ও ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের ভূমিকাও অপরিহার্য।
গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা নিজেদের পেশাগত দক্ষতা দিয়ে ওষুধশিল্পে (উৎপাদন, মাননিয়ন্ত্রণ, মানের নিশ্চয়তা বিধান, গবেষণা ও উন্নয়ন, বিপণন, উৎপাদন পরিকল্পনা, ডিসপেন্সিং, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ারস, বিজনেজ ডেভেলপমেন্ট ও রপ্তানি) সরকারি সংস্থায়, বেসরকারি হাসপাতালে, কমিউনিটি ফার্মেসিতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ওষুধশিল্পের বিকাশে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং ১৮২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা দেশের বড় ওষুধ কম্পানিগুলোতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন।
পরিশেষে বলতে চাই এই বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রাণ হলো ফার্মাসিস্টরা। একজন ফার্মাসিস্টের কর্মক্ষেত্র শুধু ওষুধ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানে নয় বরং ওষুধ নিয়ে গবেষণামূলক কাজ, ঔষধ প্রশাসনের মাধ্যমে কাজ করে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ, এমনকি মডেল ফার্মেসি বা মডেল মেডিসিন শপের উদ্যোক্তাও হতে পারে। ফার্মাসিস্টদের পরিশ্রম এবং কর্ম-সততার ওপর নির্ভর করছে দেশের সিংহভাগ রোগীর আরোগ্য। সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, অনুদান সংস্থা সকলেই প্রস্তুত উন্নত ওষুধ সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু এই কর্মযজ্ঞ তখনই সফল হবে যখন ফার্মাসিস্টগণ এগিয়ে আসবে উন্নত ওষুধ সেবা আন্দোলনের কান্ডারি হিসেবে দেশ এবং জনগণের কাছে নিরাপদ ওষুধ সেবা পৌঁছে দেবে, সফল করবে এই মহান আন্দোলন, এটাই কাম্য। আর আজ বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে একটি কথাই বলতে চাই-বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দিতে এবং একটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কাজে লাগাতে হবে। তাদের জ্ঞান, শিক্ষা ও দক্ষতা এ দেশের ওষুধশিল্প খাতকে যেমন উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যাবে, তেমনি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা সর্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে। আর এটাই হচ্ছে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মগবাজার মিডিয়া পাড়া ঢাকা
ইমেইল: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।