নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২০০০ সালে একটি রেস্তোরাঁয় টিস্যু পেপারে মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোরকে চুক্তি করিয়ে যে যাত্রার শুরু, সেটি শেষ হলো এক হৃদয় ভঙের বেদনার কাব্য দিয়ে। বার্সেলোনায় থাকতে চেয়েছিলেন লিনেওল মেসি, যার জন্য ৫০ শতাংশ বেমন কমিয়েও ছিলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। তাকে রাখতে চেয়েছিল ক্লাব, যে জন্য অনেক তারকাকে ছেড়েও দিয়েছিল কাতালান জায়ান্টরা। তবে লাভের লাভ কিছুই হয়নি, আর্থিক টানাপোড়েনে দলের ইতিহাসের সেরা তারকার সঙ্গে অনিচ্ছা বিচ্ছেদ ঘটাতে হলো বার্সেলোনাকে।
বাংলাদেশ সময়ে গতপরশু মধ্যরাত থেকে গোটা বিশ্বের সবচাইতে আলোচিত খবর, বার্সায় থাকছেন না মেসি। একটি টুইটারের দেওয়া এমন খবর চাউর হতে লাগেনি খুব বেশি সময়। গত ২৪ ঘন্টায় সবচাইতে আলোচিত শিরোনামে অবধারিতভাবেই থাকবে এই খবরটি। তারপওর কিছুটা আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিশ্বজোড়া মেসিভক্তরা। হয়তো আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে অলৌকিকভাবে হয়তো এই বিচ্ছেদ-ঝড়টা থেমে যাবে। কিন্তু হলোনা। বাংলাদেশ সময়ে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের শেষে এসে সবকিছু শেষ হওয়ার ঘোষণাটা একেবারে চূড়ান্তভাবে দিয়ে দিলেন হোয়ান লাপোর্তা!
প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন। মোট ২৭টি প্রশ্নের উত্তর দিলেন বার্সেলোনা সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুর দিকেও একবার নিশ্চিত করেছিলেন, মেসির সঙ্গে বার্সার আর তবু কারও যদি মিছে আশা থেকে থাকে মনে, সেটি দূর করতেই সংবাদ সম্মেলনকক্ষ ছেড়ে যাওয়ার আগে আরেকবার স্পষ্ট করে কথাগুলো বললেন লাপোর্তা। এতক্ষণ স্প্যানিশ ভাষায় সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, এবার স্পষ্ট ইংরেজিতে লাপোর্তা বলে দিলেন, ‘হোর্হের (লিওনেল মেসির বাবা ও মুখপাত্র হোর্হে মেসি) সঙ্গে আমার সব সময়ই কথা হয়েছে। লিওর সঙ্গে খুদেবার্তা আদান-প্রদান হয়েছে। আলোচনা শেষ। সব শেষ।’
ছোট্ট ঘোষণাটাই বুঝিয়ে দিল, নাটকে অবিশ্বাস্য কোনো মোচড়ের পর মেসি আর বার্সেলোনার আবার এক হওয়ার যদি কোনো সম্ভাবনা থেকে থাকে, গতকাল রাতে মেসি-বার্সার বিচ্ছেদ ঘোষণা করা বার্সার বিবৃতির পর থেকেই যে সম্ভাবনা নিয়ে কথা হচ্ছিল, সেটি আর হচ্ছে না। মেসির বার্সেলোনা অধ্যায়, কিংবা বার্সেলোনার মেসি অধ্যায়- যেভাবেই দেখুন, সে অধ্যায় শেষ। লাপোর্তাই তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন।
বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির আগের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে ৩০ জুন। গতকাল দুই পক্ষের চুক্তি নবায়নের কথা ছিল। কিন্তু গতকাল রাতে উল্টো বার্সা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিল, স্প্যানিশ লিগের বেঁধে দেওয়া বেতনের সীমার নিয়মের কারণে মেসিকে নিবন্ধন করাতে পারবে না বার্সা, সে কারণে দুই পক্ষের চুক্তি হচ্ছে না। এরপর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন লাপোর্তা। সেখানে শুরুতেই বার্সা সমর্থকদের মনের কোণের ছোট্ট আশাও শেষ করে দিলেন লাপোর্তা, ‘আরেকবার বলছি, কোনো মিথ্যে আশা তৈরি করতে চাই না। (মেসির সঙ্গে) চুক্তির আলোচনা শেষ হয়ে গেছে। এটা সত্যি ওর হাতে অন্য অনেক প্রস্তাব আছে, চুক্তির আলোচনার সময়ে সেসব আমরা শুনতে পেয়েছি। আমাদেরও চুক্তির আলোচনা শেষ করার জন্য একটা চূড়ান্ত দিনক্ষণ ছিল। লা লিগা শিগগিরই শুরু হচ্ছে। আর্থিক সঙ্গতির নীতিও (এফএফপি) একেবারে পরিষ্কার। একজন খেলোয়াড় এসবের মধ্যে ঝুলে থাকতে পারে না।’
চুক্তি না হওয়ায় বার্সার মতো মেসিও যে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন, সেটাও জানালেন বার্সা সভাপতি, ‘হোর্হের সঙ্গে কথা হচ্ছে অনেকদিন ধরে, লিও ইবিজায় থাকার সময়ে ওর সঙ্গে খুদেবার্তা আদান-প্রদান হয়েছে। গতকাল আমাদের চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। (সেটি না হওয়ায়) দুই পক্ষই ভীষণ হতাশ, অনেক পরিশ্রম করেছি আমরা এটা নিয়ে। কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের কিছু ব্যাপারের কারণে শেষ পর্যন্ত এটা সম্ভব হলো না।’
নিয়ন্ত্রণের বাইরের ব্যাপার বলতে মূলত দুটি। এক, জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর অধীন আগের বোর্ডের অধীনে বার্সেলোনার আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, জুনে লাপোর্তার বোর্ড ভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থা না নিলে বার্সার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও ছিল। আগের বোর্ডের অধীনে বার্সার বেতনের বিল ছিল তাদের আয়ের ১১০ ভাগ! ফলে দেনা বেড়েছে। অন্যদিকে, স্প্যানিশ লিগ কর্তৃপক্ষ বেতনের সীমা বেঁধে দিয়েছে, সেটির ব্যাপারে তারা কোনোভাবেই ছাড় দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
এর মধ্যে সেটিকে ফাঁকি দিতে মেসির সঙ্গে অভিনব চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল বার্সা। মেসি ৫০ শতাংশ বেতন কম নিয়ে দুই বছর খেলবেন, কিন্তু সেই অর্থটা পাঁচ বছরে বন্টনের ব্যবস্থা করে চুক্তিটা করবে বার্সা - এমনই ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু লা লিগা সেটিতেও রাজি হয়নি বলে জানালেন লাপোর্তা, ‘দুই বছরের বেতন পাঁচ বছরে দেওয়ার ব্যবস্থাটা যদি এফএফপির নিয়মের মধ্যে মেনে নিত লা লিগা, তাহলে চুক্তিটা হয়ে যেত। সবাই খুশি থাকত। কিন্তু সেটাও মানা হয়নি।’
আরেকভাবেও মেসির চুক্তি হতে পারত, কিন্তু সেটিতে লাপোর্তা রাজি নন। লা লিগার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ সংস্থা সিভিসির একটি চুক্তি হয়েছে দুদিন আগে, যেটি এখনো আনুষ্ঠানিক রূপ পায়নি। চুক্তি অনুযায়ী, লিগের স্বত্তে¡র ১০ শতাংশ ৫০ বছরের জন্য কিনে নেবে সিভিসি, সেটির বিনিময়ে লা লিগাকে ৩০ কোটি ইউরো দেবে তারা। কিন্তু বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ এ চুক্তির সঙ্গে একমত নয়। দুই ক্লাবই কাল বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ নিয়ে লিগের সভাপতি হাভিয়ের তেবাসের সঙ্গে রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ লেগেছে লাপোর্তার।
এদিন সংবাদ সম্মেলনেও লাপোর্তা বললেন, ‘লা লিগা বেতনের সীমা নিয়ে নমনীয় হতে রাজি নয়। তারা শুধু তখনই নমনীয় হতো যদি আমরা ক্লাবের সম্প্রচার সত্ত্ব আধা শতকের জন্য বন্ধক দিয়ে দিতে রাজি হতাম!’ লাপোর্তার চোখে সেটিকে ক্লাবের জন্য খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে, ‘বেতনের সীমায় একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা বের করা এবং লিওকে নিবন্ধন করাতে হলে এমন কিছু করতে হতো (সিভিসির চুক্তিতে সই করা), যেটা বার্সার জন্য মোটেও ভালো কিছু হতো না। আমরা ক্লাবের ভবিষ্যৎকে বন্ধক রাখতে চাইনি।’
তাতেই শেস হয়ে গেল মেসি আর বার্সার সম্পর্ক। শেষটা হলোও কীভাবে! বার্সেলোনারই একাডেমিতে কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা, বার্সেলোনাকেই জীবন মানা, বার্সেলোনাতেই সব জেতা, বার্সেলোনাকে সব জেতানো মেসির বার্সা থেকে বিদায় মাঠ থেকে হচ্ছে না। আক্ষেপ আছে লাপোর্তারও, ‘লিও মেসির মতো একজন খেলোয়াড় এরকম কোভিডের পরিস্থিতিতে বিদায় নিচ্ছে, যে সম্মানে বিদায় তার প্রাপ্য সেটি পাচ্ছে না, এটা ভীষণ দুঃখের। দুই বছর পর হলে সবকিছু কত সুন্দর হতো! (মেসির বিদায়ের সময়ে) স্টেডিয়ামভর্তি সমর্থক থাকত তখন।’ তবে এখন না হলেও কোনো একদিন মেসিকে ভক্তদের ভালোবাসায় মাঠ থেকে বিদায় জানাতে চান লাপোর্তা, ‘লিওর যে সম্মান-ভালোবাসা প্রাপ্য, সে সম্মান-ভালোবাসা লিও পাবে। বর্তমান পরিস্থিতি আমরা বুঝি - স্বাস্থ্যগত, আর্থিক, মৌসুম এখনো শুরু হয়নি, সবকিছু তাই কঠিন। কিন্তু আশা করি কোনো একদিন লিও মেসি বার্সা থেকে সেরকম ভালোবাসায় বিদায় পাবে, যেটা ওর প্রাপ্য।’
এমন বিদায় যে মেসিরও কোনোভাবেই চাওয়া ছিল না, সেটিও বারেবারে জানিয়ে দিলেন লাপোর্তা, ‘ক্লাবে থাকার জন্য সবকিছু করতে মেসির ইচ্ছাটা পরিষ্কার ছিল। সেজন্য ওর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা ভেবেছিলাম পাঁচ বছরের চুক্তি, বিলম্বিত বেতন... এসব এফএফপির মধ্যে এঁটে যাবে। আমরা (লিগের কাছ থেকে) আরেকটু নমনীয় ভাব আশা করেছিলাম। অন্য কোনো দেশে সেটা ঠিকই হতো, কিন্তু এখানে হয়নি।’ বাস্তবতা মেনে নিয়ে তাই লাপোর্তা বলছেন, ‘লিও অপ্রাপ্য কিছু নেই। বার্সার জন্য ওর ভালোবাসা সব সময়ই পরিষ্কার, বার্সা ও এই শহরে থাকতে ওর ইচ্ছা নিয়েও সংশয় নেই। আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছি, আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা ক্লাবের ভালোর জন্যই।’
বার্সায় মেসির যত কীর্তি
মৌসুম ম্যাচ গোল অ্যাসিস্ট
১৭টি ৭৯২ ৬৮২ ২৩৭
দলীয় শিরোপা
লা লিগা
২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯
কোপা দেল রে : ২০০৮-০৯, ২০১১-১২, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০২০-২১
সুপার কোপা : ২০০৬, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৩, ২০১৬, ২০১৮
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : ২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯, ২০১০-১১, ২০১৪-১৫
সুপার কাপ : ২০০৯, ২০১১, ২০১৫
ক্লাব বিশ্বকাপ : ২০০৯, ২০১১, ২০১৫
ব্যক্তিগত অর্জন
ফিফা ব্যালন ডি’অর : ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯
ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু : ২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯
ফিফা বিশ্বসেরা ফুটবলার : ২০০৯
ফিফা দ্য বেস্ট : ২০১৯
উয়েফা প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার : ২০১১, ২০১৫
উয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ফুটবলার : ২০০৯
উয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ফরোয়ার্ড : ২০০৯, ২০১৯
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বর্ষসেরা একাদশ : ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১
লা লিগা সেরা ফুটবলার : ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫
লা লিগা সেরা ফরোয়ার্ড : ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬
ডি স্টেফানো ট্রফি : ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১৪০১৫, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯
পিচিচি ট্রফি : ২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ গোল্ডে বল : ২০০৯, ২০১১
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ সিলভার বল : ২০১৫
বিশ্বসেরা প্লেমেকার : ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯
যুগের সেরা প্লেমেকার : ২০১১-২০২০
সর্বকালের সেরা প্লেমেকার : ২০০৬-২০২০
বিশ্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা : ২০১১, ২০১২
বিশ্বেসেরা সর্বোচ্চ গোলদাতা : ২০১২, ২০১৬
যুগের সেরা প্লেয়ার অব দ্য ম্যান : ২০১১-২০২০
উয়েফা বর্ষসেরা একাদশ : ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০
চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স : ২০১১
ওয়ার্ল্ড সকার সর্বকালের সেরা একাদশ : ২০১১
স্বপ্নের ব্যালন ডি’অর একাদশ : ২০২০
লরিয়াস বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ : ২০২০
শান্তি ও ক্রীড়ার চ্যাম্পিয়ন : ২০২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।