Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরায় কেয়ারটেকার হত্যার রহস্য উন্মোচন

হত্যার পর ভেস্তে যায় ডাকাতির পরিকল্পনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর উত্তরায় কেয়ারটেকার সুবল চন্দ্র পালকে হত্যার দুই দিন পর আসামিদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ হত্যাকাÐের রহস্যও উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, হত্যার পর ভেস্তে যায় ডাকাতির পরিকল্পনা। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. সাইফুল ইসলাম তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। এর আগে গত সোমবার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলো- মো. মাসুদ রানা ও মো. মিজানুর রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে কেয়ারটেকার সুবল চন্দ্র পালের পরিহিত জামার পুড়িয়ে দেয়া অংশ বিশেষ ও রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তাদের স্বীকারোক্তি মতে ঘটনাস্থল থেকে একপিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও হত্যাকাÐে ব্যবহৃত কাঁচিটি উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম বলেন, গত রোববার উত্তরা পশ্চিম থানার ৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর বাড়ির কেয়ারটেকার সুবল চন্দ্র পাল খুন হন। এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা ছায়া তদন্ত শুরু করে। কিন্তু পুলিশ ঘটনার দুই দিনের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে হত্যাকাÐের মূল হোতাসহ রহস্য উদঘাটন করেছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মাসুদ ওই বাসায় গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেড় মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে সিরাজগঞ্জ চলে যান। সেখানে তিনি একটি লুঙ্গি কারখানায় মাইক্রোবাসের চালক হিসেবে কাজ নেন। মাসুদ ইতিপূর্বে প্রায়ই সুবলের রুমে ইয়াবা সেবন করতেন এবং নারী নিয়ে আসতেন। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল, গভীর রাতে দারোয়ানকে হাত-পা বেঁধে জিম্মি করে রাখবে। বাড়ির মালিক ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার সময় তারা বাসায় ঢুকে বাড়ির সদস্যদের জিম্মি করে লুট করবে। সেই মোতাবেক গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ সুবলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আগের পরিচয়ের সূত্র ধরে মাসুদ সুবলকে জানান, তিনি ও তার এক চাচাতো ভাই ঢাকায় এসে রাতে তার কক্ষে থাকবেন। সেই মোতাবেক গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা কেয়ারটেকার সুবলের রুমে আসেন এবং সেখানে ইয়াবা সেবন করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক রাত সাড়ে তিনটার সময় সুবলের হাত-পা বাঁধার চেষ্টা করলে তিনি জেগে উঠেন। রুমে থাকা একটি ধারালো কেঁচি সুবলের গলায় ধরে তাকে চুপ থাকতে বলেন। গ্রেফতারকৃত মিজান সুবলের গলায় নাইলনের রশি পেঁচিয়ে ধরলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মাসুদ রানা কেয়ারটেকারের গলায় ধারালো কেঁচিটি ঢুকিয়ে দেয়। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে মিজান ও মাসুদ সুবলের গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

তিনি আরো বলেন, সুবলের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মাসুদ ও মিজান শক্ত করে সুবলের হাত পা বাঁধেন। রুমের বাইরের পানির টেপে শরীরে থাকা রক্তের ছাপ ধুয়ে ফেলেন। পরে জামা-কাপড়ে রক্তের ছাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে তারা মালিকের বাসায় লুট করার চিন্তা বাদ দিয়ে ওই জায়গা ত্যাগ করেন। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন যানবাহনে করে নিজ গ্রাম সিরাজগঞ্জে চলে যান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মাসুদ রানা জানান, তিনি পেশায় গাড়ি চালক। আগে তিনি উত্তরা-৩ নম্বর সেক্টরের ওই বাড়ির মালিকের গাড়ি চালাতেন। এদিকে আসামি মিজানুর স্থানীয়ভাবে মাঝেমধ্যে অটো রিকশা চালাতেন। তবে তিনি পেশাগত ডাকাত দলের সদস্য। এর আগে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবরে ডাকতির প্রস্তুতিকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা পুলিশ তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছিল। প্রসঙ্গত, গত ১১ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে সুবল চন্দ্র পাল (৪৪) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। নিহত ব্যক্তির গলায় ক্ষত চিহ্ন এবং নাইলনের দড়ি দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত ব্যক্তি ওই বাসার দারোয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাÐের ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ