২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
খাদ্যই প্রাণ শক্তির আধার। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সবল থাকার জন্য সুষম খাদ্য আমাদের খুবই প্রয়োজন। জীবানুঘটিত রোগ নিরাময়ের জন্য যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর জন্য বিষ তুল্য বলেই এগুলো জীবানুকে ধ্বংস করে আমাদের রোগ নিরাময় করে। কিন্তু এই বিষক্রিয়া রোগ জীবানুর আশ্রয়দানকারী কলাকেও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ করে। তাই ঔষধকে একটি প্রয়োজনীয় বিষ বলা হয়। কিন্তু উপযুক্ত পরিমিত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা যায় এবং বিভিন্ন রোগ জীবানুর আক্রমনের হাত থেকে দেহকে সুস্থ্য রাখা যায়। খাবার গুলো শরীরের কার্যক্রম সমন্বয় করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আসলে রোগের প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলাই উত্তম। তাই দেহে যাতে রোগ না হয় সেজন্য ঠিকমত উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। সকল পেশার লোকই খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে সচেতন ও সাধারণ জ্ঞান থাকা উচিত। যা মনে চায় তাই বা স্বাদ পেলেই খেয়ে ফেলা ভালো না। সুতরাং খাবার গ্রহণে সতর্ক ও সচেতন হোন।
করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে প্রাণ হারাচ্ছে সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। দিন দিন করোনা ভাইরাস জটিল থেকে জটিলতর হয়ে আগ্রাসন চালাচ্ছে। সচেতন হয়ে উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। এর চেয়ে আর ভালো কোন উপায় নেই। মনে রাখবেন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে কোন রোগ লক্ষণ ছাড়াই রোগ নীরবে সেরে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, যেকোন ভারাইস হলো প্রোটিনযুক্ত অনুজীব। করোনায় আক্রান্ত হলে যে কারণগুলো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে তার বেশীরভাগ লক্ষণই জ্বর, কাশি, শ্বাস নালীর সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। ভাইরাস মারাত্মক ও প্রাণঘাতি হয়ে উঠছে খুব সহজে। ভাইরাস যখন কাউকে আক্রান্ত করে তখন নিজে নিজেই শরীরে কিছুটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। আর এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন মিনারেল, এনজাইম যা শরীরের ক্ষতিকর জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের কোষ গুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। শরীরে জীবানুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। আমাদের দেহের জন্য উল্লেখযোগ্য অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলো হলো: বিটা কেরোটিন, ভিটাসিন এ, সি, ই, লাইকোপে, লুটেইন, সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে খাবারগুলো গ্রহণ করলে ভাল হবে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
ভিটামিন এ ঃ ভিটামিন এ দেহের কোষ কলাগুলোকে সজীব রাখে। রক্তের কণিকাগুলোকে শক্তিশালী করে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ভিটামিন এ’র জন্য যে খাবারগুলো গ্রহণ করতে হবে তা হলো: সবুজ শাক সবজি, মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ডিম, পাকা আম, কলিজা, দুগ্ধজাত খাবার, লাল মরিচ, পাকা পেঁপে, কাঠাল, কলা ইত্যাদি।
ভিটামিন সি ঃ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বড় হাতিয়ার হলো ভিটামিন সি। এ উপাদানটি শরীরে জমা থাকে না তাই প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয়। যেমন: লেবু, কলা, আমলকী, জাম্বুরা, কাঁচা মরিচ, করলা, পেয়ারা, কাচা আম, বিলেম্বু, টমেটো, লাল শাক, বাধাকপি, আনারস ইত্যাদি।
ভিটামিন ই ঃ এ ভিটামিনটি আরেকটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধে বলিষ্ট ভূমিকা রাখে। এ উপাদানটি প্রচুর পাওয়া যায় ভোজ্য তেল, ডিমের কুসুম, বাদাম, কাঁচা ছোলা, পালং শাক, লেটুস শাক, মটরশুটি, সবুজ শাক সবজি, কাঠ বাদাম, বিচি জাতীয় খাবার, জলপাই তেল ইত্যাদি। তবে মনে রাখবেন ফ্রিজে বেশিক্ষণ এ খাবারগুলো রাখলে কিংবা খুব বেশি তাপ দিলে ভিটামিন কিছু নষ্ট হতে পারে।
মসলা ঃ দৈনন্দিন জীবনে আমাদের খাবারে যেসব মসলা ব্যবহার করি তা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী। যেমন : আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।
শাক-সবজি ঃ যেকোন রঙিন শাক সবজি ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মূল উৎস। শাক-সবজি, বাদাম, ফল শরীরের অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা সংক্রমন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজি রাখুন।
চা ঃ গ্রীণ টি, লাল চায়ে এলথেনিন, ইজিসিজি নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের শরীরকে সুস্থ্য ও সবল রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
টক দই ঃ দই হলো প্রোবায়োটিকসের আধার যা বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্রকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
তাছাড়া উচ্চমানের আমিষ জাতীয় খাবার যেমন: ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, শুটকি বেশি করে খেতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্টের ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্না করার সময় খুব বেশি তাপে বা দীর্ঘসময় রান্না না করে প্রয়োজনীয় তাপে রান্না করতে হবে। তাছাড়া প্রয়োজন মতো ঘুমাতে হবে। বেশি রাত জাগা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সঠিক সময়ে ঘুমান ভোরের আগে ঘুম থেকে উঠুন। অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে দেয় ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
যেসব খাবার বর্জন করতে হবে ঃ বিড়ি, সিগারেট, মদ, হুক্কা, জর্দ্দা, তামাক, সাদা পাতা, খয়ের, সব ধরণের কার্বোনেটেড পানীয় ইত্যাদি। এসব খাবারগুলো মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ঠান্ডা খাবার আইসক্রিম, চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। কারণ এগুলো ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়তা করে। পরিশেষে বলা যায় খাবার গ্রহণে সচেতন হোন সুস্থ সবল হয়ে বেচে থাকুন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। করোনার হাত থেকে নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে সহযোগিতা করুন।
মো: জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।