Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রফতানি ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মে-তে আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে রফতানি আয় যেখানে ছিল ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার, এবার সেখানে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। অন্য এক খবরে জানা গেছে, সদ্যসমাপ্ত অর্থ বছরের ১১ মাসে পোশাক রফতানি থেকে এসেছে দু’ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলার, যা দেশের মুদ্রায় প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশের বাণিজ্য যেখানে কমেছে, অর্থনীতি বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাকের রফতানি বৃদ্ধি নিঃসন্দেহ আশাব্যঞ্জক ও স্বস্তিকর। দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। পোশাক রফতানি বাড়া বা বাড়ার সম্ভবনা দেখা দেয়া দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা ইতিবাচক, তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। দু’টি প্রধান স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর একটি হলো, পোশাক রফতানি, অন্যটি হলো জনশক্তি রফতানি। বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এই দুর্দিনে এ দু’টি খাতের আয় বাড়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে। দেশের ও দেশের মানুষের জন্য এর চেয়ে সুখবর আর কিছু হতে পারে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে এবং তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকাও করা হচ্ছে, তখন আমাদের তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির নতুন সম্ভবনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিছু অনুকূল অবস্থা এর কারণ। প্রথমত, আমাদের অন্যতম প্রতিদ্ব›দ্বী মিয়ানমারে চলছে উত্তাল সামরিক পরিস্থিতি। দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী ভারতে চলছে করোনার মারাত্মক প্রকোপ। ঠিক এই মুহূর্তে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। পোশাকের বাজারও চাঙ্গা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা মিয়ানমার ও ভারত থেকে তাদের রফতানি অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তর করছে। বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের বিশেষ আগ্রহের অন্যতম কারণ হলো, নিরাপদ ও উন্নত পরিবেশে পোশাক উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় বিশ্বমানের উন্নয়ন। এ সংক্রান্ত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

বলা যায়, অতি সঙ্গতকারণেই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়াল্ট ডিজনী বাংলাদেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ছেড়ে যায় এবং ৫০ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ সরিয়ে নেয়। চীন থেকে তৈরি পোশাক রফতানি করার ক্ষেত্রে এক ধরনের অনীহা রয়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যদিকে অন্যতম রড় রফতানি কারক ভারতে করোনা অতিমারি ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহ করেছে। আশংকা করা হচ্ছে, সেখানে তৃতীয় ঢেউ আসন্ন। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের ওপর নির্ভর করার সুযোগ খুব কম। ফলে বাংলাদেশ ক্রেতাদের কাছে প্রথম পছন্দ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একজন গার্মেন্টমালিক পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতা তার কাছ থেকে যেমন, তেমনি মিয়ানমার ও ভারত থেকেও পণ্য কেনেন। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে তিনগুণ বেশি রফতানি আদেশ পাচ্ছেন তিনি। অন্য একজন গার্মেন্টমালিকও একই কথা বলেছেন। দুর্ঘট রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মিয়ানমার এবং ভারত করোনা অতিমারির কবলে পড়ায় ক্রেতারা ওই দু’ দেশ থেকে সময়মত পণ্য পাবেন, এ নিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছে না। এই কারণ বাংলাদেশের জন্য যে সুযোগ তৈরি করেছে তা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ অবশ্যই লাভবান হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল বিনিয়োগযোগ্য অর্থ বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তাদের পছন্দের দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। এই বিনিয়োগ আনতে পারলে অর্থনীতি নিশ্চিতই গতিময় ও বিকশিত হবে। এসব সুযোগ হাত ছাড়া করা মোটেই উচিৎ হবে না। আর প্রাপ্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে উৎপাদন যেমন সচল রাখতে হবে, তেমনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি সাধন করতে হবে।

ভারতে যখন তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা করা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের ঝুঁকিমুক্ত থাকার কথা ভাবা যায় না। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। অত্যন্ত সংক্রমণশীল ও ভয়াবহ এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দেশে লকডাউন চলছে। ঢিলেঢালা এই লকডাউনে কাজ না হওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। এরপরও দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ মুহূর্তে করোনার টেস্ট প্রয়োজন সর্বাধিক। অথচ এর জন্য আরটি-পিসিআর মেশিনের অতিস্বল্পতা রয়েছে। মোট ১২৮টির মধ্যে ঢাকা বাদে সাত বিভাগের জন্য আছে মাত্র ৩৯টি। ওইসব বিভাগে টেস্ট ব্যহত হচ্ছে। ব্যাপক টেস্ট এবং সংক্রমিতদের আইসোলেশনে রাখা করোনার বিস্তার রোধের অন্যতম উপায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাসপাতালে রয়েছে বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন ও ক্যানোলার অভাব। এর ফলে সম্ভাব্য চিকিৎসা থেকে আক্রান্তরা বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেকে মৃত্যু বরণ করছে। এই নাজুক পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসার বন্দোবস্ত ও হাসপাতাল ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে টিকা দান কর্মসূচিকে সহজ ও দ্রুতায়িত করতে হবে। আশার কথা এই, ক’দিন আগে পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্তির যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা কেটে গেছে। ইতোমধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা আসবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জানিয়েছেন। এ মাসেই গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। বলা হয়ে থাকে, কোনো দেশের জনগণের শতকরা ৮০ জনের টিকাদান নিশ্চিত করা গেলে সে দেশ নিরাপদ। স্বাস্থ্যবিধির কঠোর অনুসরণ, চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও টিকাদানের কথিত হার নিশ্চিত হলে নিরাপদ অবস্থা তৈরি হবে। সেটা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে উৎপাদনসহ সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। তখন তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের ক্রেতা যেমন আসবে, তেমনি বৈদেশিক বিনিয়োগও আসবে। বিমানসহ সকল যোগাযোগ অবারিত হবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা বেগবান হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন