Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চ শিক্ষিতদের ডিগ্রির যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে

অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

পিএইচডি বা ডক্টরেট ডিগ্রী একজন গবেষকের জীবনে অনেক বেশি সম্মান বা গৌরবের বিষয়। সেইসাথে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন একজন গবেষকের গবেষণার হাতেখড়ি বললেও ভুল হয় না। কেননা, নিজেকে গবেষক হিসেবে গড়ে তোলা বা নিজের হাতে গবেষণা পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্য বেশ সহজ। অন্যসব ডিগ্রী অর্জনের থেকে পিএইচডি ডিগ্রীর বেশ কিছু পার্থক্য আছে। যেমন পিএইচডি ডিগ্রী মূলত দেওয়া হয় গবেষণার উপর ভিত্তি করে, কোন কোর্সওয়ার্ককে কেন্দ্র করে না। কোথাও কোথাও ডিগ্রী শুরুর দিকে সামান্য কিছু কোর্সওয়ার্ক থাকলেও অল্প কিছুদিনের ভিতর সেটা শেষ করে গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হয়। পিএইচডি পর্যায়ে প্রতিটি গবেষকের মূল লক্ষ্য থাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোনো বিশ্লেষণ দেয়া। তারপর নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে ধাপে ধাপে সমস্যাটির সমাধান করে এবং বিভিন্ন কনফারেন্স কিংবা খ্যাতিমান জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা। তবেই তিনি একজন দক্ষ গবেষক হিসেবে গড়ে ওঠেন। স্নাতক বা স্নাতোকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তাত্তি¡ক বিষয়ে ভালো করার পাশাপাশি সামান্য ল্যাবওয়ার্ক করলেই চলে। কিন্তু পিএইচডি ডিগ্রীর ক্ষেত্রে পুরোটাই গবেষণার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। সেজন্য পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের পুরো সময়জুড়ে সবাইকে বেশ চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কারণ, সুপার ভাইজারগণ সারাক্ষণ পিএইচডি স্কলারদের থেকে একেবারে ইউনিক এবং আপডেটেড কিছু বের করার জন্য তদারকি করতে থাকেন।

স্থান ভেদে পিএইচডি সম্পন্ন করতে তিন থেকে ছয় বছর সময় লাগে। আমেরিকাতে একটু বেশি সময় লাগে। কারণ, আমেরিকার প্রায় সবজায়গায় শুরুতে দুই বছরের কোর্সওয়ার্ক থাকে। অনেক জায়গায় আবার মাস্টার্স করে তবেই পিএইচডি শুরু করা লাগে, সেক্ষেত্রে কোর্সওয়ার্ক লাগে না। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনে তিন থেকে চার বছরে শেষ করা যায়। তবে অনেকেই যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার গবেষণার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারে, সেক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মথ্যে তার ডিগ্রী অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সুপারভাইজার তখন তার অধঃস্থন পিএইচডি স্কলারকে নির্ধারিত সময়ের বাইরে আরও ছয়মাস বা একবছর সময় বাড়াতে বলেন। পিএইচডি স্কলার সুপারভাইজারের কথামত সময় বাড়িয়ে তবেই কাক্সিক্ষত ফলাফলের ভিত্তিতে ডিগ্রী পেয়ে থাকে। আবার কারো ভাগ্য খারাপ হলে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ডিগ্রী অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বলা যায়, পিএইচডি ডিগ্রী বহু কষ্টে অর্জিত একটি সম্মানসূচক ডিগ্রী।

পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের প্রতিটি স্টেজ এক একটি শিক্ষণীয় অধ্যায়। ডিগ্রী অর্জনে যদি গড়ে চার বছর ধরা হয় তাহলে বলা যায়, ওই চার বছরের প্রতিটি দিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষণীয় সময়। যেখানে নানান মানসিক চাপের মধ্যে তিল তিল করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। একজন পিএইচডি ডিগ্রী ধারীই কেবল জানেন, এই সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনে তিনি কতটা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। অনেককেই বলতে শুনেছি, পিএইচডি সুপারভাইজার হচ্ছে ‘সেকেন্ড গড’। কথা পুরোপুরি সত্য। বেশীরভাগের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। পিএইচডি স্কলারদের চিন্তাশক্তি, গবেষণা পরিচালনা করার দক্ষতা, নিজেকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য একজন সুপারভাইজার সর্বদা চেষ্টা করেন তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা বের করার। তাই গবেষণা করতে গিয়ে পিএইচডি স্কলারদের ‘যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটা না হয়ে কেন এমনটা হল? তেমনটা হলে কি করতে হত বা এখন কি করতে হবে?’ এসকল নানান প্রশ্নের উত্তর যুক্তিসহ বের করতে হয়। সেই যুক্তির পেছনে সাপোর্ট দেওয়ার যথেষ্ট ডকুমেন্ট থাকতে হয়। তাই পিএইচডি স্কলাররা সর্বদা এ চিন্তা নিয়ে থাকে যে, নিজের উদ্ভাবনী অবশ্যই বিশ্বের গবেষণা সেক্টরে নতুন করে ছুঁড়ে দেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ হতে হবে। যে চ্যালেঞ্জে একজন খ্যাতিমান গবেষককেও যেন নিজের যুক্তি দ্বারা হার মানানো যায়। তবেই তার গবেষণা হবে সত্যিকারের সর্বজন স্বীকৃত। উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে সবারই পরিস্কার ধারণা পাওয়ার কথা যে, একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী গবেষক, গবেষণা সেক্টরে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তবেই তিনি তার নামের পূর্বে ডক্টরেট কথাটা লেখার যোগ্যতা অর্জন করেন।
নিজেদের গবেষণায় পূর্ণতা আনার জন্য পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর পাশ্চত্যসহ পার্শ্ববর্তী দেশে দেশীয় ফেলোশিপ বা সেদেশের অর্থায়নে উচ্চশিক্ষা তথা পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় বহু ছাত্রছাত্রী। লক্ষ্য মূলত একটা, গবেষণা শিখে এসে দেশের গবেষণা সেক্টরে নিজের মেধা খাটানো। সেই চিন্তা মাথায় রেখে অনেকেই স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করে, আবার কেউ কেউ কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে পাড়ি জমায় অন্য দেশে। দেশে গবেষণা সেক্টরে তেমন কোন সুবিধা না থাকায় অনেকেই এই পথ বেছে নেয়। অনেক চড়াই উৎড়াই পার হয়ে অবশেষে দেখা মেলে ডক্টরেট ডিগ্রীর। সময় হয় দেশে ফেরার। কেউ ফেরে বাধ্য হয়ে, আবার কেউ কেউ স্ব-ইচ্ছায় সেসব দেশে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কেননা, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারীর মূল্যায়ন আমাদের দেশে করা হয় না।

কথাগুলো অপ্রিয় হলেও সত্য। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সা¤প্রতিক দুইটি উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। ১. আমার পরিচিত কাছের একজন দেশের নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারী হাইস্কুলে যোগ দিয়েছিল শিক্ষিকা হিসেবে। কিন্তু গবেষণার উপর অধিক আগ্রহ থাকায় স্নাতকোত্তর পড়াকালীন বাইরের দেশে আবেদন করেছিলেন পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়ার জন্য। নিজের একডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো থাকায় পিএইচডি করার জন্য সেদেশের স্কলারশিপও পেয়ে যায়। শিক্ষিকা হিসেবে কয়েক মাস চাকুরী করার পরেই বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়া বেশ গর্বের বিষয়। তাই নিজের গবেষণার ভিত্তি মজবুত করার লোভ সামলাতে পারেনি। চাকুরীর শিক্ষানবিশকাল শেষ না হওয়ায় সেখান থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সুবিধা সে পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পাড়ি জমায় বিদেশে। স¤প্রতি সে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েকটি বছর পার হয়ে গেছে। দেশের কিছু সরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও সে দেখেছে। কিন্তু সেখানে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্য কোন বাড়তি সুযোগ সুবিধা নেই এবং সেখানে উল্লেখ করা হয়নি উচ্চ ডিগ্রী ধারীদের কোন কথা। আবেদনকারীর সর্বোচ্চ বয়স সীমা রাখা হয়েছে ৩০ বছর। সবকিছুতে পার পেলেও বয়সসীমায় গিয়ে সে আটকে গেছে। কেননা, গেল মাসে তার বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকটা হতাশা নিয়েই সে দেশে চাকুরীর আশা ছেড়ে দিয়েছে।

২. আমার সহপাঠীদের মধ্যে একজন, দেশের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বাইরের দেশ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছে। পিএইচডি শেষ হওয়ার আগে থেকেই সে চেষ্টা করতে থাকে দেশের গবেষণা সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের। কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে পিএইচডি পরবর্তী পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবেও বেশ কিছু দেশে চাকুরী করেছে। অবশেষে ফিরেছে নিজ দেশে। কিন্তু বয়স এর মধ্যে ৩০ বছর পার হয়ে যাওয়ায় কোনরকম সরকারী চাকুরীতে যোগদানের সৌভাগ্য তার হয়নি। বাধ্য হয়ে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেয়। কিন্তু সেখানেও অবস্থা নাজুক। নেই পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরির সুবিধাসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সুবিধাদি। ফলশ্রæতিতে তার গবেষণার কোন আউটপুট সেখান থেকেও সে পাচ্ছেনা।

বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে, নামকরা জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে নিজেরা দেশে ফিরে হাত পা গুঁটিয়ে বসে থাকার চিত্র আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশ কমন একটা বিষয়। যেখানে ওই সব উচ্চ শিক্ষিত গবেষকদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রের হাত ধরে বহু গবেষক ইতোমধ্যে গবেষণা সেক্টরকে যথেষ্ট মজবুত করেছেন, সেখানে তারা একরকম মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়েই দিন পার করছে। অনেকটা আত্মসম্মানের কারণে তারা গবেষণা ব্যতীত অন্য কোন কাজে যোগ দিতে পারে না। উপরের দুইটি উদাহরণ দেয়া হলেও এরকম বহু উচ্চশিক্ষিত বেকার দেশে অভাব নেই। যারা বহু কষ্টে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজেদের গবেষণার ভিত্তিকে মজবুত করে, দেশে গিয়ে বসে আছে। তাদের মেধার কমতি নেই। উন্নত দেশগুলোতে তাদের মেধার বেশ কদর ছিল। তাই অনেকেই পিএইচডি অধ্যায়নকালীন সময়ে সেসব দেশের সেরা থেকে সেরা হওয়ার গৌরব ও অর্জন করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশ সেই কদর নেই। কদর নেই বলেই একজন উচ্চ শিক্ষিত পিএইচডি ডিগ্রীধারীকে মূল্যায়ন করার রীতি আমাদের দেশে তৈরি হয়নি।

যথাপোযুক্ত মূল্যায়ন না পাওয়ার জন্যে অনেকেই নিজ দেশে না ফিরে পাশ্চত্য দেশকে বেছে নিয়েছেন নিজেদের স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান হিসেবে। কারণ, বাইরের দেশগুলোতে একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি অর্থাৎ পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে তাদের দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে দেখা হয়। তাদের ডিগ্রীর মর্যাদা তারা জীবনের চলার সর্বক্ষেত্রে পেয়ে থাকে। সেজন্য অনেকে দেশের মায়া ত্যাগ করে সেখানেই থেকে যাচ্ছে। আবার অনেকেই মাটির টানে, আপনজনের টানে, দেশের কথা ভেবে দেশে ফিরে। কিন্তু দেশ তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সেই সাথে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের গবেষণা সেক্টর। কোথাও তাদের উচ্চশিক্ষার মূল্যায়ন তেমন করা হয়না। অথচ তারা যদি পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে না আসত, তাহলে দেশে তাদের চাকুরী মোটামুটি সুনিশ্চিত ছিল বলা যায়। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা এমন, যেটা তাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে যে, তাদের স্বপ্ন দেখা ভুল ছিল।

এসব বিষয় চিন্তা করে যারা দেশে ফেরে না তাদের সবার ভিতরেই দেশের গবেষণা সেক্টরের নাজুক অবস্থার পাশাপাশি সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ অখুশি দেখা যায়। তাই বাধ্য হয়ে নিজ দেশকে পর করে সেসব দেশে স্থায়ী বসবাসের চিন্তা করে। চিন্তা করে, সেখানে নিজের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ভালো করা যাবে। আর সেখান থেকে বাহবাও পাওয়া যায়। এসব বিষয় আগামী দিনে দেশের মেধাশূন্য হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা দেশের উন্নয়নে কখনো ভালো কিছু বয়ে আনবে না। হয়ত রাতারাতি আমরা এর ফল অনুধাবন করতে পারছি না। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটার খুব বড় একটা ইম্পপ্যাক্ট আমাদের দেশের উপর পড়বে, সেটা খুব সহজেই অনুমেয়।

আরেকটা উদাহরণ দিলেই সামান্য পরিস্কার হবে। বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। অল্প কিছুদিনের ভিতরেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দেশের উঠতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়। স্বল্পোন্নত দেশগুলো গবেষণা বিষয়ক বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। যেমন দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত পেটেন্টস্বত্ত¡ বিদেশীদের থেকে বিনা পয়সায় পায়। কিন্তু দেশ যখনই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করবে তখন সেগুলো ব্যবসায়ীদের কিনতে হবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা অখুশি হয়ে সরকারকে চাপ দিবে দেশে এসব পেটেন্ট বা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য। সরকারও বাধ্য হয়ে দেশের গবেষকদের এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে তাকিদ দেবেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা কি আদৌ সেটা করতে পারবে? পারতে হলে গবেষকদের সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা আগে থেকেই রাখতে হবে। উচ্চ শিক্ষিতদের গবেষণা সেক্টরে নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। গবেষণা সেক্টরকে মজবুত করার জন্য উচ্চশিক্ষিতরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এচিত্র উন্নত দেশগুলোতে সুস্পষ্ট। যেখানে একজন উচ্চ শিক্ষিত গবেষকের ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বহুগুণে। বাইরের দেশে একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী তার ডিগ্রী পাওয়ার পর পরপরই চাকুরীতে বেতনের নতুন স্কেলে প্রবেশ করে। পিএইচডি ডিগ্রী পাওয়া মানেই তার চাকুরীর পদোন্নতি। পিএইচডি ডিগ্রী পাওয়া মানেই তার সার্বিক সুবিধাদি বহুগুণে বেড়ে যাওয়া। আর আমাদের দেশে পিএইচডি নিতে গিয়ে বয়স ৩০ বছর পার হয়ে যাওয়া মানে তার ডিগ্রী মূল্যহীন হয়ে যাওয়া। তার ডিগ্রীর মাপা হয় তার বয়স দিয়ে। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও তাকে মূল্যায়ন করা হয় একজন আমজনতার কাতারে অবস্থিত সাধারণ মানুষের মত। কিন্তু বাস্তবতা হওয়া উচিৎ ছিল পুরোপুরি বিপরীত। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একজন ছাত্র ছাত্রীর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করতেই তার বয়স ২৪ থেকে ২৫ বছর ছুঁই ছুঁই করে। তারপর যদি তারা পিএইচডি ডিগ্রী নিতে চায় তাহলে নিঃসন্দেহে তাদের বয়স ৩০ বছর পার হবে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সেশন জট কমিয়ে বা পিএইচডি ডিগ্রী ধারীদের চাকুরীতে বয়সের অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের গবেষণা সেক্টরকে উন্নত করা যেতে পারে। নীতি নির্ধারকদের অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখা উচিৎ।

ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন ‘যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারেনা’। উক্তিটি যথাযথ। দেশে এখন জ্ঞানী-গুণির খুবই অভাব। উচিৎ কথা বলতেও অনেকে ভয় পায়। সবাই নিজের সুবিধা নিয়েই ব্যস্ত। যেটা কোনভাবে কাম্য নয়। আমরা স্বপ্ন দেখি, দেশের নীতিনির্ধারকরা যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। দেশের গবেষণা সেক্টর উন্নত দেশগুলোর মত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এগিয়ে যাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যোগ্যতাসম্পন্ন আমলার পাশাপাশি বিশ্বমানের অনেক গবেষক তৈরী করবে। একজন উচ্চ ডিগ্রীধারীকে গবেষণাবান্ধব পরিবেশ দেওয়া সেই দেশের নীতিনির্ধারকদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা সকলেই আশাবাদী, বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বিদ্যমান নিয়ম নীতি অচিরেই পরিবর্তন করা হবে।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পিএইচডি

২১ মে, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন